দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের ২০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কার করে স্থানীয় কমিউনিটি ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে ইউএসএআইডি

ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৯: দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের ২০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের পর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার সেনের সঙ্গে আজ এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেন্স। এই সংস্কারকাজ সম্পাদিত হয়েছে ইউএসএআইডির “ইনক্রিজিং কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স টু ডিজাস্টার (আইসিআর)” প্রকল্পের অধীনে, যা বাস্তবায়ন করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো কয়রা, দাকোপ, শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার এক লাখের বেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীর জন্য, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো দুর্যোগের সময় নিরাপদ ও সুরক্ষিত আশ্রয়ের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে এবং এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের একটি সাম্প্রতিক নিদর্শন।

এই সংস্কারকাজের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এখন পরিষ্কার ওয়াশ (পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা) সুবিধা-সমৃদ্ধ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারবেন, যেখানে নিরাপদ ও পাত্রে ধারণযোগ্য পানীয় জলের উৎস, টয়লেট এবং হাত ধোয়ার সুবিধা রয়েছে, যা বর্তমান কোভিড মহামারির আলোকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সংযোগ সড়ক ও র‌্যাম্প উন্নত করার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আরও সুগম্য হয়েছে এবং সেখানে নারী, শিশু, কিশোর, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ জায়গা রয়েছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত অতিরিক্ত সচিব আর. কুমার সেন তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন, “ইউএসএআইডি এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহায়তায় কয়রা, দাকোপ, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর এলাকার মানুষ নিরাপদ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এখন এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো রক্ষা করা কমিউনিটি ও সরকারের যৌথ দায়িত্ব। আমাদের অবশ্যই এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর যত্ন নিতে হবে, যাতে সেগুলো ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো ঘন ঘন দুর্যোগে আমাদের কমিউনিটিগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে পারে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেন্স বলেছেন, “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ৭০০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে ইউএসএআইডি, যা দেশজুড়ে হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে। গত দুই বছরে ইউএসএআইডি এমন আরও ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারে সহায়তা দিয়েছে। এসব কাজের মধ্যে ছিল পানি, পয়োনিষ্কাশন ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা মেরামত; রং করা; সংযোগ সড়ক ও ওঠানামার র‌্যাম্প উন্নত করা, যার সবটাই করা হয়েছে নারী, শিশু, পরিবার ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে।”

এ ধরনের লক্ষ্যনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয়সংক্রান্ত প্রস্তুতি, সাড়া ও ঝুঁকি হ্রাসে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সমন্বয় ও অবকাঠামো তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে ইউএসএআইডি। ১৯৭১ সাল থেকে ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ২০২০ সাল থেকে খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগের প্রসার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চার প্রচার এবং পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে ইউএসএআইডি।

=================