প্রেস বিজ্ঞপ্তি
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করেছে ঘোষণা করার পর এবারই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করলেন।
ঢাকা, মার্চ ২৯, ২০২২ — কক্সবাজারে প্রথম সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সেখানে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী ও তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর জন্য ১৫২ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার বা প্রায় ১,৩২২ কোটি টাকার নতুন মানবিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
“এর মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১.৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা) প্রদান করেছি,” উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “নতুন দেয়া তহবিলের মধ্যে ১২৫ মিলিয়ন ডলার (১,০৮৭ কোটি টাকা) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা শরনার্থী ও ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে।”
রাষ্ট্রদূত হাস গত ২৭-২৯ মার্চ কক্সবাজার সফরকালে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচিগুলো কীভাবে রোহিঙ্গা শরনার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা, শিবিরগুলোতে অগ্নি নির্বাপন প্রশিক্ষণ, পরিবেশের সুরক্ষা, জলবায়ুর দুর্যোগ মোকাবেলায় অভিঘাতসহনশীলতা তৈরি এবং নিরাপদ খাদ্য বিতরণে অব্যাহতভাবে সহায়তা করছে তা সরেজমিনে দেখেন।
রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “কক্সবাজারের শিবিরগুলো ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কর্মরত মানবিক সংস্থাগুলোর মধ্যে শক্তিশালী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি ।”
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ২১ মার্চ বার্মিজ সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের এটাই প্রথম কক্সবাজার সফর।
রাষ্ট্রদূত হাস কক্সবাজার সফরকালে শরনার্থীদের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন আরআরআরসি কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত এবং জেলা প্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশিদের সাথে সাক্ষাত করেন। রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নিয়মিত কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য প্রশংসা করেন, বিশেষ করে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার খুলে দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের একটি প্রজন্মের লেখাপড়া নিশ্চিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত হাস ইউএনএইচসিআর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন যা স্থানীয় পরিবেশের পুনরুজ্জীবন, জলপথের দূষণ প্রতিরোধ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ভূমিধস, বন্যা ও আগুন লাগা থেকে দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সহিষ্ণুতা তথা অভিঘাতসহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শরনার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করছে। এই কর্মসূচিতে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে যেমন পাহাড়ের পাড়গুলো স্থিতিশীল করতে গাছ লাগানো, পানির গুণাগুণ মান ব্যবস্থাপনা এবং জলাধার স্থাপন।
এছাড়াও রাষ্ট্রদূত হাস যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি কর্তৃক আগুন নিয়ন্ত্রণের নতুন উদ্ভাবিত ব্যাকপ্যাক ও পাম্পসমৃদ্ধ বহনযোগ্য মোবাইল অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবকদের আগুন নিয়ন্ত্রণের মহড়া দেখেন। ইউএসএআইডি ৪৫০টি মোবাইল অগ্নি নির্বাপন ইউনিট এবং ২০ লিটার পানি ধারণক্ষমতার ৩,০০০ ব্যাকপ্যাক যন্ত্র রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর জন্য তৈরি ও সরবরাহ করেছে এবং আগামীতে ৩,০০০ শরনার্থী স্বেচ্ছাসেবীকে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে করে শিবিরগুলোতে আগুন প্রতিরোধে এবং অগ্নি নির্বাপনের কাজে সহায়তা করতে পারে। এই প্রকল্প ২০২৩ সালের মধ্যে সকল রোহিঙ্গা শিবিরে সম্প্রসারণ করা হবে।
তিনি এছাড়াও মাঠ পর্যায়ের একটি ল্যাব, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রবেশগম্য একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও একটি তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন যা জ্বালানী হিসেবে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করার পাশাপাশি স্থানীয় বনের উপর চাপ কমাচ্ছে এবং বনে কাঠ সংগ্রহকালে নারী ও মেয়েশিশুদের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধিদল ইউএসএআইডি ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে পরিচালিত জরুরি খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাসিক ই-ভাউচার প্রদান ও সেই ই-ভাউচার ব্যবহার করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানাধীন ২১টি দোকান বা আউটলেট থেকে ডিম, শাকসবজি ও ফলমূলসহ মৌলিক খাদ্যসামগ্রী কেনার বিষয়গুলো পরিদর্শন করেন।
শুধু ২০২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সঙ্কটে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির জন্য প্রায় ৩০২ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকা খরচ করেছে।
###