যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলা প্রচেষ্টা এবং কোভিড পরবর্তী উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য নতুন করে ১৭৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে
এই সহায়তা বাংলাদেশকে বিগত ২০ বছরে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি স্বাস্থ্য সহায়তার অতিরিক্ত এবং এই সহায়তার মধ্যে ঢাকায় বসবাসকারী দরিদ্র মানুষকে দেয়া খাদ্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা, জুন ১৫, ২০২০ — যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর মাধ্যমে নোভেল করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে নতুন করে ১৭৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে এমন এলাকায় ১ লাখ গরিব মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচি জোরদার করতে এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এই মহামারি মোকাবেলায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্য, মানবিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা কর্মকান্ডে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিওদের ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই তহবিল বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সুরক্ষা, এবং পরীক্ষাগার, রোগের সার্ভিল্যান্স ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেয়ার সামর্থ্য বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শুধু ইউএসএআইডি-র মাধ্যমেই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলা কর্মকাণ্ডে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
আজকের এই অনুষ্ঠানটি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশী চিকিত্সকদের শেষ ব্যাচের জন্য ইউএসএআইডি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথভাবে আয়োজিত “কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং রোগী ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে এমন উদ্যোগগুলোর একটি উদাহরণ। আন্তর্জাতিক এনজিও ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস ফর হেলথ (এমএসএইচ)-এর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া চিকিত্সক ও নার্সরা নিজেদের নিরাপত্তা বজায় রেখে করোনাভাইরাসে সংক্রামিত ব্যক্তিদের কার্যকরভাবে চিকিত্সা দেয়ার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া হ্রাসে সহায়তা করতে পারবেন। এই ব্যাচের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বমোট এক হাজার চিকিত্সকের প্রশিক্ষণ শেষ হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিত্সকগণ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল হাসপাতালে ফিরে গিয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৩০০০ নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের এই বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেবেন।
আজকের অনুষ্ঠানে ঘোষিত নতুন তহবিলের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা হিসেবে দেয়া ১৭ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সহায়তা করবে। এই অর্থ কল্যাণপুর ও সাততলা বস্তিতে থাকা নিম্ন আয়ের অভাবী ১ লাখ মানুষকে খাদ্যের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি উত্পাদনের সাথে বাজারের সংযোগ পুনঃস্থাপন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে ব্যবহার করা হবে।
নতুন এই সহায়তা তহবিলের মাধ্যমে কমিউনিটিতে রোগের বিস্তার পরিস্থিতির উপর নজরদারি করা, সম্মুখসারিতে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, এবং কোভিড-১৯ রোগ সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি এবং কাল্পনিক ও মিথ্যা ধারণা দূর করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও ইউএসএআইডি কোভিড-১৯ রোগের ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা এবং বাংলাদেশে ব্যবহার করা ও বিশ্বব্যাপী রপ্তানির জন্য মানসম্পন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ও অন্যান্য মেডিকেল উপকরণ তৈরির লক্ষ্যে নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড একদিকে মানুষের কর্মসংস্থান বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।
আজকের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পেরে গর্বিত। আমি অত্যন্ত খুশি যে, ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে নতুন এই তহবিল দিয়ে ঢাকায় বসবাসরত অভাবী ও ক্ষুধার্ত হাজার হাজার মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টায় আরো একটি উপায়ে অংশীদার হলাম।”
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সহযোগিতা ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচির পাশাপাশি গত ৩ মে তারিখে ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর ডেরিক ব্রাউন বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ১৫৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি সংশোধিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এই কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ কোভিড-১৯ এর প্রভাবসহ উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়তা করবে এবং দু’দেশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আজকের অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর ডেরিক ব্রাউন বলেছেন, “আমি গর্বিত যে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের উন্নয়নে দীর্ঘদিনের সঙ্গী এবং ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা করেছে। ২০১৯ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রসার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রসার, পরিবেশ রক্ষা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ইউএসএআইডি-এর সহায়তা ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে। যার মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন টিমের মাধ্যমে দেয়া প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য সহায়তা রয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণের সুরক্ষার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া সম্মুখসারির পুলিশ ও জরুরি সেবাদানকারীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।
=======================