বাংলাদেশের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভারপ্রাপ্ত আন্ডার
সেক্রেটারি নেওয়ার্ট এর বক্তব্য
বুধবার, ২৮শে মার্চ, ২০১৮
বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডিসি
শুভ সন্ধ্যা, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস উদযাপনে এখানে থাকতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের ও সম্মানের।
রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন কে ধন্যবাদ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার জাতির কাছে আপনার বহু বছরের সেবা প্রদান আপনার জন্য গর্বের ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরের কূটনৈতিকদের দক্ষতা প্রমাণ করে। আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি তার সাধুবাদ জানাই।
আজ রাতের অনুষ্ঠান আমার কাছে বিশেষ অর্থ বহন করে কারণ গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সফর পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে আমার প্রথম বিদেশ সফর। সেখানে সফরকালে আমি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারি সংলাপে অংশ নেই যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরাল ও বৃদ্ধি করতে ব্যবসা ও বাণিজ্য, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা, উন্নয়ন, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা এবং সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের এডয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টারে বাংলাদেশের অনেক তরুণ প্রজন্মের সাথে সাক্ষাৎ হয় এবং আমেরিকার জনগণের জন্য তাদের উষ্ণ বন্ধুত্ব আমাকে বিমোহিত করে।
আমি কক্সবাজার সফরকালে বার্মা থেকে সহিংসতার ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের জনগণের দ্বার ও হৃদয় উন্মুক্ত করা দেখে অভিভূত।
আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানায় এমন প্রয়োজনের মুহুর্তে যাদের দরকার যাতে তারা সান্ত্বনা পায় তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য।
আমাদের দু’দেশের নিবিড় সম্পর্ক এই মর্মস্পর্শী মানবিক সংকটের সময় আরো বেশি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব আরো গুরুত্ব বহন করছে।
আপনাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে গত আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশর জনগণের জন্য ১১০ মিলিওন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আপনাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাই যা শুধুমাত্র মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না যার মধ্যে থাকবে টেকসই ব্যবস্থা তৈরিতে নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতে সম্মানের সাথে নিরাপদে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের বাসভূমি বার্মায় ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে সহায়তা।
এই সঙ্কটে সাড়া প্রদানে আমাদের যে সহযোগিতা তা আমাদের দুই দেশের মধ্যকার শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিফলন যেটি আমরা আরো শক্তিশালী করতে চাই। বিগত কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাংলাদেশের অসাধারণ সামাজিক ও অর্থনীতিক উন্নয়নে সাহায্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকগণ সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরবর্তি পর্যায়ে উন্নীত করতে ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার হুমকি সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে ও জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো একযোগে কাজ করছে। এটি দেখা উৎসাহজনক যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদানে ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের ভূমিকার মধ্যে রয়েছে দেশটিতে এই মাসেই শান্তিদূত-৪ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০জন সামরিক সদস্যসহ বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে ১,০০০এরও বেশী অংশগ্রহণকারী জমায়েত হয়েছিলেন। আপনাদের দেশ এই ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করবে এটিই সংগত কেননা বাংলাদেশ এই বছর জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ৩০তম বার্ষিক উদযাপন করছে। এই বিষয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা বিশ্বের জন্য অনেক মূল্যবান। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ যারা চরম প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে চলেছেন তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ এবং আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ সেই ১৩৫জন শান্তিরক্ষীর প্রতি যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করছেন।
যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ সারা বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখেন, তাঁরা দেশটির জাতির জনকের সাহসী পদক্ষেপকে অনুসরণ করেন। বাংলাদেশ ভ্রমণকালে আমার সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের যেটি সত্যিকার অর্থে তাঁর জীবনের একটি অনুপ্রেরণাদায়ী স্মারক। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের তাঁর সেই বিখ্যাত ভাষণে, যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত করেছিল বলে অনেকে মনে করেন,তিনি বলেছিলেন, “ এই বাংলায় হিন্দু, মুসলমান, বাঙ্গালি, নন-বাঙ্গালি যারা আছে তাঁরা আমাদের ভাই। তাঁদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের উপর।” চলুন আমরা তাঁর দূরদর্শীতা ও উদ্যমকে সম্মান জানাই এবং শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চেষ্টা করি যেখানে শ্রেণী, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস ও জন্মস্থান নির্বিশেষে সবাই ভাই ও বোন হিসেবে বিবেচিত এবং যেখানে তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
সকল বাংলাদেশির সম্ভাবনা ও মূল্যবোধের প্রতি আমাদের যে বিশ্বাস সেটি আমাদের অংশদারিত্বের মৌলিক বিষয়। এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে আমাদের উভয় দেশের সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করি যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও সারা পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশ শান্তি ও স্বাধীনতার পক্ষে বাংলাদেশ তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
আজকে রাতে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তি অনেক মহান সাফল্যকে উদযাপন করছি এবং আমরা অপেক্ষায় আছি দেশটির আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। এখানে উপস্থিত থাকার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। জনাব রাষ্ট্রদূত, আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে নিমন্ত্রণ জানানোর জন্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জানাই অভিনন্দন।
* বক্তৃতার জন্য প্রস্তুতকৃত
জিআর/২০১৮
=========================