প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘লিডারস সামিট’-এ ৪০ জন বিশ্ব নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন

আজ, প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘লিডারস সামিট’-এ ৪০ জন বিশ্ব নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনের আয়োজক। অনলাইনে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনটি বিশ্ববাসীদের দেখার জন্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃযোগদান বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কয়েকদিন পর, ২৭ জানুয়ারি, তিনি জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে শিগগিরই একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার কথা জানিয়েছিলেন।

লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট’এ  জলবায়ুকেন্দ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনৈতিক গুরুত্বগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। এটি আগামী নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (সিওপি২৬ বা কোপ ২৬ ) সফল করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের চরম মন্দ প্রভাব বিলম্বিত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আসন্ন লিডারস সামিট ও কোপ ২৬ উভয় সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হবে উষ্ণায়নকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা এবং এ লক্ষ্যকে অর্জনযোগ্য অবস্থায় বহাল রাখা । এছাড়াও সম্মেলনে জলবায়ুকেন্দ্রিক উচ্চাকাঙ্খা কীভাবে ভালো বেতনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে জলবায়ু প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করবে তার দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হবে।

শীর্ষ সম্মেলনের আগেই যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের নতুন “ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন” (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) এর আলোকে একটি উচ্চাভিলাষি ২০৩০ সালের নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার আমন্ত্রণপত্রে লিডারস সম্মেলনে আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এই সম্মেলনকে সামনে রেখে তাদের নিজ নিজ দেশ কীভাবে একটি শক্তিশালী জলবায়ু আকাঙ্খায় ভূমিকা রাখবে তার রূপরেখা তৈরির সুযোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রর নেতৃত্বাধীন জ্বালানী ও জলবায়ু বিষয়ক “মেজর ইকোনোমিকস ফোরাম অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট” পুনর্গঠন করবে, যা ১৭টি দেশের একটি জোট, যারা একত্রিতভাবে বৈশ্বিক প্রায় ৮০ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ শতাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট বাইডেন অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শক্তিশালী নেতৃত্ব দিচ্ছে, জলবায়ুর প্রভাবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা নেট-জিরো অর্থনীতির পথে উদ্ভাবনমূলক কর্মকান্ড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতারাও এই সম্মেলনে অংশ নেবেন।

লিডারস সামিট শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার ক্ষেত্রে মূল প্রতিপাদ্য (থিম)-গুলোর মধ্যে থাকবে:

  • গুরুত্বপূর্ণ এই দশকে নির্গমন হ্রাস করতে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির (দেশগুলোকে) তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে চেষ্টা জোরদার করা।
  • নেট-জিরো অর্জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করার লক্ষ্যে  সরকারি ও বেসরকারি খাতে অর্থ সংগ্রহ করা।
  • জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধাগুলো যাতে কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রাখে তার উপর জোর দেয়াসহ নতুন ক্লিন অ্যানার্জি অর্থনীতিতে স্থানান্তরের মাধ্যমে সকল জনসমাজ  ও শ্রমিকরা যাতে উপকৃত হয় তার নিশ্চয়তার উপর গুরুত্বারোপ করা।
  • নির্গমন হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করতে পারার পাশাপাশি নতুন বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ তৈরি ও ভবিষ্যতের শিল্পগুলোকে গড়ে তুলবে এমন রূপান্তরকারী প্রযুক্তির উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করা ও ব্যবহার ত্বরান্বিত করা।
  • সবুজ পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে উচ্চাকাঙ্খা ও সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও সংস্থার কর্মকান্ড তুলে ধরা।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে জীবন ও জীবিকা সুরক্ষার লক্ষ্যে সামর্থ্য জোরদার করা, জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এর প্রভাব মোকাবেলা করা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রকৃতি-নির্ভর সমাধানের মাধ্যমে নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা।

সম্মেলনের আলোচ্যসূচি, এতে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছাড়াও আরো যারা অংশ নেবেন, গণমাধ্যমের যুক্ত হওয়া এবং জনসাধারণ কীভাবে সম্মেলন সম্পর্কে জানবেন সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আগামী সপ্তাহগুলোতে জানানো হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিম্নলিখিত নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন:

  • প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা
  • রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ, আর্জেন্টিনা
  • প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, অস্ট্রেলিয়া
  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ
  • প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, ভূটান
  • রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারো, ব্রাজিল
  • প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কানাডা
  • রাষ্ট্রপতি সেবাস্তিয়ান পিনেরা, চিলি
  • রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন
  • রাষ্ট্রপতি ইভান ডিউক মার্কেজ, কলম্বিয়া
  • রাষ্ট্রপতি ফ্যালিক্স তিশিসেদী, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র
  • প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন, ডেনমার্ক
  • প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন, ইউরোপিয়ান কমিশন
  • প্রেসিডেন্ট চালর্স মিশেল, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল
  • রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাখোঁ, ফ্রান্স
  • রাষ্ট্রপতি আলী বনগো অন্দিম্বা, গ্যাবন
  • চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, জার্মানী
  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভারত
  • রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো, ইন্দোনেশিয়া
  • প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরাইল
  • প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি, ইতালি
  • প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস, জ্যামাইকা
  • প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, জাপান
  • রাষ্ট্রপতি উহুরু কেনিয়াত্তা, কেনিয়া
  • রাষ্ট্রপতি ডেভিড কাবুয়া, মার্শাল আইল্যান্ড প্রজাতন্ত্র
  • রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর, মেক্সিকো
  • প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন, নিউজিল্যান্ড
  • রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদু বুহারি, নাইজেরিয়া
  • প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গ, নরওয়ে
  • রাষ্ট্রপতি অ্যান্ডাজেজ দুদা, পোল্যান্ড
  • রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র
  • রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, রাশিয়ান ফেডারেশন
  • বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, সৌদি আরব
  • প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, সিঙ্গাপুর
  • রাষ্ট্রপতি মাতামেলা সিরিল রামাফোসা, দক্ষিণ আফ্রিকা
  • প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ, স্পেন
  • রাষ্ট্রপতি রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান, তুরস্ক
  • রাষ্ট্রপতি শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত
  • প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, যুক্তরাজ্য
  • রাষ্ট্রপতি নগুয়েন ফে তরং, ভিয়েতনাম