তাঁর ৫-৯ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভারত ও বাংলাদেশ সফরকালে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি ভারত ও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-র নেয়া বেশ কয়েকটি নতুন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছিলেন যা ক্লিন অ্যানার্জির সম্প্রসারণ, জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং ক্লিন অ্যানার্জি শিল্পোদ্যোগ বাড়ানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
ভারতে, ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (ডিএফসি) যৌথভাবে ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন ঋণ পোর্টফোলিও গ্যারান্টি স্পন্সর করছে যার মাধ্যমে ছাদে সৌরশক্তির প্যানেল স্থাপনের ক্ষেত্রে ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে, ইউএসএআইডি-র অংশীদারগণ এই গ্যারান্টির আওতায় ইতোমধ্যে গ্রামগুলোতে ৫০টি সৌর-শক্তি চালিত ক্ষুদ্র-কোল্ড-চেইন স্থাপন এবং পল্লী এলাকার ৩৫০টি ব্যাংক শাখায় সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুত্ পৌঁছে দেয়াসহ ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প প্রস্তুত করেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগে ইউএসএআইডি ও ডিএফসি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনকারেজ ক্যাপিটাল এবং দু’টি ভারতীয় অ-ব্যাংকিং আর্থিক কোম্পানি — সিকারস ফিনান্স এবং নারী-মালিকাধীন ইলেকট্রোনিকা ফিনান্স লিমিটেড-এর সাথে অংশীদারিত্ব করছে।
প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত কেরি আরো জানিয়েছেন যে, ইউএসএআইডি ভারত সরকারের উদ্যোগে গঠিত কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই)-র কাজে সহায়তা করতে ৯.২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে। এই উদ্যোগ তহবিল প্রাপ্যতা সাপেক্ষে দুর্যোগ ও জলবায়ুর অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো তৈরির কর্মকান্ড এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। ইউএসএআইডি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ও জলবায়ুর অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্ভাবন, নীতি প্রস্তাবনা এবং সেরা চর্চাগুলোর উন্নয়ন ও অন্যদের জানানোর জন্য সিডিআরআই-কে সহায়তা করবে যাতে করে বিশ্বের দেশগুলো তাদের অবকাঠামো পরিকল্পনায় সেরা চর্চাগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারে এবং দুর্যোগ ও জলবায়ুর অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে উঠতে পারে।
প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি গান্ধী-কিং ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন। এই ফাউন্ডেশন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ব্যক্তিত্ব মার্কিন কংগ্রেসের রিপ্রেজেন্টেটিভ জন লুইস লিখিত যুগান্তকারী গান্ধী-কিং স্কলারলি অ্যাক্সচেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ অ্যাক্ট ২০২০ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এই ফাউন্ডেশনটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো যেমন জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন করার মতো বিষয়গুলোকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় বেসরকারিখাতসহ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি অদ্বিতীয় অংশীদারিত্ব। নতুন এই প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার জন্য ইউএসএআইডি আগামী দিনগুলোতে ভারত সরকার ও সহযোগীদের সাথে একত্রিতভাবে কাজ করা অব্যাহত রাখবে।
সত্তর বছরেরও বেশি সময়ব্যাপী উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইউএসএআইডি ও ভারত সরকার একত্রিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেছে; তারা ক্লিন অ্যানার্জি, জলবায়ু অভিযোজন, টেকসই ভূমি, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের অংশগ্রহণ ঘটাতে পেরেছে। ইউএসএআইডি ক্লিন অ্যানার্জি কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতে ৫০ লাখ মানুষের কাছে উন্নত ক্লিন অ্যানার্জি পৌঁছে দিতে সহায়তা করছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলারের সংস্থান করেছে এবং ভারতের ২২টি রাজ্যের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তি স্থাপনে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশে, ইউএসএআইডি তহবিল প্রাপ্যতা-সাপেক্ষে শিগগিরই জ্বালানি শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিতে “বাংলাদেশ এডভান্সিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ থ্রু অ্যানার্জি” (ব্যাজ-BADGE) নামে ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বহু-বছরভিত্তিক প্রকল্প চালু করবে। বহু-বছরভিত্তিক এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণের কাছে সাশ্রয়ী ক্লিন অ্যানার্জির সম্প্রসারণ, ক্লিন অ্যানার্জির শিল্পোদ্যোগকে সহায়তা করা, স্বচ্ছ ও উন্নত জ্বালানী বাজার গড়ে তোলা এবং এ খাতের উদ্ভাবনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করবে। দেশের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ, যা বিগত দুই দশকে প্রায় চারগুণ বেড়েছে। এই প্রকল্প শুধু যে কার্বণ নিঃসরণ কমাবে তা নয়, একইসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে সহায়তা করবে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে দেশের জ্বালানী খাতের রূপান্তরে সহায়তা করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায়ও সহায়তা করছে, যার মধ্যে ২৫ লাখ একরের বেশি জলাভূমি এবং বনভূমিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেখানে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভে থাকা বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল বাঘের আবাসও রয়েছে। এছাড়াও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বাধা এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি চিহ্নিত ও হ্রাস করা; সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নেওয়া; এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারোপযোগী বায়ু চালিত জ্বালানী শক্তির প্রকল্পগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারক ও বেসরকারি খাতকে সহায়তা করার মাধ্যমে ইউএসএআইডি ক্লিন অ্যানার্জি উদ্ভাবনে চ্যাম্পিয়ান/অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করছে।
ভারত ও বাংলাদেশে ইউএসএআইডি-র নেওয়া উদ্যোগগুলো সম্পর্কে আরো তথ্য পেতে অনুগ্রহপূর্বক দেখুন: India | US Agency for International Development এবং Bangladesh | US Agency for International Development.