ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল উপ সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
ঢাকা , ২২ অক্টোবর, ২০১৮
আমার ফলপ্রসূ সফর শেষের এ মুহূর্তে এখানে আসায় আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ অনেক দিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে রয়েছে জোরদার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক, সন্ত্রাসবাদ দমন ও শান্তিরক্ষায় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা, শক্তিশালী উন্নয়ন অংশীদারত্ব আর দুদেশের নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক যোগাযোগ।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সন্ধিস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভারত -প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মধ্যেও গুর’ত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে এটা স্পষ্ট ছিল যে একটি অবাধ, মুক্ত, বিধিসম্মত ও আন্তসংযুক্ত অঞ্চলের রূপকল্পের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কাছাকাছি।
এর প্রভাবশালী প্রবৃদ্ধি এবং বিকাশের উপর মনযোগ দিয়ে, দারিদ্র্য হ্রাসে অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী থেকে এক তৃতীয়াংশেরও নিচে কমিয়েছে। ২0২4 সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এর স্থায়ী অগ্রগতিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে এবং বঙ্গোপসাগরে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ.
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভারত -প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছি। ‘বৈদেশিক সামরিক সহায়তা’ হিসেবে দেওয়া এ অর্থে বাংলাদেশের উপকূলীয় রাডার ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, টহল নৌযান বহরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ এবং সম্প্রসারিত সামুদ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর সবগুলোই আমাদের ‘বঙ্গোপসাগর উদ্যোগ’ এর (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ) অংশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল আর তা দ্রুত বেড়ে চলছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক কাঠামোগুলো জোরদার করা গেলে তা এ দেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যকে এগিয়ে নেবে। আর এ কারণেই আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মৌলিক অধিকার (বিশেষ করে বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা) রক্ষা করা এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটে এমন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। এখানে অংশ নেওয়া বৈঠকগুলোতে আমি যুক্তরাষ্ট্রের এ বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।
আমার কক্সবাজারের অভিজ্ঞতার কথা বলি। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মাত্রা ও বিশালতা গভীরভাবে অনুভব করেছি আমি। এই মানবিক সংকট মোকাবেলায় অব্যাহতভাবে সহৃদয়তা দেখানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের জনগণকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
সংকটের একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নতুন শরণার্থীদের গ্রহণ, খাবার বিতরণ এবং রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা যুগিয়ে যাওয়াসহ অনেক দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘ ও অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর কাজেও আমি মুগ্ধ।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজেদের শক্তি ও অদম্য চেতনা দেখেও আমি বিস্মিত। তারা নিজেরা মারাÍক নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে বা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু এই বেহাল অবস্থায়ও তারা নিজেদের আÍপরিচয় ও ঐক্য ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছে।
এই সমস্যা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানবিক সহায়তা হিসেবে নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশকে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছি।
রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় নিজ দেশের বাসভূমিতে নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে ফিরে যেতে পারে সেরকম অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা বার্মা সরকারকে আহ্বান জানানো অব্যহত রাখছি। এ লক্ষ্যে আনান কমিশনের সুপারিশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশটির সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছি আমরা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়া ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলো। আর তা করতে আমাদের সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছি। আমরা বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর যে সদস্যরা সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।
এই হচ্ছে আমার সফরের মূল বিষয় আর বার্তা। এবার আপনাদের প্রশ্ন পেলে আমি সানন্দে উত্তর দিতে পারি।
======================
Remarks in English (PDF 143 KB)
