ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ০৪ নভেম্বর ২০২০, বুধবারে নৌবাহিনী ডিপার্টমেন্টের এই বিবৃতিটি প্রচার করছে।
অবিলম্বে প্রকাশ করার জন্য
নভেম্বর ৪
লে. লরেন চাটমাস, ইউ.এস. নেভি, ডেস্ট্রোয়ার স্কোয়াড্রন সেভেন পাবলিক অ্যাফেয়ার্স
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল — যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নৌবাহিনী ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কোঅপারেশন অ্যাফ্লোট রেডিনেস অ্যান্ড ট্রেনিং সংক্ষেপে ক্যারেট ২০২০ কর্মসূচি যৌথভাবে পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি সমুদ্রের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়িয়েছে।
ক্যারেট বাংলাদেশ ২০২০ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাজমান উদ্বেগগুলো মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সাথে অব্যাহতভাবে কাজ করার এবং স্বাধীন ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করল।
“আমাদের বন্ধু এবং অংশীদারদের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করা শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে জোরদার করার ক্ষেত্রে শক্তি জোগাবে,” উল্লেখ করে এক্সপিডিশনারি স্ট্রাইক গ্রুপ (ইএসজি)-এর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ফ্রেড কাচার বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাথে কাজ করা ও তাদের কাছ থেকে শেখা অব্যাহত রাখব এবং সকলের জন্য একটি স্বাধীন ও অবাধ সমুদ্রের জন্য আমাদের যে অঙ্গীকার তা পূরণে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।”
ঐতিহাসিকভাবে, ক্যারেট মহড়াকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পেশাগত মত বিনিময় ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের-সাথে-জনগণের যোগাযোগ, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান-বিনিময়ের জন্য সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট অ্যাক্সচেঞ্জ (এসএমইই), কমিউনিটির সাথে যোগাযোগের জন্য কমিউনিটি রিলেশনস প্রজেক্ট ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বছর কোভিড-১৯ ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে মহড়ার অনুষ্ঠানগুলো ভার্চুয়ালি পালন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবংএসএমইই রিয়েল-টাইম ভার্চুয়াল মিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীগণ দুই দেশের সেরা চর্চাগুলো এবং এ সংক্রান্ত আলোচনা অনলাইনের লাইভ ফোরামে তুলে ধরবেন। কোভিড পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধতা সত্বেও অনলাইন প্রযুক্তি এই অঞ্চলের অংশীদারদের নিরাপদে যৌথ মহড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মাহবুব-উল ইসলাম বলেছেন, সমুদ্রকে নিরাপদ করার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব জরুরি।
“যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক অটল ও সময়ের দ্বারা পরীক্ষিত,” উল্লেখ করে মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, “এই স্তরের (কোভিড-১৯) অসুবিধা থাকা সত্বেও ক্যারেট মহড়া যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-বাহিনীর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বন্ধুত্ব ও পেশাদার
ভার্চুয়াল এসএমইই অনুষ্ঠানগুলো অনেক ধরনের যৌথ প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করবে। যার মধ্যে থাকবে আরএএস বা সমুদ্রে রসদ ফুরিয়ে গেলে পুনঃসরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিএমএ বা সমুদ্র সংক্রান্ত সচেতনতা, সমুদ্রের আইনী বিধিমালা, এবং মানববিহীন যান (ইউএভি), হেলিকপ্টার, সমুদ্রে টহল ও উদ্ধারের জন্য এমপিআরএ ফিক্সড উইং এয়ারক্রাফট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অনুশীলন।
এই বছর প্রথমবারের মতো ইউনাইটেড নেশনস ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিস (ইউএনওডিসি) এবং বালি প্রসেস রিজিওনাল সাপোর্ট অফিস ক্যারেট ২০২০ বাংলাদেশ আয়োজনে সহায়তা করছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের ও বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধি এবং নীতিমালাগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত করবে যাতে করে উভয় দেশ সামুদ্রিক নিরাপত্তার জটিল দিক ও সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে পারে। তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং আইনী বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে সমুদ্রের নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলো আরো কার্যকরভাবে মোকাবেলার সামর্থ্য জোরদার করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। ইউএনওডিসি আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব পাচার ও অভিবাসীদের পাচার-সহ সামুদ্রিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞান ও সহায়তা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, বালি প্রসেস রিজিওনাল সাপোর্ট অফিস সমুদ্র পথে অভিবাসীদের রক্ষা প্রচেষ্টাকে সহায়তা করে এবং মানব পাচারের মতো অপরাধ রোধে সহযোগিতামূলক বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে।
সমুদ্রের মহড়াটি বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত হবে। এতে উভয় দেশের নৌবাহিনীর জাহাজ এবং উভয় অংশীদারের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেবেন। কৌশলগত নৌচালনার মাধ্যমে পরিচালিত এই মহড়ায় দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও তথ্য বিনিময় জোরদার করবে। মহড়ায় অংশ নেওয়া জাহাজগুলো গোলা নিক্ষেপ অনুশীলনসহ সমুদ্রের নিরাপত্তায় প্রয়োজন হয় এমন সকল ধরনের মহড়া দেবে যার মধ্যে কৌশলগত ব্যবস্থাগ্রহণ চর্চা, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, রসদ সরবরাহে আরএএস পদ্ধতির ব্যবহারও থাকবে।
ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডেস্ট্রোয়ার স্কোয়াড্রন (ডেসরন) এর কমোডোর ক্যাপ্টেন অ্যান ম্যাককান বলেন, “আমরা ভার্চুয়াল উপায়ে এবং সমুদ্রে মহড়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যেকার সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ভিত্তি জোরদার করে চলেছি।” তিনি আরো বলেন, “যদিও আমরা এই বছর সশরীরে দেখাসাক্ষাত করতে পারছি না, কিন্তু আমাদের যোগাযোগ এবং বন্ধন (সবসময়) শক্তিশালী, এবং আমরা আশা করি সমুদ্রে ও অনলাইনে সামুদ্রিক পেশাদারিত্বমূলক অনুশীলনগুলো একত্রিতভাবে করতে পারব।”
ক্যারেট ২০২০ এর দ্বিতীয় মহড়াটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে, এ বছরের প্রথম মহড়া ক্যারেট ব্রুনাই গত ৫-৯ অক্টোবর দক্ষিণ চীন সাগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ ও সমস্যাগুলো যৌথভাবে মোকাবেলা করা এবং আঞ্চলিক নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য আয়োজিত ক্যারেট মহড়া এ বছর ২৬তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে।
ক্যারেট বাংলাদেশে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের মধ্যে রয়েছে কমান্ডার টাস্ক ফোর্স (সিটিএফ) ৭২, সিটিএফ ৭৩, সিটিএফ ৭৬, ডেসর ৭ এর স্টাফগণ। মহড়ায় অংশ নেওয়া ভাসমান ইউনিটগুলোর মধ্যে অন্যান্য জাহাজের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক দ্রুতগতির জাহাজ ইউএসএনএস মিলিনোকেট (টি-ইপিএফ ৩) রয়েছে।
প্রায় অর্ধ শতকের কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পথচলা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে একত্রে কাজ করে চলেছে। ক্যারেট বাংলাদেশ ২০২০ এই অংশীদারিত্বমূলক অঙ্গীকারের কথাই পুনর্ব্যক্ত করছে।
ইএসজি ৭/ সিটিএফ ৭৬ এবং ডেসরন ৭ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্যারেট আয়োজনের লক্ষ্যে অগ্রিম পরিকল্পনা তৈরি, প্রয়োজনীয় সম্পদের সমাবেশসহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দরকার এমন যাবতীয় কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছে।