যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অর্থায়নে ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা পুনর্গঠন ও সংরক্ষণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মুঘল আমলের লালবাগ কেল্লার হাম্মাম খানা পুনর্গঠনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকা, ২৪ মার্চ ২০২১ – আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, এমপি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পুরনো ঢাকার লালবাগ কেল্লার সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রামাণ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন (AFCP) কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থায়িত এক বছরব্যাপী এই প্রকল্পের আওতায় ১৭ শতকে মুঘল আমলে নির্মিত লালবাগ কেল্লার আওতাভুক্ত প্রধান তিনটি স্থাপনার অন্যতম হাম্মাম খানা পুনর্গঠনে সহায়তা দেয়া হবে ২০২২ সালে কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর হাম্মাম খানার দু’টি তলাই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। রাষ্ট্রদূত মিলার ও প্রতিমন্ত্রী খালিদ একটি আলোকচিত্র ধারণকারী ড্রোন চালনার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং স্থানটি ঘুরে দেখেন।

“মুঘল আমলের ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার হাম্মাম খানার পুনর্গঠন, সংস্কার ও ত্রিমাত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রামাণ্য সংরক্ষণ” প্রকল্প পরিচালিত হবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নেতৃত্বে। এর স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলো পুনরুদ্ধারে ঐতিহাসিকভাবে নির্ভরযোগ্য উপকরণ এবং এর নিরাপত্তা ও কাঠামোগত স্থায়িত্ব বাড়াতে অত্যাধুনিক রেট্রোফিটিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঐতিহ্যের প্রভাব মূল্যায়নে প্রথাগত ও আধুনিক ড্রোন-ভিত্তিক ত্রিমাত্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রামাণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “লালবাগ কেল্লা কমপ্লেক্সের হাম্মাম খানার পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাংলাদেশের মানুষের অপূরণীয় জন্মগত সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশী জনগণের সাথে আমেরিকার অংশীদারিত্বের আরও একটি সাক্ষ্য। বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধের মধ্যে প্রোথিত আমাদের বন্ধুত্বকে আরো জোরদার করার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর নেই। বাংলাদেশের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়তে সহযোগিতা করার জন্য এরচেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। এবং যে ত্যাগ ও একনিষ্ঠতা নিয়ে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের উভয় দেশের জনগণ লড়াই করেছে তার উত্তরাধিকার গড়ে তোলার জন্য এরচেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। বাংলাদেশের কখনোই আমেরিকার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও স্থায়ী অংশীদার ছিলো না। এবং আমেরিকা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করছে।

অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন বা AFCP হিসেবে পরিচিত কার্যক্রমটি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১১টি AFCP প্রকল্পে ৫৭৬,০০০ ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে শাঁখারি বাজারে ১৭ শতকের ভবন পুনর্গঠন, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহগুলোকে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য আরো সুবিধাজনক করে তোলা, বাউল গান ও সাংস্কৃতিক আঙ্গিকগুলোর প্রামাণ্য তৈরি ও সংরক্ষণ এবং জামদানি বুনন পদ্ধতি ও ২,০০০ বছরের প্রাচীন ধাতু ঢালাই কৌশল পুনরুদ্ধার করা।

অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন (AFCP): ঐতিহাসিক ভবন, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, নৃতাত্ত্বিক বস্তুসামগ্রী, অঙ্কনচিত্র, পাণ্ডুলিপি, আদিবাসী ভাষা ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আঙ্গিক সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ২০০১ সালে অ্যাম্বাসেডরস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশন তহবিল গঠন করে। AFCP’র প্রকল্পগুলো দুর্যোগ বা সংঘাত পরবর্তী পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া সৃষ্টির জন্যও সহায়তা দিয়ে থাকে। AFCP সাধারণত দেশীয় সহযোগী বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে নিযুক্ত করে এবং ঐতিহ্যবাহী উপকরণ ও পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহিত করে। AFCP কার্যক্রমের মাধ্যমে আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়। ২০০১ সালে তহবিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ১৩০টি দেশের ১,০০০টি AFCP সংরক্ষণ প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে।

###