যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা দূত হিসেবে তিন স্বনামধন্য বিটবক্সারের বাংলাদেশ সফর

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা দূত হিসেবে তিন স্বনামধন্য বিটবক্সারের বাংলাদেশ সফর

 

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা বিষয়ক দূত হিসেবে তিনজন বিটবক্সার ১৬-২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করলেন। জাতীয় বিটবক্স চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেরা পরিবেশন করার পাশাপাশি বিচারকের দায়িত্বপালন এবং যোগাযোগ প্রশিক্ষণের কাজও করলেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা বিষয়ক প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে ২০১৯ সালের জাতীয় বিটবক্স চ্যাম্পিয়নশিপের বিচারকের দায়িত্ব পালন করলেন। বাংলাদেশি বিটবক্সার বিট ফিজ (খন্দকার শামস) এতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনজন দূত এখানে একটি মাস্টারক্লাস ভোকাল পারকাসন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। সপ্তাহব্যাপী চলা সফরে তারা বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে কাজ করেন।

 

ঢাকা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯– ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা বিষয়ক দূত হিসেবে সম্প্রতি তিনজন বিশ্বখ্যাত বিটবক্সার শিল্পীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। ১৬-২৩ ডিসেম্বর কমিউনিটি আউটরিচ, মাস্টারক্লাস ও মিডিয়ায় উপস্থিতির মাধ্যমে স্থানীয় দর্শকশ্রোতাদের সামনে ভোকাল পারকাসন বিষয়টি তুলে ধরতে এর আয়োজন করা হয়।

ঢাকায় আসা তিন অতিথি শিল্পী ছিলেন নিউ ইয়র্কের বিটবক্স হাউসের জিন শিনোজাকি, নাপম (নীল মিডোজ) ও বাংলাদেশি-আমেরিকান অমিত ভৌমিক। তারা ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে গত ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজিত ব্যাটলবক্সবিডি ২০১৯: জাতীয় বিটবক্স চ্যাম্পিয়নশিপ-এ শিল্পী হিসেবে উপস্থাপনা এবং বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। চারঘন্টার এ প্রতিযোগিতায় হাজারো বিটবক্স ভক্ত যোগ দেয়। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন বিট ফিজ (খন্দকার শামস)। ২০২০ সালে একটি আন্তর্জাতিক বিটবক্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।

ব্যাটলবক্সবিডি ২০১৯: জাতীয় বিটবক্স চ্যাম্পিয়নশিপ-এ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে লড়েন ১৬ জন বাংলাদেশি বিটবক্সার। রাফতে নিক্স (রাফিউন নবি নাহিন) হন ভাইস চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা দূত ও বিটবক্সার জিন শিনোজাকি বলেন, বাংলাদেশি বিটবক্সাররা বিশ্বের সেরা শিল্পীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশে বিটবক্সিংয়ের ভবিষ্যত নিয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত মিলার ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আয়োজনটির সফল সমাপ্তিতে ২১ ডিসেম্বর বিটবক্স বাংলাদেশ আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রাষ্ট্রদূত  মিলার এসময় বলেন,“ বাংলাদেশের বিটবক্স এবং হিপ-হপ কমিউনিটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সম্পর্ক ২০১৪ সাল থেকে। …সঙ্গীত এবং শিল্পকলার, মানুষকে কাছে টানার এবং ব্যবধান ভেঙে দেওয়ার এক অনন্য ক্ষমতা আছে।”

বাংলাদেশে থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের তিন শিল্পকলা দূত কয়েকজন বাংলাদেশি শিল্পীর সঙ্গে মিলে কাজ করেন। ১৯ ডিসেম্বর তারা এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিসেস অ্যান্ড দ্য আর্টসে (ইএমকে সেন্টার) ৭০ জন স্থানীয় হিপ হপ ও বিটবক্স উৎসাহীর জন্য মাস্টারক্লাস প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দেন।

বিটবক্সিংয়ের আরেক নাম ভোকাল পারকাশন। এটি এমন এক ধরনের সঙ্গীত যাতে মুখ, জিহ্বা ও কণ্ঠস্বরের সাহায্যে ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, ড্রাম ও অন্যান্য যন্ত্রের শব্দ অনুকরণ করা হয়। বিটবক্সিংয়ের সূচনা হয় নিউ ইয়র্ক সিটিতে। ১৯৮০ এর দশকে এটি হিপহপ সঙ্গীতের একটি ভিত্তি হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠে। এই সাঙ্গীতিক ঘরানাটি এখনো ঘনিষ্ঠভাবে হিপহপ সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া এটি কাপেলা সঙ্গীতের একটি মৌলিক অনুষঙ্গ।

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকলা দূত কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং অভিন্ন মূল্যবোধ ও আশা-আকাঙ্খাকে তুলে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পাঙ্গনের সেরা দিকগুলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে মেলে ধরা। এ কর্মসূচির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পজগতের পেশাজীবীরা (যাদের মধ্যে আছেন পারফর্মিং আর্ট শিল্পী, ভিজুয়াল আর্টিস্ট, কবি, নাট্যকার, মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক, কিউরেটরসহ অন্যরা) কর্মশালা পরিচালনা, পারফর্ম্যান্স উপস্থাপন ও তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে বিদেশ সফর করেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পজগতের মানুষদের বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয় যারা কিনা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগের সুযোগ পান না।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা, সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়ে থাকে তিন শিল্প বিষয়ক দূতের এই সফর সেগুলোর অন্যতম।