যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরু থেকে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে দাতা হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারায় গর্বিত। আমি আনন্দের সাথে আজ ঘোষণা করছি যে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন মানবিক সহায়তা হিসেবে আরো প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ডলার দেবে যার বেশিরভাগ ২০২১ সালের বাংলাদেশ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হবে।
নতুন এই তহবিলসহ ২০১৭ সাল থেকে আমাদের দেয়া মোট মানবিক সহায়তার পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে ১.১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয়েছে।
নতুন এই তহবিল আমাদের অংশীদারদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৯,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জীবন রক্ষায় সহায়তা করা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে — যাদের মধ্যে ৭,৪০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে বার্মার রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নির্মূল ও অন্যান্য ভয়াবহ নৃশংসতা ও নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়াও এই তহবিল বার্মা থেকে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রভাবিত ৪,৭২,০০০ এরও বেশি স্থানীয় বাংলাদেশী জনগণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা শিক্ষা, জরুরি টেলিযোগাযোগ, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা, আশ্রয় ও ত্রাণ সামগ্রী, এবং পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মানবিক সহায়তার সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। আমরা কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধ ও মোকাবেলা, পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি ও পরিকল্পিত মায়ানমার পাঠ্যক্রম পাইলট কর্মসূচিসহ একটি সু-সমন্বিত মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য এই কার্যক্রমে নিয়োজিত সকল পক্ষের প্রশংসা করছি।
আমরা এই কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে সহায়তাকারী রাষ্ট্রসমূহের প্রশংসা করছি, তবে বাংলাদেশ ও বার্মার সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষের মানবিক চাহিদা মেটাতে আরো সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা এই কার্যক্রম টেকসই করতে অন্যান্য দাতাদের এই কার্যক্রমে আরো তহবিল সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উপর অর্পিত চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্বের কথা বুঝতে পারে এবং আমরা এই সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। গত ১ ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ও নৃশংস সামরিক অভিযানের পর রোহিঙ্গা শরনার্থীসহ বার্মার জনগণের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিতে আমরা অবিচল রয়েছি। আমরা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের গ্রহণের জন্য মানবিক আচরণকারী বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি আমাদের সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখব। আমরা ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও তাদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানাই।
আমরা বার্মাতে সংঘটিত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য বার বার এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। আমরা বার্মার অভ্যুত্থান ও মানবাধিকার লংঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার পাশাপাশি সেখানে সহিংসতা বন্ধ করা, অন্যায়ভাবে আটককৃত সকলকে মুক্তি দেয়া এবং অবিলম্বে বার্মাকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বার্মার সামরিক জান্তার উপর চাপ তৈরি করছি। বার্মায় সামারিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অনেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী একই ব্যক্তি। আমরা বাংলাদেশের প্রতি শরনার্থীদের রক্ষা করা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই, বিশেষত বর্ধিত ঝুঁকির এই সময়ে, এবং তাদেরকে নির্যাতন ও সহিংসতার মুখোমুখি হতে পারে এমন একটি দেশে ফেরত না পাঠানোর যে আশ্বাসেরও স্বীকৃতি জানাই।
আমরা কক্সবাজারে সংকুচিত হয়ে আসা মানবিক ও সুরক্ষিত স্থানের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। মানবিক কার্যক্রমে নিয়োজিত অংশীদারদের উপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধি জীবন রক্ষাকারী সেবাসমূহ সরবরাহ বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরনার্থীদের জন্য আরো বিস্তৃত পরিসরে জীবিকা ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি করার জন্য এবং সুরক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উত্সাহিত করছে, যদিও আমাদেরকে অব্যাহতভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এছাড়াও আমরা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে সংঘটিত সাম্প্রতিক অগ্নিকান্ডের মতো দুর্যোগকালীন সময়ে তাত্ক্ষণিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
যুক্তরাষ্ট্র ভাসানচর বিষয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার সংলাপকে স্বাগত জানায় এবং এই বিষয়ে নিবিড়ভাবে পরামর্শের জন্য আমরা উত্সাহিত করি। আমরা একথা পুনরায় উল্লেখ করতে চাই যে, ভাসানচরে শরনার্থীদের যেকোন ধরনের স্থানান্তর স্বেচ্ছায় ও শরনার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতা সংক্রান্ত অধিকারের সম্মান রক্ষা করে হতে হবে। এছাড়াও আমরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই তারা যাতে এই দ্বীপে থাকা শরনার্থীদের কাছে জাতিসংঘের স্বাধীন প্রবেশাধিকার অনুমোদনের পাশাপাশি দ্বীপের একটি সমন্বিত কারিগরি ও সুরক্ষা অবস্থা মূল্যায়ন করার অনুমতি প্রদান করে।
আমি রোহিঙ্গা জনগণের জন্য একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ ও আইওএম এর আহ্বানের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই।
সকলকে ধন্যবাদ।