যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট

Kamala D. Harrisকমলা হ্যারিস

কমলা ডি. হ্যারিস হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সরকারী চাকুরী জীবন শেষ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ভারত ও জ্যামাইকা থেকে অভিবাসী হয়ে আসা মাতা-পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার হাস্টিংস কলেজ অফ ল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

“আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে বলতেন, ‘কমলা, তুমি প্রথম অনেক কিছুই হয়তো করবে, তবে দেখো, তুমিই যেন তার শেষ ব্যক্তি না হও।“ – কমলা হ্যারিস, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯

ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ও তাঁর বোন মায়া হ্যারিস তাঁদের মা শ্যামলা গোপালানের স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠেন ও অনুপ্রেরণা পান। স্তন ক্যান্সার বিজ্ঞানী ও নিজ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ব্যক্তি গোপালান যে বছর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন, ঠিক সেবছরই ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর মা-বাবা অধিকার কর্মী ছিলেন বিধায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ন্যায়বিচারের ধারণা দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হন। তাঁরা তাঁকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশগুলোতে নিয়ে আসতেন এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থার্গুড মার্শাল থেকে শুরু করে নাগরিক অধিকার নেত্রী কনস্ট্যান্স বেকার মটলি- যাদের কাজ তাঁকে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী বা প্রসেকিউটর হতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।

বড় হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে ঘিরে ছিলো বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী ও বর্ধিত পরিবার। ২০১৪ সালে তিনি ডগলাস এমহফকে বিয়ে করেন। তাঁদের বৃহৎ মিশ্র পরিবারে রয়েছে তাঁদের সন্তান এলা ও কোল।

পুরো পেশাজীবনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রথম কোর্টে দাঁড়িয়ে তাঁর বলা “কমলা হ্যারিস, জনগণের জন্য” কথাটির দ্বারাই পরিচালিত হয়েছেন।

১৯৯০ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস অ্যালামেডা কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি কার্যালয়ে যোগদান করেন। সেখানে তিনি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের মামলা পরিচালনা বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি সান ফ্রান্সিসকোর জেলা অ্যাটর্নি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেন এবং পরে সান ফ্রান্সিসকো সিটি অ্যাটর্নি কার্যালয়ের শিশু ও পরিবার বিভাগের প্রধান হন।

২০০৩ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর জেলা অ্যাটর্নি নির্বাচিত হন। এই পদে থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস প্রথমবার মাদক বিষয়ক অপরাধ সংঘটনকারীদেরকে হাই স্কুল ডিগ্রি অর্জনপূর্বক কাজ খুঁজে নেয়ার সুযোগ দিতে এক যুগান্তকারী কার্যক্রম হাতে নেন। কার্যক্রমটি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস কর্তৃক আইন প্রয়োগে অন্যতম জাতীয় উদ্ভাবনী মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

২০১০ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধান করেন। তিনি শিশুদের ন্যায়বিচার বিষয়ে রাজ্যের প্রথম ব্যুরো অফ চিলড্রেনস জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং বেশ কিছু প্রথম সংস্কারের সূচনা করেন যার মাধ্যমে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বৃহত্তর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস বাড়ি-ঘর ঋণদাতাদের দখলে চলে যাওয়া ক্যালিফোর্নিয়ানদের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার বন্দোবস্ত এবং লাভজনক শিক্ষা কোম্পানির ফায়দা ওঠানোর শিকার শিক্ষার্থী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের জন্য আরো ১.১ বিলিয়ন ডলার বন্দোবস্ত জয় করেন। তিনি আদালতে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা আইনের পক্ষাবলম্বন করেন ও পরিবেশগত আইনের প্রয়োগ ঘটান এবং বিবাহ সমতা প্রতিষ্ঠায় জাতীয় পর্যায়ের নেত্রী ছিলেন।

“চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপে আমি প্রথম আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার বলা “কমলা হ্যারিস, জনগণের জন্য” কথাটির দ্বারাই পরিচালিত হয়েছি।” – কমলা হ্যারিস, ১৯ আগস্ট , ২০২০

২০১৭ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সদস্য হিসেবে শপথ নেন। তিনি তাঁর প্রথম বক্তৃতায় সেসময়কার হামলার শিকার অভিবাসী, ও শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলেন। সিনেট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি ড্রিম আইনের (DREAM Act) আওতায় উপযুক্তদের জন্য আরো ভালো সুরক্ষার জন্য লড়াই করেন এবং অভিবাসীদের হাজতখানাগুলোতে নিম্নমানের পরিবেশ ঠেকাতে আরো ভালো নজরদারির আহ্বান জানান।

গোয়েন্দা বিষয়ে সিনেটের সিলেক্ট কমিটিতে থাকাকালে আমেরিকার জনগণকে বিদেশী হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি উভয় পক্ষের সদস্যদের সাথে কাজ করেছেন এবং দ্বি-পাক্ষিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আমেরিকার নির্বাচনকে নিরাপদ করতে সহায়তা করেছেন। বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ ও বাস্তবিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য তিনি ইরাক, জর্ডান ও আফগানিস্তান সফর করেছেন। তিনি সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটিতেও কাজ করেছেন। কমিটিতে তাঁর মেয়াদকালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দু’জন মনোনীত প্রার্থীর শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

সিনেটর হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস নগদ অর্থ জমা রেখে জামিন নেয়ার ব্যবস্থা সংস্কার, ক্ষুধা দূরীকরণ, ত্রাণ হিসেবে বাসা ভাড়া প্রদান ও মাতৃ-স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং পরিবেশ ও গণপূর্ত বিষয়ক সিনেট কমিটির সদস্য হিসেবে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা আইন প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০১৮ সালে সিনেটে দ্বি-দলীয় সমঝোতায় তাঁর আনীত গণরোষে হত্যা বিরোধী আইন (anti-lynching bill) পাশ হয়। তাঁর আনীত ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংরক্ষণ বিষয়ক আইনি প্রস্তাব স্বাক্ষরিত হয়ে আইনে পরিণত হয়- যেমন হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে অত্যাবশ্যক পুঁজি সংস্থানে তাঁর প্রচেষ্টা।

২০২০ সালের ১১ আগস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তার জন্য তাঁর নির্বাচনী সঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যান্য দপ্তরের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। তবে তিনি শেষ ব্যক্তি হবেন না এটাই তাঁর সঙ্কল্প।