বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নবনির্মিত বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র সরকারের নিকট হস্তান্তর করেছে ইউএসএআইডি

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে চলমান নির্মাণ ও সংস্কার কাজের আওতাধীন ২৫টি নতুন দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র ও ৯৬টি বিদ্যমান ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের অন্যতম কক্সবাজারের এই নবনির্মিত দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রটি একই সাথে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র ও স্কুল হিসাবে পরিচালিত হবে।

ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১গতকাল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নবনির্মিত বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র উদ্বোধনে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর কান্ট্রি মিশন ডিরেক্টর ডেরিক ব্রাউন বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক জনাব মোঃআতিকুলহক, সেভ দি চিলড্রেন’র কান্ট্রি ডিরেক্টর অনোভ্যান ম্যানেন এবং অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগ দেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশপরী গ্রামে অবস্থিত সরকারী এই বহুমুখী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রটিতে যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে ৪০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে নবনির্মিত এই বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্রটি এদেশের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকারের সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত।

নবনির্মিত বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্রটি ইউএসএআইডি/বাংলাদেশ মাল্টি-পারপাস সাইক্লোন শেল্টার রিপেয়ার অ্যান্ড রিফার্বিশমেন্ট প্রোগ্রাম’র আওতায় পুনঃসজ্জিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। কক্সবাজার ও বান্দরবানের ৪৬টি স্কুলের মধ্যে ইতোমধ্যে ২৩টি স্কুলের সংস্কার কাজ করা হয়েছে (ইউএসএআইডি’র আশ্রয় কেন্দ্র প্রকল্প)। সংস্কার কাজের মধ্যে ছিলো স্কুলের পানি ,পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসংস্কার, রঙ করা এবং শিশু বান্ধব আসবাবপত্র স্থাপন। সংস্কারকৃত বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র/স্কুল সুবিধাদি শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং সেইসাথে জলবায়ু দুর্যোগে স্থানীয় জনসাধারণের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।

ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ব্রাউন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “মেরামতকৃত/পুনঃসজ্জিত বাইশপরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়/বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র(MPCS) হস্তান্তরে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি সহিষ্ণুতা বৃদ্ধিতে সহায়তা এবং উন্নত ও শিশু বান্ধব শিক্ষার পরিবেশ দেয়ার লক্ষ্যে এই স্কুল পুনঃসজ্জিতকরণে অর্থায়ন করতে পেরে গর্বিত। এর ফলে স্থানীয় শিশুরা জীবন-বদলের শিক্ষায় শিক্ষিত হবার বেশী সুযোগ পাবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে জনসাধারণ ও একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক জনাব মোঃ আতিকুল হক বলেন, “ত্রাণ কেন্দ্রিক পন্থা থেকে সরে এসে সার্বিক পন্থা অনুসরণের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেছে। আমি এটা দেখে আনন্দিত যে, ইউএসএআইডি’র সহায়তায় স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে কাজ করতে পারে।”

তাছাড়া কেয়ার, সেভ দি চিলড্রেন ও স্থানীয় সহযোগী সংস্থা, গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন কর্তৃক বাস্তবায়িত আরেকটি যৌথ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার ও বান্দরবানে ২৫টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র (MPDS) নির্মাণে সহায়তা প্রদান করছে ইউএসএআইডি।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব মোকাবেলায় বহু সহযোগী সংস্থার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র মিশন বর্তমানে সারা দেশে বহু মুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণা বেক্ষণ এবং সেই সাথে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ঢেউ থেকে সুরক্ষার জন্য দেয়াল নির্মাণ ও  বাঁধের মাটি ভরাট কাজে অর্থায়ন করছে। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা গুলোতে ৫০০টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেছে যার মাধ্যমে ৯,০০,০০০ মানুষ আবহাওয়া দুর্যোগে তাদের জীবনের সুরক্ষা পাচ্ছে। এই আশ্রয় কেন্দ্র গুলো বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কালে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নতকরণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চা উৎসাহিতকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৯ সালে ইউএসএআইডি এককভাবে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ প্রদান করেছে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯’র প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্থানীয় পর্যায়ে সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নে ৭৩.২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে।