২৩ অক্টোবর, ২০১৯
রেডিসন হোটেল, ঢাকা
আসসালামু আলাইকুম, নমস্কার, শুভ সন্ধ্যা! আপনাদের সবাইকে আন্তরিক সান্ধ্য শুভেচ্ছা। আজ এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি সম্মানিত। চমৎকার এ অনুষ্ঠানে আমাদের সবাইকে একত্র করার জন্য ইউএস কটন কাউন্সিলের বন্ধুদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আজ রাতের ‘কটন ডে’ উদযাপনের জন্য আয়োজিত বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফার মিজ আজরা মাহমুদের আকর্ষণীয় শোটি দেখার জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি। তুলা সত্যিই একটি অনন্য পণ্য। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বিশ্বজুড়ে তুলার কেনাবেচা হয়েছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতি আর জনগণকে কাছাকাছি এনেছে- অনেকটাই আজ যেমন আমাদের সবাইকে একত্র করছে সে ভাবে। অনেক দেশেরই তুলার সঙ্গে একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের– যৌথভাবে– তুলার সঙ্গে আছে এক অনন্য সম্পর্ক। আমি আজকের সন্ধ্যায় সে সম্পর্কের ওপরই আলোকপাত করবো।
বাংলাদেশ কাচা তুলার দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের একক বৃহত্তম তুলা রপ্তানিকারক। অনেক বছর আগে, বস্ত্রশিল্প খাত যখন বৈশ্বিক মাত্রায় বিকশিত হতে কেবল শুরু করে তখন বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলো মাত্র গুটিকয়েক দেশ থেকে তুলা আমদানি করতো। আজ বাংলাদেশ ৩৯টি দেশ থেকে তুলা আমদানি করে। বাংলাদেশের স্পিনিং ও বস্ত্র কলগুলো বিগত বছরগুলোতে যে গতিতে বিকশিত হয়ে বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে তা সত্যিই চমকপ্রদ। বাংলাদেশের শক্তিশালী বস্ত্রশিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পেলেও একটি বিষয় রয়েছে অপরিবর্তিত যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ তুলা সরবরাহকারী রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলাচাষী এবং বাংলাদেশের স্পিনিং মিলগুলোর জোরালো বন্ধনের জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তুলাবিষয়ক সম্পর্ক কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
আজই কিছু সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন তুলাচাষীর সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাদের মধ্যে ছিলেন মিস্টার মার্ক নিকলস। তিনি আজ সন্ধ্যায় আমাদের সঙ্গে এখানে আছেন। মার্ক ওকলাহোমার চতুর্থ প্রজন্মের একজন তুলাচাষী।
বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প ও ক্রমেই অত্যাধুনিক হয়ে ওঠা বিশ্বের অন্য ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলাচাষিরা কীভাবে তাদের চাষের কৌশল এগিয়ে নিচ্ছেন তা সরাসরি তাদের কাছ থেকে জানাটা ছিল দারুণ। আজকের ভোক্তারা শুধু উন্নতমানের পোশাকই চায় না, তারা চায় এগুলো যেন টেকসই পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়। আরও চায়, এগুলো যে পরিবেশে উৎপন্ন হবে তা যেন আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার ও কর্মী নিরাপত্তা মান মেনে চলে। আর তারা সঠিকভাবেই এ দাবি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলাচাষীরা তাদের তরফ থেকে বিশ্বের অন্যতম কঠোর টেকসই উৎপাদনের মান প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে মাটি সংরক্ষণ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং আমাদের সবার জীবনকে সমৃদ্ধ করা ও টিকিয়ে রাখা জীববৈচিত্র নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ। অনবরত উন্নতি করা এবং নতুন চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করার সক্ষমতাই যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি এবং এ খাতে কাজ করা কৃষকদের অনন্য করে তুলেছে।
তুলা শিল্পের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার একটি দারুণ উদাহরণ হচ্ছে ‘বল উইভিল’ প্রায় সম্পূর্ণ নির্মূল করা। ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল বল উইভিল ইর্যাডিকেশন প্রোগ্রাম নেওয়ার মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জিত হয়। সে আজ থেকে চল্লিশ বছরের বেশি আগের কথা। আমাদের শিল্প সেই তখন থেকেই এই সমন্বিত প্রচেষ্টার সুফল পেয়ে আসছে। (প্রসঙ্গত, ইউএসডিএ’র ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু দক্ষিণ টেক্সাসের একটি ছোট এলাকায় বোল উইভিলের অস্তিত্ব রয়েছে)।
এখানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি বাংলাদেশের নারী-পুরুষদের মধ্যে নিরন্তর উন্নতি করার জন্য সেই একই তাড়না ও প্রত্যাশা দেখেছি। আমাদের পুরো সম্ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের সবাইকে সহযোগী হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত।
আমরা একজোট হলে কতোটা অর্জন করতে পারি মাত্র দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত সাউথইস্ট এশিয়া মিল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম তার একটি দৃষ্টান্ত। সারা এশিয়া থেকে মিলগুলো আপনাদের কাছ থেকে সেরা করণীয়গুলো জানতে বাংলাদেশে আসছে জানতে পেরে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম।
ওই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য ইউএস কটন কাউন্সিলকে বিশেষরকম ধন্যবাদ। নিজেদের স্থাপনা খুলে দেওয়া এবং এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তুলা শিল্পের সহযোগীদের ঢাকার বুকে স্বাগত জানানোর জন্য মালেক মিলস’কেও ধন্যবাদ।
বস্ত্রশিল্পের সামনে উপস্থিত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার এই ক্ষণে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা শিল্প এবং বাংলাদেশের স্পিনিং ও বস্ত্র কারখানাগুলো সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হবে। সেই অভিন্ন লক্ষ্যটি হচ্ছে: সারা বিশ্বের ভোক্তাদের জন্য উঁচু মানের পণ্য তৈরি করা যাতে আমরা দুই দেশই উপকৃত হবো।
আজকের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো এবং এই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সামনে বক্তব্যদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের আবারও ধন্যবাদ। আমি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার জন্য ইউএস কটন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশি সরকার ও বেসরকারি খাতের অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখার প্রতীক্ষায় রয়েছি।