অ্যান্টনি জে. ব্লিনকেন, সেক্রেটারি অফ স্টেট
আগামীকাল, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগ দেবে। তথ্য ও জ্ঞান একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম জনগণকে তাদের নিজেদের সমর্থনে কথা বলতে, তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র অনলাইন এবং অফলাইনে এবং বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষার পক্ষে সমর্থন করে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের দেয়া সত্য ও সঠিক তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকা সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত গণতান্ত্রিক সমাজগুলোর ভিত্তি। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের আওতায় সকল ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে — “রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোন গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণাসমূহ সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাপন করার অধিকার।” কিন্তু আজ সাংবাদিকদের অধিকারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক
এটি একটি কারণ, আমরা জামাল খাশোগির নির্মম হত্যার প্রতিক্রিয়ায় আমাদের দিক থেকে “খাশোগি ব্যান” ঘোষণা করেছি, যাতে করে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক আচরণ প্রতিরোধে সহায়তা করা যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘২০২০ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস’ প্রতিবেদনে কাজের কারণে গণমাধ্যম কর্মীরা হয়রানি, আক্রমণ এবং এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন এমন কয়েক ডজন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে যে, ২০২০ সালে সংবাদ প্রকাশের কারণে হত্যার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, এবং মেক্সিকো ও আফগানিস্তানে সাংবাদিক হত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সিপিজে-এর মতে, সংগঠনের সাংবাদিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুরুর পরে সংবাদ প্রকাশের কারণে সর্বাধিক সংখ্যক সাংবাদিক কারাবন্দী হয়েছেন ২০২০ সালে; এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, তুরস্ক ও মিশর গত বছর সর্বাধিক সংখ্যক সাংবাদিককে কারাবন্দী করেছে। রাশিয়াতে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ‘রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি’-সহ স্বাধীন সংবাদ প্রকাশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ অব্যাহত রেখেছে।
দুভার্গ্যজনকভাবে, মহামারি স্বৈরাচারী সরকারসমূহকে স্বাধীন গণমাধ্যমের উপর চাপ বাড়ানোর অজুহাত তৈরি করেছে। এটা এমন একটা প্রতিকূল পরিবেশ যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করতে পারা, বিশেষত গণমাধ্যমের কর্মীদের জন্য, আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ তারা যাতে জনসাধারণকে অপব্যবহার ও দুর্নীতির তথ্য জানিয়ে সতর্ক করতে পারে এবং বিপজ্জনক ভুল তথ্য ও ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রদান প্রতিহত করতে পারে। আমরা গণমাধ্যমের নিরাপত্তা এবং সহিংসতা, হুমকি বা অন্যায় আটকের ভয় ছাড়াই সাংবাদিকদের তাদের কাজ করার অধিকার রক্ষা করার জন্য সকল সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
আমাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের জন্য অবারিত ইন্টারনেটের দরকার রয়েছে। আমরা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে ব্যাপকভাবে বাধা তৈরি করাসহ — যা কোথাও কোথাও ১৮ মাস পর্যন্ত গড়িয়েছে — ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ও বিষয়বস্তু সেন্সর করার মাধ্যমে জনগণকে তথ্য ও জ্ঞান পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারসমূহের বর্ধিত প্রচেষ্টায় উদ্বিগ্ন, কারণ এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলো সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করা অসম্ভব করে তোলে। সরকারগুলোর অবশ্যই উচিত্ নয় এই ধরনের সেবাগুলো বন্ধ করে দেয়া, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, কণ্ঠরোধ করা, সেন্সর করা কিংবা ফিল্টার বা শোধন করা, কারণ এই ধরনের পদক্ষেপগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠিত হওয়া ও মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করে ও অন্যায়ভাবে বাধাগ্রস্ত করে, যা অত্যাবশ্যকীয় সেবায় প্রবেশাধিকার ব্যাহত করে এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায়।
যুক্তরাষ্ট্র অনলাইনে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের চর্চা রোধ করতে এবং স্বতন্ত্র সাংবাদিকদের জনসাধারণকে সেবা দেয়ার সামর্থ্য সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্যে অন্যান্য কৌশলগুলোর মধ্যে সরকার-আরোপিত আংশিক কিংবা সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট বন্ধ করার কৌশল ব্যবহারের নিন্দা জানায়। আমরা সরকারসমূহকে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল অপরাধের তদন্ত করার ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্র তথ্যে প্রবেশাধিকারে সহায়তা করতে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যে সাহসী সাংবাদিকরা তাদের অধিকার চর্চা করতে গিয়ে ভয়-ভীতি, হেনস্থা, গ্রেফতার ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের নিরাপত্তায় গণমাধ্যম, বেসরকারি খাত, এনজিও ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।