যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

Joseph R. Bidenজোসেফ আর. বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন টানা ৩৬ বছর যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে ডেলাওয়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন আমেরিকার নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করবেন এবং আবার আমাদের জনসমাজকে আরো ভালোভাবে গড়ে তুলবেন।

ক্যাথরিন ইউজিনিয়া ফিনেগ্যান ও জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়রের চার সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র পেলসিভ্যানিয়ার স্ক্র্যান্টনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে বাইডেনের পরিবার ডেলাওয়ারের ক্লেমন্টে চলে আসে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউনিভার্সিটি অফ ডেলাওয়ার ও সিরাকিউস ল স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হন এবং নিউ ক্যাসেল কাউন্টি কাউন্সিলে কাজ করেন।

জো বাইডেনের পরিবার
মাত্র ২৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। সিনেট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পরেই বাইডেন পরিবার এক বিয়োগান্তক পরিস্থিতির শিকার হয়। গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নিলিয়া এবং কন্যা নাওমি মারা যান এবং পুত্র হান্টার ও বিউ মারাত্মকভাবে আহত হন।

হাসপাতালে ছেলের শয্যাপাশে থেকে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে শপথ নেন। শুধু পরিবারের সান্নিধ্যে থাকার জন্যই তিনি প্রতিদিন উইলমিংটন থেকে ওয়াশিংটন যাওয়া-আসা শুরু করেন- প্রথমদিকে গাড়িতে করে ও পরে ট্রেনে। সিনেটের পুরো সময়টাই তিনি এটা চালিয়ে গেছেন।

১৯৭৭ সালে বাইডেন জিল জ্যাকব’কে বিয়ে করেন এবং ১৯৮০ সালে অ্যাশলি ব্লেজার বাইডেনের জন্মের মধ্য দিয়ে তাঁদের পরিবার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আজীবন শিক্ষক জিল শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ভার্জিনিয়ার কমিউনিটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনায় ফিরে যান।

জো বাইডেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র ডেলাওয়ারের অ্যাটর্নি জেনারেল বিউ বাইডেন জীবনের প্রতিটি দিনের মতোই সততা, সাহস ও শক্তি নিয়ে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০১৫ সালে মারা যান। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিউয়ের লড়াই প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তাঁর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে অনুপ্রাণিত করে- আর সেটা আমরা জানি, ক্যান্সারের অবসান।

সিনেটের অন্যতম নেতা
ডেলাওয়ারের সিনেটর হিসেবে ৩৬ বছরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যতম নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সিনেট বিচার বিভাগীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে বা সংখ্যালঘু দলের জ্যেষ্ঠতম সদস্য বা র‌্যাঙ্কিং মেম্বার হিসেবে ১৬ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন প্রণয়ন ও এ কাজে নেতৃত্ব দানের জন্য বাইডেন ব্যাপক পরিচিতি পান। যুগান্তকারী এই আইনের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার শাস্তি জোরদার হয়েছে, আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য অভূতপূর্ব সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং জাতীয় পর্যায়ে গার্হস্থ ও যৌন সহিংসতা বিষয়ক আলোচনায় পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।

সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সভাপতি বা সংখ্যালঘু দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য (র‌্যাঙ্কিং মেম্বার) হিসেবে ১২ বছরে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির রূপদানে অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করেন। সন্ত্রাসবাদ, গণবিধ্বংসী অস্ত্র, স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ, মধ্য প্রাচ্য, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক সমস্যা ও আইন প্রণয়নের পুরোভাগে ছিলেন তিনি।

“আমেরিকা একটি ধারণা। এটি এমন একটি ধারণা যা যে কোনো সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী, মহাসাগরের চেয়েও ব্যাপ্ত, স্বৈরশাসক বা একনায়কের চেয়েও ক্ষমতাধর। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে আশাহীন মানুষকে আশা দেয়, এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে প্রতিটি মানুষের সাথে মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে এবং ঘৃণাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। এটি দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে যে, জীবনে কে কোথা থেকে এলো সেটা কোন ব্যাপার নয়, যদি লক্ষ্য নিয়ে কোন কাজ করা যায় তাহলে সেটা অর্জন করা সম্ভব। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি।” – জো বাইডেন, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবেলায় তাঁর নেতৃত্ব অব্যাহত রেখেছেন এবং বিদেশে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রেসিডেন্টের মন্ত্রীসভার অধিবেশন আহ্বান করেছেন, আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলোতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মধ্যবিত্ত আমেরিকানদের জীবনমান উন্নয়নে লড়াই হিসেবে কংগ্রেসের সাথে কাজ করেছেন, এবং বন্দুক সহিংসতা কমানো, নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসন ও ক্যান্সার নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাইডেন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বিজয়লাভে সহায়তা করেছেন এবং দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তথা পুনরুদ্ধার আইনের এবং দূষণমুক্ত জ্বালানি বিষয়ে আমাদের বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের তত্ত্বাবধান করেছেন। প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার মাধ্যমে আরেকটি মহামন্দা প্রতিরোধ করা গেছে, লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ও চাকুরী রক্ষা পেয়েছে, এবং তাঁর প্রশাসনের শেষ নাগাদ একটানা ৭৫ মাস পর্যন্ত কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর সবই বাইডেন করেছেন দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুদক্ষ সরকারী কার্যক্রমে যেখানে অপচয়, অপব্যবহার ও জালিয়াতির হার ছিলো ১%’রও কম।

তাছাড়া প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা আইন অনুমোদনের পথ তৈরি করেছিলেন যার মাধ্যমে তাঁদের কার্যকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত বীমা-সুবিধাহীন আমেরিকানদের সংখ্যা ২ কোটি কমেছিলো এবং বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য পূর্বতন রোগের কারণে বীমা-সুবিধা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

তিনি পুরো পশ্চিম গোলার্ধ জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এর ফলে ইউরোপ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের মিত্রদেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ইরাক থেকে ১৫০,০০০ সেনা সদস্যকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায়ও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ওবামা বাইডেনকে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম শীর্ষক দেশের সর্বোচ্চ বিশেষ বেসামরিক সম্মাননা পদকে ভূষিত করেন।

এক নতুন অধ্যায়
বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন ফাউন্ডেশন, বাইডেন ক্যান্সার ইনিশিয়েটিভ, দি পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড গ্লোবাল এঙ্গেজমেন্ট, এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারে বাইডেন ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রত্যেক আমেরিকানের জন্য সুযোগ সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

২৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। বাইডেনের প্রার্থিতা শুরু থেকেই তিনটি স্তম্ভের ওপর গড়ে উঠেছে যথা, আমাদের দেশের আত্মার জন্য লড়াই, আমাদের দেশের মেরুদণ্ড তথা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পুনর্গঠন, এবং অভিন্ন আমেরিকার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। এটাই ছিলো সেই বার্তা যা ২০২০ সালে মহামারী, অর্থনৈতিক সংকট, জাতিগত ন্যায়বিচারের আহ্বান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্তিত্বের হুমকি মোকাবেলাকালে আরো বেশি অনুরণিত হয়েছে।

“আমরা এ দেশের আত্মার জন্য এক যুদ্ধের মধ্যে বেঁচে আছি।” – জো বাইডেন, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯