যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার কর্তৃক প্রকাশিত আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম বিষয়ক প্রতিবেদনে চীনের শ্রম নির্যাতনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শ্রম বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রেরণ করছে

আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক সংস্থা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

অবিলম্বে প্রচারের উদ্দেশ্যে

 ওয়াশিংটন, ডিসি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তর  আজ চীনে উৎপাদিত ১৭টি পণ্যের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা জোরপূর্বক শ্রম বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে। এ তালিকায় ২০২০ সালে নতুন পাঁচটি পণ্য যুক্ত হয়েছে – যার মধ্যে রয়েছে দস্তানা (গ্লাভস), কেশসজ্জা পণ্য, টেক্সটাইল, সুতা ও টমেটোজাত পণ্য। এর সবগুলোই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতিগত ও মুসলমান সংখ্যালঘুদের ওপর চাপানো জোরপূর্বক শ্রমের সাথে সম্পর্কিত।

জোরপূর্বক শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের এই তালিকা প্রকাশের বিষয়টি চীনের জিনজিয়াংয়ের উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জোরপূর্বক শ্রম নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এ অঞ্চলে ১০ লক্ষেরও বেশি উইঘুর ও অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। চীনে কমপক্ষে ১০০,০০০ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য লক্ষ লক্ষ উইঘুর ও অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকের পর থেকে জোরপূর্বক শ্রম পরিবেশে কাজ করছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সেক্রেটারি অফ লেবার ইউজিন স্কালিয়া বলেন, “জোরপূর্বক শ্রম ও নির্যাতনমূলক শিশুশ্রম অমানবিক যা বহু জীবন ও পরিবারকে ধ্বংস করছে। আজকের এই তালিকার মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন কর্তৃক এসব শোষণমূলক চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মত উদ্বেগজনক ভূমিকা ফুটে উঠেছে।”

এই তালিকাটি দুটি প্রধান প্রতিবেদন ও দুটি স্মার্টফোন অ্যাপের আপডেট প্রকাশের অংশ, যা বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম হ্রাসের পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সেগুলো মোকাবেলার কার্যকর কৌশলের প্রতি আলোকপাত করেছে।

২০০৫ সালের ‘পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা পুনঃঅনুমোদন আইন’ দ্বারা স্বীকৃত শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্যতালিকার নবম সংস্করণে নতুন দুটি দেশ (ভেনিজুয়েলাও জিম্বাবুয়ে), একটি নতুন ক্ষেত্র (তাইওয়ান) এবং ছয়টি নতুন পণ্য (দস্তানা, রাবারের দস্তানা, কেশসজ্জা পণ্য, পোম ও স্টোন ফল, বেলেপাথর ও টমেটোজাত পণ্য) যোগ করা হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট মনে করছে- এই পণ্যগুলো শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি- যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করে। এই সংস্করণে নামিবিয়ার গবাদি পশু-কে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে জোরপূর্বক বা শিশুশ্রমে শর্তবদ্ধ ভাবে বাধ্য করে উৎপাদিত পণ্যের তালিকায় আরেকটি পণ্য (কম্বোডিয়ার ইট) সংযোজনের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি ফেডারেল রেজিস্টার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমের ফলাফল-এর ১৯তম বার্ষিক সংস্করণে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমের অবস্থা বিষয়ে সবচেয়ে ব্যাপক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। এতে শিশুশ্রম মোকাবেলায় ১৩১টি রাষ্ট্র ও ভূখণ্ডের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং এ ধরনের প্রচেষ্টার অগ্রগতি যাচাইয়ে কঠোর মানদণ্ড প্রয়োগ করা হয়েছে। এ বছর আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা, নামিবিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরু – এই আটটি রাষ্ট্র “উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি” সাধন করেছে মর্মে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন পেয়েছে। প্রতিবেদনের ব্যাপ্তিকালে এই দেশগুলো সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে অর্থবহ প্রচেষ্টা নিয়েছে। ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আইন ও বিধিমালা, আইনপ্রয়োগ, সমন্বয়, নীতিমালা ও সামাজিক কার্যক্রম- যার মধ্যে ২০১৮ সালে সুপারিশকৃত পদক্ষেপগুলোও থাকতে পারে।

এ বছরের প্রতিবেদনে ২,০০০-এরও বেশি কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর ৬০ ভাগের বেশি পদক্ষেপই আইন শক্তিশালী করা বা এ ধরনের আইনের প্রয়োগ উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার সাথে সম্পর্কিত- অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান ব্যাপক ঘাটতিগুলোই উঠে এসেছে।

নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমের ফলাফল বিষয়ক এ বছরের প্রতিবেদনের অনন্য সাধারণ অর্জন হলো- দেশগুলোর তালিকায় প্রথমবারের মত মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্তি। মেক্সিকোর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের গভীরতর ও অধিক শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কই প্রকাশ পেয়েছে- বিশেষত এবছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা’র মধ্যে কার্যকর হওয়া নতুন চুক্তি বিবেচনায়। আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী সংস্থা হিসেবে এ বিভাগের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরো এই চুক্তির শর্তাবলী প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা গেছে যে, সারা বিশ্বে এখনো ১৫২ মিলিয়নেরও বেশি শিশু শ্রমিক রয়েছে অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে একজন শিশু শ্রমিক। এর বাইরে ২৫ মিলিয়ন জোরপূর্বক নিয়োজিত শিশুশ্রমিক রয়েছে। শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম ঘটছে এমন শিল্পগুলোকে সুনির্দিষ্ট করার মাধ্যমে এই প্রতিবেদনগুলো সরকারগুলোকে যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য, দাতাগোষ্ঠীকে সর্বোচ্চ চাহিদার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিধিবদ্ধ যাচাই-বাছাই ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারপূর্বক সম্পদ বরাদ্দে সহায়তার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

সারা বিশ্বের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে নিজেদের ভূমিকা পালনে সহায়তার লক্ষ্যে এই বিভাগ কমপ্লাই চেইন স্মার্টফোন অ্যাপ-এর একটি উন্নত সংস্করণ প্রকাশ করছে। সেরা চর্চাগুলোর হালনাগাদ দৃষ্টান্তগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এটি ফরাসি ও স্প্যানিশ উভয় ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। সহজে ব্যবহার্য এই অ্যাপটি আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড দুই মাধ্যম থেকেই ডাউনলোড করা যাবে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে শক্তিশালী সামাজিক পরিপালন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ও উন্নীত করার পন্থা বিষয়ে পরিষ্কার ও বিস্তারিত ধারণা পাবে। এটি সরবরাহকারীসহ তাদের পণ্য উৎপাদনে শ্রম নির্যাতন সনাক্তকরণ, সংশোধন ও প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

এই বিভাগ থেকে সোয়েট এন্ড টয়েল অ্যাপের একটি হালনাগাদকৃত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে শিশুশ্রম বা জোরপূর্বক শ্রম দ্বারা উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। শিশুশ্রম মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টার সর্বশেষ ফলাফলও আছে এতে। এর ফলে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পৃষ্ঠার এই তথ্যকে বহনযোগ্য, অনুসন্ধানযোগ্য ও সহজলভ্য করা সম্ভব হয়েছে।

আরো তথ্যের জন্য দেখুন: www.dol.gov/EndChildLabor। প্রতিবেদনের মুদ্রিত সংস্করণগুলো পাওয়া যাবে শিশুশ্রম, জোরপূর্বক শ্রম ও মানবপাচার বিষয়ক দপ্তর, আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরো, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম বিভাগ, ২০০ কন্সটিটিউশন এভিনিউ, কক্ষ নং এস-৫৩১৫, ওয়াশিংটন, ডিসি ২০২১০ ঠিকানায়। অনুসন্ধানের জন্য ২০২-৬৯৩-৪৮৪৩ নম্বরে টেলিফোন, ২০২-৬৯৩-৪৮৩০ নম্বরে ফ্যাক্স অথবা GlobalKids@dol.gov ঠিকানায় ইমেইল করুন।

টুইটার আলোচনায় যোগ দিতে এই হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করুন: #EndChildLabor #EndForcedLabor #EndHumanTrafficking এবং @USDOL-কে ট্যাগ করুন।

এই বিভাগের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরোর লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, শ্রমমান জোরদার এবং আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম, জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার প্রতিরোধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের কর্মীদের জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্য ও সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এসব বিষয়ে এই বিভাগের কাজ সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন: http://www.dol.gov/agencies/ilab.

ডিপার্টমেন্ট অফ লেবার’র লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবী, চাকুরীপ্রার্থী ও অবসরপ্রাপ্ত মানুষের কল্যাণ জোরদার, উৎসাহিত ও উন্নীত করা। সেইসাথে কর্ম পরিবেশ উন্নয়ন, লাভজনক কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং কর্ম সংক্রান্ত সুবিধা ও অধিকার নিশ্চিত করা।