ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর মি. ব্রাউন বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে যক্ষ্মা বিষয়ক একটি নতুন উদ্যোগ “অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকোলোসিস ইন বাংলাদেশ” (বাংলাদেশে যক্ষ্মা মোকাবেলায় জোট) উদ্বোধন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারেরও বেশি স্বাস্থ্য সহায়তা এবং গত মার্চ মাস থেকে কোভিড–১৯ মোকাবেলায় প্রায় ৩৮ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার সহায়তা দিয়েছে।
ঢাকা, অক্টোবর ৬, ২০২০ — ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর মিশন ডিরেক্টর ডেরিক এস. ব্রাউন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের পরিপূরক ইউএসএআইডি-র অর্থায়নে পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করতে গত ৪ থেকে ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। এই সময়ে তিনি সেখানে বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ইউএসএআইডি-র যক্ষ্মা বিষয়ক ফ্ল্যাগশিপ কার্যক্রম “অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিউবারকোলোসিস ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশে যক্ষ্মা মোকাবেলায় জোট-এসিটিবি)” আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
এ সময়ে মিশন ডিরেক্টর মি. ব্রাউন এক বক্তৃতায় বলেন যে, “নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক, নার্স, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে দেখা করতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। ইউএসএআইডি স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যসেবাদানের সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবাদান কার্যক্রম উন্নয়নে সহায়তা করছে বলে আমি গর্ববোধ করি।”
সফরকালে, মি. ব্রাউন সরকারি কর্মকর্তা, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারী এবং অনুষ্ঠানে আগত অংশগ্রহণকারীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনকালে কোভিড-১৯ মহামারি কার্যকরভাবে মোকাবেলায় ইউএসএআইডি-র আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং কেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ২০ জন চিকিৎসক ও নার্সের সাথে মত বিনিময় করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশ জুড়ে কর্মরত ২০ হাজার চিকিৎসক ও নার্সকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, যাঁরা ইউএসএআইডি-র অর্থায়ন ও সহায়তায় পরিচালিত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
সিলেট সদরে, মি. ব্রাউন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর (ডাঃ) মো. শামিউল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র (টিবি এসটিসি) পরিদর্শন করেছেন। এই কেন্দ্র থেকে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও যক্ষ্মা সংক্রান্ত সেবা কার্যক্রম দেয়া অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সারা দেশে যক্ষ্মা রোগের ঘটনা জানতে পারার সংখ্যা কমেছে। ইউএসএআইডি-র এসিটিবি কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে সন্দেহভাজন যক্ষ্মা রোগীদের পরীক্ষার জন্য টিবি এসটিসি-তে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মি. ব্রাউন সিলেটের আঞ্চলিক যক্ষ্মা রেফারেন্স ল্যাবরেটরি (আরটিআরএল) পরিদর্শন করেছেন। এটি বাংলাদেশে যক্ষ্মা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তৈরি করা জৈবনিরাপত্তা স্তর-৩ (বায়োসেফটি লেভেল থ্রি) মানের প্রথম ও একমাত্র ল্যাবরেটরি। এটি তৈরির পরিকল্পনা, নির্মাণ, এবং স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে এবং ল্যাবরেটরিটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইউএসএআইডি-র মিশন ডিরেক্টর মি. ব্রাউন মৌলভীবাজারে ইউএসএআইডি-র এডভান্সিং ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ (এইউএইচসি) কর্মসূচির মাধ্যমে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক (এসএইচএন)-এর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সূর্যের হাসি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন। এ সময়ে তিনি চলমান মহামারির মধ্যে কীভাবে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহতভাবে দেয়া হচ্ছে সেই বিষয় সম্পর্কে জানেন ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সরেজমিনে দেখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সহায়তাকারী প্রথম দিককার দাতাসংস্থাগুলোর অন্যতম। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ৫৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের ল্যাবরেটরিগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার সামর্থ্য বাড়ানো হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবাদান কার্যক্রম উন্নত করা হয়েছে, সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, এবং এই রোগ সম্পর্কে তৈরি হওয়া মিথ বা লোককথা ও মিথ্যা ধারণা দূর করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। ২০১৯ সালে ইউএসএআইডি একাই বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে; যার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগের সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনগুলো উন্নত করা, পরিবেশের সুরক্ষা দেয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনে টেকসই স্থিতিশীলতা বাড়ায় এমন কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।