বিশেষ সংবাদ সম্মেলন (স্পেশাল ব্রিফিং)
লরা স্টোন ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভূটান, এবং মালদ্বীপের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
মডারেটর: লন্ডন মিডিয়া হাব থেকে শুভ অপরাহ্ন এবং ঢাকায় আমাদের অংশগ্রহণকারীদের জন্য শুভ সন্ধ্যা। আমার নাম জেড তারার এবং আমি মিডিয়া হাবের উপ-পরিচালক। ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লরা স্টোন এবং ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান জোয়েন ওয়াগনার এর সাথে আজকের এই বিশেষ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে স্বাগতম! আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আজকের বিশেষ সংবাদ সম্মেলনটি রেকর্ড করা হবে এবং রেকর্ডিং ও এর প্রতিলিপি (ট্রান্সক্রিপ্ট) উপস্থিত অংশগ্রহণকারী সবাইকে পাঠানো হবে।
আলোচনার একটি বাংলা অনুবাদও করা হবে।
এখন আমি আলোচনায় অংশ নিতে ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লরা স্টোনকে অনুরোধ করছি।
ডিএএস স্টোন: চমত্কার। এবং আজ আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। এটি সত্যিই একটি অপূর্ব সুযোগ, আর তাই এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এবং আমি আমাদের দূতাবাস ও লন্ডন মিডিয়া হাবকে ধন্যবাদ জানাই সবাইকে একত্রিত করার জন্য।
সুতরাং, আমি মনে করি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রূপকল্প (দৃষ্টিভঙ্গি) তুলে ধরার এটি একটি অপূর্ব সুযোগ। এটি এমন একটি রূপকল্প যেখানে সকল দেশ স্বাধীন, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী। রূপকল্পে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সেগুলো এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির নীতিমালার উপর প্রতিষ্ঠিত: সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচলের স্বাধীনতা, আদর্শমানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক সীমান্ত নির্বিশেষে তথ্যের অবাধ প্রবাহ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সামরিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা।
এবং আজ আমি আপনাদেরকে যে মূল বার্তাটি দিতে চাই, তা হলো, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলের বিপুল সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য টেকসই ও সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করা। এবং আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সত্য। প্রচুর সম্ভাবনার সাথে বাংলাদেশের একটি যোগসূত্র রয়েছে এবং এটি একটি বিপুল সম্ভাবনাময় দেশ এবং আমরা সত্যিকারভাবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে তার জোরালো সমর্থন অব্যাহত রেখেছে; যে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থান করায় ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমাদের যে রূপকল্প অর্থাত্ আরো সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ ও আন্তঃসংযুক্ত অঞ্চল গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আপনারা জানেন যে, একটি গতিশীল ও স্বাভাবিক সময়ে দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সাফল্য এই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্র পরিচালনা কাঠামো শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে আরো বেগবান হবে।
সুতরাং, আমি আলোচনার শুরুতেই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) কীভাবে দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশের সমৃদ্ধি বিশেষ করে সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহ ব্যবস্থার বৈচিত্র্যকরণ ও জ্বালানি সহযোগিতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে সেই বিষয়ের উপর আলোকপাত করব।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এই অঞ্চলের বাজার-ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বেসরকারি-খাতে অর্থায়ন এবং উন্মুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশকে জোরদার করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সাফল্যকে আরও শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কখনো কখনো এটা মনে রাখা কষ্টকর… কিংবা মানুষ ভুলে যায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এফডিআই বা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে ৯৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আমরা ২০১৯ সালে এই অঞ্চলের সাথে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি দ্বিমুখী পণ্য ও সেবার বাণিজ্য করেছি, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ লাখের বেশি ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৫১ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত আমাদের অন্যতম বৃহৎ শক্তি হিসেবে উচ্চ-মানের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও আইনের শাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। অন্যদিকে, বিনিয়োগ যখন রাষ্ট্রের আধিপত্য ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তখন প্রায়শই দুর্নীতির ঘটনা ঘটে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুফল সবাই পায় না।
কোভিড-১৯ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছিল, কিন্তু কোভিড মোকাবেলায় আমাদের সমন্বয় আমাদের সহযোগিতাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং আমাদের অংশীদারিত্ব আরো গভীর হয়েছে। এর ফলে কোভিড-১৯ মোকাবেলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমমনা অংশীদারদের সাধারণ স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করার আগ্রহ আরো জোরদার হয়েছে। এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বিষয় যেখানে আমাদের নজর থাকবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের পরে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছে, যার মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা হিসেবে ২১ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা বিগত ২০ বছর ধরে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া মোট সহায়তাকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, এবং এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের জন্য দেয়া ১ বিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধনশীল সহযোগিতার আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো এনার্জি বা জ্বালানী। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানী সমন্বয়করণ, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন, ক্রয়-প্রক্রিয়ার সংস্কার, এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি আমদানি টার্মিনাল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের যৌথ উদ্যোগ যা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের হাজার হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। আমি জানি যে, ডিসিএম ওয়াগনার এই বিষয়ে আপনাদেরকে আরো একটু বিস্তারিত বলবেন।
এবং আমি বিমসটেকের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রশংসা করতে চাই। সংগঠনটির বিদায়ী মহাসচিব সংগঠনটিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং আমরা অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংহতকরণ এবং সংযোগের ক্ষেত্রে বিমসটেক এবং বাংলাদেশকে সমর্থন করতে অবশ্যই প্রস্তুত রয়েছি।
এখন, আমি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আমাদের যে লক্ষ্য তার জন্য আমরা কী করতে চাই, সেই বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি অনেক ধরনের সাধারণ হুমকির মুখোমুখি রয়েছে যার মোকাবেলায় আমাদের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা জোট এবং অংশীদারিত্বকে আরো জোরদার ও শক্তিশালী করা দরকার এবং নিরাপত্তার সহযোগিতা বাড়াতে নিজেদের মধ্যে আরো বেশি নেটওয়ার্ক তৈরি করা দরকার। আমাদের লক্ষ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সামুদ্রিক সুরক্ষা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, ও সমুদ্রে স্বাধীনভাবে চলাচল করা। এর ফলে অবশ্যই মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগকালীন সময়ে সাড়া দেওয়ার কার্যক্রম সম্প্রসারণ ঘটবে ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ প্রতিরোধের জন্য নিরাপত্তা বিষয়ে অংশীদারদের মধ্যে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ঘটবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম থেকে শুরু করে শান্তিরক্ষা পর্যন্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে থাকে এবং আমরা সেই অংশীদারিত্বকে আরও বিস্তৃত ও জোরদার করতে চাইছি। আমি ধারণা করি, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ধারাবাহিকভাবে অন্যতম সর্বোচ্চ অবদানকারী দেশ। আমরা বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও অবদানের জন্য কৃতজ্ঞ এবং বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে সমর্থন করতে চাই। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ নিউইয়র্কে শান্তিরক্ষা নিয়ে জাতিসংঘে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক চলাকালে মনুষ্যবিহীন বিমান ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি “স্মার্ট প্লেজ” ঘোষণা করেছিল। এটি সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র মাত্র।
আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহায়তার বিষয়টি ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত, এবং আমরা এটি অব্যাহত রাখতে চাই। এছাড়াও, এটি খুবই পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন কর্মকান্ডের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমরা সমুদ্রসীমা সুরক্ষা, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগকালীন সময়ে সাড়া দেয়া, সন্ত্রাসবিরোধী ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সামর্থ্য তৈরিতে অংশীদার হতে চাই।
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ আইপিএসের অধীনে অন্যতম প্রধান বিষয় বা বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চলে দুর্যোগ ও মাদক চোরাচালানের মতো উদীয়মান হুমকি শনাক্ত করা ও মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অংশীদারদের সাথে আকাশপথ ও সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত সচেতনতামূলক তথ্য বিনিময় করতে ২০১৮ সাল থেকে আমরা একাই (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সামর্থ্য বৃদ্ধিতে বিদেশী সামরিক অর্থায়নের আওতায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছি।
এখন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সুশাসন শক্তিশালী করা। আমরা জানি যে, স্বচ্ছতা হলো টেকসই প্রশাসনিক সমাধানের অত্যাবশ্যকীয় ভিত্তি ও সুশাসন নাগরিকদের প্রয়োজনে সাড়া দেয়ার সামর্থ্য তৈরি করে। সেই কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও ইউএসএআইডি গত অর্থবছরে আমাদের আইপিএস এর অধীনে সুশাসন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৬৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ দিয়েছিল। ইন্দো-প্যাসিফিক ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ (আইপিটিআই)-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ২০০-এরও বেশি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। যার মাধ্যমে সংস্থাগুলো দুর্নীতি দমন ও আর্থিক স্বচ্ছতা, গণতন্ত্রকে সহায়তা করা, যুব ও উদীয়মান নেতৃত্বের বিকাশ, গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের স্বাধীনতা এবং সার্বজনীন মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের প্রতিযোগীরা স্বচ্ছতা ও সততা, উদ্ভাবন, এবং বাক-স্বাধীনতা ও তথ্যে প্রবেশাধিকারকে অবনমিত করছে, এই প্রেক্ষিতে আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের দক্ষিণ এশীয় অংশীদারদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা।
এবং পরিশেষে, এবং সবিশেষ গুরুত্বের সাথে, আমি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা বিভিন্ন কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, সেটা হলো আমাদের জনগণের-সাথে-জনগণের যোগসূত্র বা বন্ধন। বিশ্বজুড়ে ভবিষ্যতের নেতা তৈরিতে বিনিয়োগ করতে পারার জন্য আমি ভীষণভাবে গর্বিত। আমাদের ঢাকাস্থ দূতাবাস থেকে জানতে পেরেছি যে, আজকের ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যারা আমাদের প্রোগ্রামের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ঢাকায় আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংস্কৃতিক আউটরিচ কেন্দ্র রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অল্প কিছু আলাপ করতে পারি। এবং কোভিড -১৯ সঙ্কট চলাকালীন, আমরা এটা দেখে অভিভূত যে, ঢাকার কর্মসূচিগুলো ভার্চুয়াল কার্যক্রমের মাধ্যমে আরো বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা কোভিড পরবর্তী সময়ের মোকাবেলায় বাংলাদেশীদের প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করার জন্য আমরা নিজেদের কর্মসূচিতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেছি।
আমি জানি যে, ইএমকে সেন্টার যুব কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে “ফিউচার অফ ওয়ার্ক পোস্ট-কোভিড-১৯: বিল্ডিং এ সাসটেইনবেল পোস্ট-প্যানডেমিক ফিউচার ফর ইয়ুথ” শিরোণামে একটি বড় ধরনের প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে। আমরা জানি যে বাংলাদেশি জনগণ আপনাদের দেশের ভবিষ্যত, তারা কিন্তু আমাদেরও ভবিষ্যত্। আমাদের এখানে বাংলাদেশিদের একটি বিরাট গ্রুপ রয়েছে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে অবদান রেখে চলেছেন, এবং আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমাদের কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।
এই বিষয়ে, আমার বক্তব্যের পর, ডিসিএম ওয়াগনার বিস্তারিত বলবেন। তবে, তিনি বলার আগে আমি আমার বক্তব্যের মূল কথাটি আপনাদেরকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই — ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনার মূলে থাকার কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেরই একটি দেশ। আমরা এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সার্বভৌমত্ব, সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচলের স্বাধীনতা, আদর্শমানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রত্যেকের (প্রতিটি দেশের) অধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা, এবং সামরিক কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা (নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব)।
এখন, এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের ঢাকাস্থ দূতাবাস কীভাবে কাজ করছে সে সম্পর্কে ডিসিএম ওয়াগনার বিস্তারিত বলবেন। এবং পরবর্তীতে আমি আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেব। আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
মিস ওয়াগনার: বেশ, তাহলে আমি শুরু করছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, লরা। আপনি সব বিষয়কে একত্রিত করে সংক্ষেপে চমত্কারভাবে বলেছেন। উপস্থিত সবাইকে আস-সালামু আলাইকুম এবং শুভ সন্ধ্যা [বাংলায়।] আজকের এই আলোচনায়, আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রদূত মিলার, ঢাকাস্থ দূতাবাস ও আমাদের ডি.সি. টিমের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসজনিত কারণে যারা ভুগছেন তাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আমরা এই মহামারী মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও এই দেশের জনগণের সাথে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখব, এবং গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সেই সব বীরদের প্রতি যারা সম্মুখসারিতে থেকে আমাদেরকে নিরাপদ ও সুস্থ থাকার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন।
শুরুতেই ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বলছি। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, এই অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে মুক্ত বাজারের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণ, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা, মানবাধিকার রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের লক্ষ্য এবং আদর্শকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একসাথে কাজ করছে। এবং আমি এখন খুব অল্প কথায় বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দিক নিয়ে বলছি।
প্রথমত, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর হিসেব মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য এখানকার অবকাঠামো সঠিক ও উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এবং, এটি স্পষ্টতই, কোন একটি দেশ কিংবা সরকারের একার পক্ষে এতো বড় তহবিলের জোগান দেয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, এই কাজে বেসরকারি খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আর সে কারণেই, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি (আইপিএস)-তে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের সর্বোত্তম কাজের দক্ষতাকে সহায়তা করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছি; এর ফলে উদ্ভাবনের স্ফুরণ ঘটবে, উন্নতি ছড়িয়ে পড়বে এবং এই অঞ্চল দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি অর্জন করবে। এবং এখানে, বাংলাদেশে ব্যক্তিগত/বেসরকারি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিশেষ করে জ্বালানী, অবকাঠামো ও ডিজিটাল অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে মনোনিবেশ/দৃষ্টি নিবদ্ধ করছি। এবং আমরা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য অনুদান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি কাজটি কীভাবে করা যায় সে নিয়ে গবেষণা করছি। আমরা বেসরকারি খাতের সাথে যৌথভাবে কাজ করার পাশাপাশি এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশী কাউন্টারপার্টদের সাথেও কাজ করছি, যা মার্কেট অ্যাক্সেস বা বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে ও বিনিয়োগের পরিবেশকে উন্মুক্ত করতে সহায়তা করবে।
সুতরাং, আমি আপনাদেরকে ডিএএস স্টোন যে কথা বলেছেন তার প্রেক্ষিতে একটি উদাহরণ দেব। এশিয়া এজ কর্মসূচির কথা আপনারা শুনে থাকবেন। এবং এটি এমন একটি কর্মসূচি যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জ্বালানী নিরাপত্তা বাড়াতে এবং বাংলাদেশব্যাপী মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানী পৌঁছে দিতে সহায়তা করছে। এবং আমরা এই কাজটি করার পাশাপাশি বাজার-ভিত্তিক প্রক্রিয়াগুলোকেও শক্তিশালী ও জোরদার করছি। সুতরাং এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে সহায়তা করছি; উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি টার্মিনাল, যেটা মহেশখালীতে অ্যাক্সেলারেট এনার্জি তৈরি করছে। এবং একইভাবে, আরো কয়েকটি বিদ্যুত্ কেন্দ্রে জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)-এর জ্বালানী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং এই জাতীয় কর্মসূচি, এই জাতীয় প্রযুক্তি, এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ, আমরা মনে করি বাংলাদেশকে কয়লা থেকে গ্যাসচালিত বিদ্যুত শক্তি উত্পাদনে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশের লাখো বাসা-বাড়িতে কয়েক দশক ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সহায়তা করবে। এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশী মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে।
মহামারী সত্ত্বেও আমরা (বাংলাদেশের সঙ্গে) আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়িয়েছি। আমি বলতে চাইছি, এক বছর আগেও কে ভেবেছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্ পোশাক কোম্পানি হ্যাইনস বাংলাদেশ থেকে কিনবে এবং বাংলাদেশী কোম্পানি বেক্সিমকো মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ৬৫ লাখ পিস ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। এবং বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানের, বৃহত-পরিমাণে পিপিই উত্পাদনকারী দেশগুলোর খুব ছোট তালিকায় স্থান পাওয়া একটি দেশ এবং বাংলাদেশ দ্রুত এই খাতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
এখন আমি নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছি। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথভাবে যা কিছুই করছি না কেন, হোক সেটা অবাধে চলাচল-উপযোগী বাণিজ্যিক রুট নিশ্চিত করার জন্য, কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য কিংবা মানুষ পাচার বা আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের জন্য, সবকিছুই করা হচ্ছে একটি নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য। কারণ শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকই একটি সমৃদ্ধশালী ইন্দো-প্যাসিফিক গঠন করতে পারে।
সুতরাং, আমাদের আইপিএস অংশীদারিত্বের অংশ হিসাবে, উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট-গার্ড ইউ.এস. অ্যাক্সেস ডিফেন্স আর্টিকেল প্রোগ্রাম-এর অধীনে কয়েকটি জাহাজ বা একটি জাহাজ স্থানান্তরিত করেছে এবং এটি যে কেবল বাংলাদেশকে উপকূলরেখা বরাবর সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষায় সাহায্য করছে তা নয়, কিংবা এটি শুধুই যে (সমুদ্র এলাকায়) অপরাধ দমনে সহায়তা করছে তা নয়, এটি প্রতিবেশীদের প্রয়োজনে বাংলাদেশকে তাদের পাশে দাঁড়াতেও সহায়তা করছে। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ (ফ্রিগেট) যেটা আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট… (অস্পষ্ট)।… সুতরাং আমি মনে করি যে, জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়গুলোও নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জপূর্ণ সেকথা জোর দিয়ে বলা দরকার, এবং ডিএএস স্টোন যেমনটা মাত্রই বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোভিড সঙ্কট মোকাবেলায় কীভাবে কতোটা সহায়তা করছে।
কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আমরা বড় বড় অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি তবে আমি একটি ছোট কর্মসূচির কথা উল্লেখ করতে চাই, আমরা কয়েক হাজার স্বাস্থ্যসেবাদানকারী পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ঢাকায় আমরা মহামারীর কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত অভাবী দরিদ্র মানুষদের মাঝে খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করেছি। এবং আমি মনে যে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উদাহরণ থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিকভাবে অংশীদারিত্বের একটি চিত্র পাওয়া যায়।
সুশাসনের ক্ষেত্রে, আবারও বলি, একটি অবাধ, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকই আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও সুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়াতে পারে (অস্পষ্ট)…..
মডারেটর: আমাদের শ্রোতাদের কাছে ক্ষমা চাই। ঢাকার সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাদের সাড়া পেতে আমরা অপেক্ষা করছি।
মিস ওয়াগনার: ….মেধা সম্পদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। এবং যখন কোম্পানিগুলো, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, দেখে যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে, কিংবা দুর্নীতি বা মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ, এই ধরনের পরিস্থিতি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে এবং কোম্পানিগুলো এ জাতীয় ঝুঁকির মুখোমুখি হলে তারা বিনিয়োগের জন্য অন্য কোন জায়গা খোঁজে। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, উদাহরণস্বরূপ শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়াতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, এবং এছাড়াও আমরা বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, আইনী সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ, ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করছি যাতে করে তাদের মাঝে আইনী সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে, তারা আইনী সহায়তা পেতে পারেন এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে আইনী সেবা পাওয়ার মান বৃদ্ধি পায়। এবং আবারও বলি, এই কর্মসূচিগুলো কেবল ব্যক্তিজীবনকেই প্রভাবিত করে না, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থাও বৃদ্ধি করে এবং সহিংস উগ্রবাদকে প্রতিহত করতেও সহায়তা করে। এবং এগুলো (যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য) খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
যেমনটা ডিএএস স্টোন বলছিলেন, সেই ১৯৭১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশীদের জন্য বিনিয়োগ করেছে, এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তায় ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ। পাইপলাইন বা সেতু বা উত্পাদন কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তবে টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এটি যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে, আপনাকে মানুষের জন্য তথা জনশক্তি তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এই সুযোগে আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই যে, একজন আমেরিকান হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমেরিকান কোম্পানিগুলোর অবদান নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। আমি আপনাদেরকে কয়েকটি উদাহরণ দেব।
উদাহরণস্বরূপ, শেভরন শুধুই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে তা নয়, বরং বাংলাদেশের অত্যন্ত চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে এবং একইসঙ্গে কোম্পানিটি হাজার হাজার বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে — বাংলাদেশে শেভরনের ৯৫ শতাংশ কর্মী বাংলাদেশী। শুধু তাই নয়, শেভরন তাদের মানসম্মত শিক্ষা সহায়তা উদ্যোগের মাধ্যমে কয়েকশো বৃত্তি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে থাকে।
কোকা-কোলা, সম্প্রতি পঞ্চবার্ষিক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানিটি তাদের নারী ব্যবসায়ী কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে থাকে।
সুতরাং, জনগণের-সাথে-জনগণের বন্ধন, সেটা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে হোক কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মাধ্যমেই হোক না কেন, আমি মনে করি এটিই সবসময় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। এই প্রসঙ্গে আমি আপনাদেরকে কয়েকটি উদাহরণ দিতে চাই, যার মাধ্যমে আপনারা দেখবেন যে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার (জনগণের-সাথে-জনগণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে) বিনিয়োগ করে। প্রতি বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নিতে প্রায় ১১০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীকে স্পন্সর করি। সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া প্রথম বাংলাদেশিদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং আমরা এটি নিয়ে খুব গর্বিত। এবং আমাদের এমন আরো প্রোগ্রাম রয়েছে। আমাদের ইংলিশ অ্যাক্সেস মাইক্রোস্কলারশিপ প্রোগ্রাম থেকে বাংলাদেশের প্রায় ১,২০০ তরুণ স্নাতক হয়েছেন। এটি বাংলাদেশেই আয়োজিত একটি দ্বি-বার্ষিক কর্মসূচি যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা, নেতৃত্বের বিকাশ এবং কমিউনিটি সার্ভিস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।
সুতরাং, পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, বিগত পাঁচ দশক ধরে আমাদের দেশ এবং আমাদের মানুষেরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, মাত্র গত সপ্তাহে (বাংলাদেশের) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সেক্রেটারি একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধশালী ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য তাদের অংশীদারিত্বের যৌথ অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলেছেন। এই মাসে, মাসের শেষের দিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংলাপ করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক বিজনেস ফোরামের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন অক্টোবরের শেষ দিকে অনলাইনে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের জ্বালানী ও অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, বাজার সংযোগ, স্বাস্থ্য এবং কীভাবে আমরা কোভিড-উত্তর (অর্থনীতি) পুনরুদ্ধারে একত্রিতভাবে কাজ করব সেই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার বড় সুযোগ তৈরি করবে।
যেহেতু, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উদারতা ও সমৃদ্ধি এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য একসাথে কাজ করছি, আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে, আমাদের অংশীদারিত্ব আরো জোরদার হবে, এবং আমি (আইপিএস-এর) লক্ষ্যগুলো বাস্তবে রূপ দিতে একসাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি। [বাংলায়] সবাইকে ধন্যবাদ।
মডারেটর: আমাদের উভয় বক্তাকে ধন্যবাদ। আমরা এখন আলোচনাকে প্রশ্নের জন্য উম্মুক্ত করব। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই আমি আগে থেকে জমা দেয়া একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি। এই প্রশ্নটি আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর তানজিম আনোয়ারের কাছ থেকে। তিনি জানতে চেয়েছেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অন্যতম বিষয় হলো নিরাপত্তা। প্রশ্ন হলো, সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘায়িত হওয়াকে যুক্তরাষ্ট্র কি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে, এবং যদি তাই হয় তাহলে আইপিএস কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জাতিগত সঙ্কট সমাধানে সহায়তা করবে? ”
মিস ওয়াগনার: লরা, আপনি কি চান যে, এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেই?
ডিএএস স্টোন: অবশ্যই, আপনি রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে শুরু করতে পারেন এবং তারপরে, আমি আইপিএস এবং মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারি।
মিস ওয়াগনার: বেশ, আমি বলছি। একথা ঠিক যে, রোহিঙ্গা সঙ্কট যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সত্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে রয়ে গেছে এবং আমাদের দূতাবাস এই বিষয়টি নিয়ে অব্যাহতভাবে কাজ করছে। এবং সত্যি বলতে কী, কোভিড-১৯ মহামারি আঘাত হানার পর (দূতাবাস রোহিঙ্গা বিষয়ে) মনোযোগ বাড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে আমি পুনর্বার বলতে চাই যে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ ভয়ংকর ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসায় ও অবিশ্বাস্য উদারতার সাথে আশ্রয় দিয়েছে। লরা, আপনি আরো বিস্তারিত বলবেন, তবে আমি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু উদ্যোগ ও অবদানের কথা সংক্ষেপে বলতে চাই। রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফিরে যেতে সহায়তা করার ব্যাপারে সমাধান খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বার্মার সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছি যাতে তারা এমন পরিবেশ তৈরি করে যেন রোহিঙ্গারা নিরাপদে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদার সাথে নিজ দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে যেতে পারে। আমরা নিউইয়র্ক, হেগ ও জেনেভায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে (বার্মার) সরকারের উপর চাপ তৈরি করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অংশীদার ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সাথে কাজ করছি, যাতে করে (বার্মার সরকার) এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি করে যেন রোহিঙ্গারা তাদের নিজে বাসভূমে ফিরে যেতে পারে।
তবে কাজটি এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গা জনগণের অধিকার রয়েছে নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার, এবং এটি যাতে হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এখানে সরকারের সাথে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
লরা, এবার আপনি বলুন।
ডিএএস স্টোন: আপনাকে ধন্যবাদ। মানবিক ইস্যুতে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ক্ষেত্রে বলতে পারি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে বিস্তারিত পরিসরে সামগ্রিকভাবে ধারণ করছে। সুতরাং, এই নীতিতে মানবিক সহায়তা ও শরণার্থী বিষয়ক নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে বোঝা নিয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা খুবই সচেতন আছি এবং আমরা দাতা দেশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সরাসরি সহায়তার করার পাশাপাশি দাতা দেশগুলোর নেতা হিসেবে অন্যদেরকে রোহিঙ্গা সঙ্কটে অবদান রাখতে উত্সাহিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা বাংলাদেশের ভালো অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করছি। আর এসবই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মধ্যে আছে। এবং আমরা এটাও স্বীকার করি যে, এটি একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশের সমস্যা নয়। বিশ্বের অনেক জায়গায় শরণার্থী রয়েছে; অন্যান্য দেশেও রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে। তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে কাজ করছি যাতে এই বোঝার ভার ও চূড়ান্ত সমাধান উভয়ই বার্মার উপর দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য এখন যাদের উপর এই বোঝা চেপেছে তারা যেন একত্রিতভাবে কাজ করেন।
মিস ওয়াগনার: লরা, আমি আপনার কথার সাথে সামান্য কিছু কথা যোগ করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বৃহত্তম মানবিক সহায়তাকারী দাতা দেশ। আমরা এই শরণার্থীদের সহায়তায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছি, এবং ২০২০ সালে সাহায্যের পরিমাণ আরো বাড়নোর জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, এবং শরণার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট তহবিলের পাশাপাশি হোস্ট বা আশ্রয়দানকারী কমিউনিটিকে সহায়তা করা হচ্ছে, এবং সহযোগিতার মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ও কক্সবাজার জেলায় কোভিড-১৯ মোকাবেলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ধন্যবাদ।
মডারেটর: আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের পরবর্তী প্রশ্ন হুমায়ূন কবিরের কাছ থেকে এসেছে। হুমায়ূন, আপনি যদি অনুগ্রহপূর্বক আপনার কর্মস্থলের পরিচয় দেন।
প্রশ্ন: আচ্ছা। আমার নাম হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া। আমি ঢাকা ট্রিবিউনে কাজ করি। এটি একটি ইংরেজি দৈনিক যা রাজধানী (ঢাকা) থেকে প্রকাশিত হয়। আমার প্রশ্নটি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মিজ স্টোনের জন্য, এই প্রশ্নের দুটো অংশ রয়েছে। প্রথমত, আমি জানতে চাচ্ছি রোহিঙ্গা সঙ্কট যা পুরো অঞ্চলকে প্রভাবিত করছে সেই সঙ্কটকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এবং আমি আশঙ্কা করছি, সঙ্কট দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, এবং আমাদের সরকার উগ্রপন্থাকে রোধ করতে পারবে না। এই ধরনের একটি সমস্যা থাকার পরও কীভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, সফল ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়ন সম্ভব? এটি হলো প্রশ্নের প্রথম অংশ।
প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশটি হলো, আপনাদের কৌশলটিতে বাংলাদেশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এটা কি — এটা কি চীনের প্রভাববিস্তারকে রোধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের অংশ — ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে, নাকি এটা ভিন্ন কোন বিষয়? আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডিএএস স্টোন: খুব ভালো প্রশ্ন। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রশ্নে সম্পর্কের উপর প্রভাব সম্পর্কে বলছি, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘস্থায়ী, স্থিতিশীল, টেকসই সমাধানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে খুবই সচেতন। আমরা খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, এবং স্বল্পমেয়াদী ত্রাণের পাশাপাশি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা বাংলাদেশের অনেক মানুষের সাথে কাজ করেছি। সুতরাং, আমি আপনার সাথে পুরোপুরি একমত যে বর্তমান পরিস্থিতি অনির্দিষ্টকালের এভাবে থাকতে দেয়া যায় না। এবং তাই আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর সাথে যোগাযোগ করছি যাতে করে মানবিক ত্রাণের মূলনীতিগুলো বজায় রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের বসবাসের আদি-স্থল বা তাদের উত্পত্তিস্থলে স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনাদের যে বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে তাদের সত্যিকারের উন্নতি হওয়া দরকার। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কোন কৌশল নয়, এই কৌশলটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। আপনি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যোগ দিতে পারবেন না; কারণ এটা শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতি মাত্র। তবে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সেভাবেই প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যে, এটা পূর্ব এশিয়ার কোন কৌশল নয়; এটি এমন একটি কৌশল যা পুরো অঞ্চলটিকে একসাথে রাখতে চায়। এটিতে কোনও একটি দেশ নেই। এটি কোনও একটি দেশকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়নি। এবং সত্যি বলতে কী নামের মধ্যেই বলে দেয়া আছে: এটি স্বাধীন ও সকলের জন্য উম্মুক্ত। যে কোনও দেশ যারা স্বাধীনতা এবং খোলামেলা নীতিকে অনুসরণ করতে চায় তারা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি প্রয়োগ করতে পারে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি মূলত এক ধরনের বন্ধন, নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করা। এই কৌশলটি এই অঞ্চলের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
সুতরাং, এটি একটি খুবই ইতিবাচক কৌশল। এটা কোনমতেই নেতিবাচক কিছু নয়। এটি অন্য দেশের নীতি বা কৌশলগুলো মোকাবেলা করার কোন ধরনের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়নি। এবং সেই বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও সেখানকার কোম্পানিগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যে ধরনের সুযোগসুবিধা পাওয়া যায় সেগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা ও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
জোয়েন, আপনি কি আর কিছু যোগ করতে চান?
মিস ওয়াগনার: না, আমি মনে করি আপনি সবদিকগুলোই তুলে ধরেছেন। (বাংলাদেশের) কৌশলগত অবস্থান রয়েছে, রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা, উত্পাদনের বিশাল ভিত্তি রয়েছে, এবং শক্তিশালী আর্থিক কর্মকান্ড রয়েছে। যার আকর্ষণে আমেরিকান কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অংশীদার হতে চায়। এবং আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি যে কোভিড সঙ্কট বাংলাদেশ কতোটা দ্রুততার সাথে মোকাবেলা করেছে। সুতরাং সেই সুযোগগুলো রয়েছে — এটি স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের বিপুল মানব সম্পদ রয়েছে কাজে লাগানোর জন্য – আমি মনে করি লরা যেমনটা বলেছেন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটাও এই কৌশলের মধ্যেই বলে দেয়া আছে। তাছাড়া এই কৌশলের মাধ্যমে সকলের সমৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলো একত্রিত হবে। ধন্যবাদ।
মডারেটর: আমাদের কাছে আগে থেকে জমা হওয়া পরবর্তী প্রশ্নটি এসেছে দৈনিক ইত্তেফাক থেকে। প্রশ্নটি হলো — “একটি জনপ্রিয় ধারণা রয়েছে যে, চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোডের উদ্যোগকে মোকাবেলায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি তৈরি করা হয়েছে। আপনি কী অনুগ্রহপূর্বক বিষয়টি খোলাসা করে বলবেন?
ডিএএস স্টোন: হ্যাঁ, এটি বলা তো খুবই সহজ। এটা সে কারণে করা হয়নি। [হাসি।] ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতি। যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে, আমাদেরকেও প্রশান্ত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মুখাপেক্ষী হতে হয় স্বাভাবিক বাণিজ্য অংশীদার এবং জনগণের-সাথে-জনগণের স্বাভাবিক অংশীদারিত্ব এবং এমন আরো অনেক বিষয়ের জন্য। এবং আমি মনে করি যে, এখানে এমন কিছু বিষয়ের স্বীকৃতি রয়েছে যা আগে ছিল না — এই অঞ্চলকে নিয়ে আগে যথেষ্ট পরিমাণে ভাবা হয়নি।
তাই আমরা বিষয়টির দিকে নজর দিয়েছিলাম — আমরা ভারত মহাসাগরের দিকে তাকাতে শুরু করেছিলাম এবং এটি ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সাথে আমাদের উভয় সম্পর্কের একটি স্বীকৃতি, তাই এটা ইন্দো-প্যাসিফিক, — তবে আমরা এ ব্যাপারেও সচেতন যে, (ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে) যুক্তরাষ্ট্রকে এই অঞ্চলে আরো বেশি সময়, শক্তি ও সম্পদের সমাবেশ ঘটাতে হবে এবং অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে কারণ অর্থনৈতিকভাবে, নিরাপত্তার দিক থেকে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, মাদক মোকাবেলা, জনগণের-সাথে-জনগণের বন্ধন গড়ে তোলা, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী আমেরিকান ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক, উন্নত পরিবহণ সম্পর্কের প্রয়োজনে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে, আমাদের কাছে তাদের গুরুত্ব রয়েছে। তাছাড়া আমরা সবসময়েই, প্রতিটি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে সম্পৃক্ত হই না। তাই, (কৌশলের অধীনে) দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের একটি সম্পর্ক তৈরি করা দরকার। আমাদের প্রচুর চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনীতির দিক থেকে আমাদের সুযোগগুলো আন্তঃসীমান্ত বিনিময়ের সাথে জড়িত।
সুতরাং, আমাদের জন্য একটি আঞ্চলিক কৌশল তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল; যার মাধ্যমে এই এলাকাটিকে অঞ্চল হিসেবে দেখা যাবে। এমনকি আপনি আইফোনের মতো কিছু একটার কথা ধরুন যা বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফোনের চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণে অবদান রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য এই অঞ্চলকে নিয়ে আরো বিস্তৃত পরিসরে কাজ করা আবশ্যক ছিল। এবং সে কারণেই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তৈরি করা হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোডকে লক্ষ্য করে নয়। আমরা বুঝতে পারছি যে, যুক্তরাষ্ট্র যে দক্ষিণ এশিয়ার মতো জায়গাগুলোতে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদেরকে আরো ভালভাবে সকলকে তথ্য জানাতে হবে। আমি মনে করি যে, আমরা যা কিছু করছি সেটা আমাদের স্বাভাবিকভাবেই করার কথা। আমরা আমাদের নিজেদের ঢোল নিজেরা পেটাইনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটি কিছুটা প্রচার করার দরকার আছে, যাতে করে মানুষ সত্যিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারে।
সুতরাং এটিও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেরই একটি অংশ, সেই ধরনের যোগাযোগ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
মডারেটর: চমত্কার! আমাদের পরবর্তী প্রশ্নটি এখন সরাসরি করা হবে। প্রশ্নকারী হলেন আবু আনাস। মি. আনাস আপনি নিজের কর্মস্থল উল্লেখ করে প্রশ্নটা করুন।
প্রশ্ন: হাই! আপনারা কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?
মডারেটর: আপনার কথা কিছুটা অস্পষ্ট, আপনি যদি একটু জোরে বলেন, তবে আমরা আপনার কথা পরিস্কার শুনতে পাব।
প্রশ্ন: ঠিক আছে। ঠিক আছে, আমি প্রশ্নটা লিখেছি। তাহলে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মানুষ যেমন মনে করে যে, আপনাদের দেশ — আমি বলতে চাচ্ছি যে ওয়াশিংটন সবসময় সেই দেশগুলোর পক্ষে থাকে যাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। এটা কী সত্যি? যদি না হয়, দয়া করে ব্যাখ্যা করুন।
ডিএএস স্টোন: আমি আপনার প্রশ্নের শেষটা শুনতে পাইনি।
প্রশ্ন: আচ্ছা। আবার বলছি, মানুষ মনে করে যে, আপনারা সবসময় সেই দেশগুলোর পক্ষে থাকেন যাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে কিংবা যারা ভূ-রাজনৈতিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে, এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবসময় আপনাদের বৈদেশিক নীতিতে প্রান্তিক অবস্থায় থাকে। এটা কী সত্যি? এই কথার সাথে আপনি কতটা একমত বা দ্বিমত পোষণ করেন?
ডিএএস স্টোন: (আপনার প্রশ্নটি) বুঝতে পেরেছি। আমি মনে করি যে, এটি একটি সত্যিই আকর্ষণীয় প্রশ্ন এবং এটি অবশ্যই বলা দরকার যে, ছোট দেশগুলোকে প্রান্তিকীকরণ আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এবং সত্যি বলতে কী, বাংলাদেশ কোনও ছোট দেশও নয়। বাংলাদেশ আসলে বিশাল একটি দেশ। তবে আমি মনে করি, আমাদের অভিপ্রায়টি হলো বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সে ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে — যেখানে আমরা যৌথভাবে কাজ করতে পারি। আমি ভিয়েতনামের মতো দেশের কথা বলতে চাই, যারা উত্পাদনশীলতার বৈচিত্র্যকরণের জন্য, সাপ্লাই চেইনের বৈচিত্র্যকরণের জন্য, অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনার জন্য সত্যিকারের সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করেছিল। এবং এই সবগুলো বিষয় বাংলাদেশে বিদ্যমান যাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যদের মনোযোগ পেয়ে থাকে, আমি মনে করি যে আমরা যখন এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্বের সত্যিকারের ভালো দেশগুলোর সাথে কাজ করি তখন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে অন্যদের মনোযোগ আরো বাড়ে। তবে তাদের সংখ্যা বেশি নয় এবং তারা কেবল প্রচুর খবর পান। এবং তাই, এটি আমাদের এখানে আকাঙ্ক্ষার একটি অংশ যাতে লোকেরা বুঝতে পারে যে আমরা বাংলাদেশের জন্য প্রচুর সম্পদের সংস্থান করেছি এবং আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা….এটি বোঝা গেল।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক মনোযোগী এবং আমরা কেবল এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, প্রত্যেকে আমাদের কথা শুনছে এবং বুঝতে পারছে। এবং আমাদের লক্ষ্য হলো — যেমনটা ডিসিএম ইতোমধ্যে বলেছেন, আমরা আশা করি যে এক ধরনের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংলাপ শুরু করব যা স্পষ্ট করে দেয় যে — বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা এবং আমাদের উভয় দেশের জনগণের জন্য আমরা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অসীম গুরুত্ব দেখতে পাই।
মিস ওয়াগনার: আমি এই প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, ডিএএস স্টোন ইতোমধ্যে যেমনটা উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ কোনও ছোট দেশ নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। এবং আমি মনে করি যে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য স্থানের মানুষেরা এই বিষয়ে সজাগ যে, আপনাদের দেশে যদি সাড়ে ষোল কোটি জনসংখ্যা থাকে, তাহলে সেটা আলোড়ন সৃষ্টি করবেই। এবং আমি মনে করি এটি এমন কিছু যা মানুষজন বুঝতে পেরেছে। ব্যবসায়ীরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
শেভরন এবং কোকাকোলা সম্পর্কে আমি আগে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি তার সাথে যুক্ত করার জন্য বলি, ওরাকল গত মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম অফিস খুলেছে। শুধু যে অ্যাক্সেলারেট এনার্জি বাংলাদেশের প্রথম এলএনজি আমদানি সুবিধা তৈরি করেছে তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কোম্পানি ডিএসসি ড্রেজ বাংলাদেশেই সর্বাধুনিক ড্রেজিং সরঞ্জাম তৈরি করছে, বাংলাদেশীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করছে এবং প্রযুক্তিও হস্তান্তর করছে। এবং তারা একইসাথে সরকারের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং নদী খননের কাজকে সহায়তা করছে এবং একটি সত্যিকারের অংশীদারিত্ব তৈরি করছে। এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই লাভজনক ও দরকারি অংশীদারিত্ব দেখতে পাচ্ছে। আমরা ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়াতে সহায়তা করছি।
উদাহরণস্বরূপ, ইউএসএআইডি কয়েকটি গবেষণার মাধ্যমে কিছু ব্যবসার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা করার মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে; চিহ্নিত ব্যবসা ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হালকা যন্ত্রপাতি উত্পাদন, পর্যটন, কৃষি ব্যবসা, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প ইত্যাদি। এবং কোল্ড চেইনের মতো কিছু প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ হতে পারে।
তার মানে হলো, যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই সজাগ আছে এবং তারা বাংলাদেশকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
মডারেটর: এবার, শেষ প্রশ্ন। প্রশ্নটি আমাদের কাছে (বেসরকারি টেলিভিশন মিডিয়া) চ্যানেল ২৪ এর মোরশেদ হাসিব আগেই জমা দিয়েছিলেন, তার জিজ্ঞাস্য হলো, “ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যেখানে ভারত আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) শক্তিশালী অংশীদার, সেখানে আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, এই কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবাধে কাজ করতে পারবে, আবার যখন বাংলাদেশে সাম্প্রতিক চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের চেয়ে অনেক বেশি? ”
ডিএএস স্টোন: আচ্ছা, আমি বলছি। প্রথমেই বলি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ হয় না (যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ নিয়ে যা বলা হলো)…..আপনাকে তথ্য-উপাত্ত দেয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ভারতের সাথে সম্পর্ক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র… ভারতের সাথে
এমন কোন সম্পর্ক তৈরির ইচ্ছা আমাদের নেই যা অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত করে, উদাহারণস্বরূপ বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক।
যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি ভারত তৈরি করতে চাইছে না….ভারতের সাথে এমন কোনও সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে না যা অন্য দেশগুলোকে কোনভাবে দূরে রাখে বা অন্য দেশগুলোর জন্য সমস্যাপূর্ণ হতে পারে। তবে আমরা ভারতকে সমর্থন জানাচ্ছি কারণ ভারত নির্দিষ্ট কিছু আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, এবং আমি মনে করি এগুলো এমন ধরনের বিষয় যেখানে ভালো অংশীদাররা একে অন্যকে সহযোগিতা করে থাকে।
সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দেশে চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের কথা যদি বলি, চীনের বিনিয়োগ রাষ্ট্র-পরিচালিত, এটি অত্যন্ত উচ্চ-পরিচিতিমূলক, এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে উন্নতির সুফল সবাই সমানভাবে নাও পেতে পারে, কিন্তু এটি ঘটে…তারা বড় বড় জিনিস তৈরি করে যেখানে তারা তাদের এক ধরনের পরিচিতির স্বাক্ষর রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আসলে অনেক বড়, এবং সেই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা রাষ্ট্রীয়ভাবে চালিত নয়। যে কারণে, উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ সম্পর্কে বলা সবসময় খুব কঠিন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ঘটনা ঘটে প্রায়শই তৃতীয় পক্ষ, তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে এবং এটি প্রায়শই ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কেনাকাটার মাধ্যমে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ধরনটাই এমন, কিংবা এটা এমন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংস্থা বা একটি ইউরোপীয় সংস্থা নির্মাণ কাজ বা উত্পাদন করছে, বা…একটি বাংলাদেশী কোম্পানি উত্পাদনের কাজটি করছে। আর সে কারণেই বিনিয়োগের প্রশ্নে আপনাকে বুঝতে হবে যে…যে কোন বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় চালক এবং প্রায়শই সবচেয়ে বড় উত্স…(বলা যায়) শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগের চূড়ান্ত উত্স যুক্তরাষ্ট্র, এটা এমনভাবে ঘটছে যা আপনি সবসময় ডাটা বা তথ্য-উপাত্তে যেভাবে ঘটছে হুবহু সেভাবে দেখতে পাবেন না।
তবে, আমি মনে করি না যে, এখানে কোনও বিরোধ আছে। সত্যি বলতে কী, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক, অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এবং কোন কিছু উচ্চ-পরিচিতিমূলক হওয়া মানেই, হতে পারে সেতু বা বড় একটা কিছু যেখানে “চীন” এর নাম রয়েছে, তার অর্থ এই নয় যে, এটা এমন একটা কিছু যা আপনার ভবিষ্যতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই বিষয়টি নিয়ে আমরা অত্যন্ত, খুবই আশাবাদী। এটা এমন একটা কৌশল যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রবাহ তৈরিতে সবচেয়ে অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে আমরা যতোটা সম্ভব যোগাযোগ বা কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি। এবং এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এটাই অর্জন করতে চাই। আমরা একটা স্বাভাবিক, জবরদস্তিহীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই, যেখানে আমাদের অংশীদার দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং কর্মের স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় থাকবে।
মিস ওয়াগনার: এবং, আমি এখানে একটু যোগ করে বলতে চাই যে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ইন্দো মানে ভারত মহাসাগর, এর দ্বারা রাষ্ট্র ভারতকে বোঝানো হচ্ছে না। এবং আমি মনে করি যে (ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে) ভারতের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে; কিন্তু এটা খুব, খুবই স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ তার নিজের অধিকার ও নিজস্ব স্বতন্ত্র বিদেশ নীতি, তার নিজস্ব বৈশ্বিক স্বার্থের ভিত্তিতে আঞ্চলিক ও বিশ্ব পরিসরে একটি নেতৃত্বশীল দেশ, এবং এ সকল কিছুর ভিত্তিতেই বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে উল্লেখিত আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গিকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
তাই, আপনারা বলতে পারেন, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অধীনে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। একইসঙ্গে আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন কাজ নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত, উদাহরণস্বরূপ, আমাদের জ্বালানী প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিকগণ ও এখানে বসবাসকারী মানুষেরা উন্নত বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে, আমাদের স্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারছে, বাংলাদেশের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে আমরা কোভিড মোকাবেলায় যৌথভাবে কাজ করেছি। দুঃখিত (শুনতে খারাপ শোনালেও), বাংলাদেশে কর্মরত আমার অনেক সহকর্মীর মতো, আমিও আসলে বাংলাদেশে আসার জন্য তদবির করেছি; কারণ আমি মনে করি যে এখানে কাজ করার অবিশ্বাস্য রকমের সুযোগ রয়েছে। এবং এখন এটি খুব, খুবই একটা উদ্দীপনাময় সময়, সকলে মিলে একটি মুক্ত এবং অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একসাথে কাজ করার জন্য, এবং আমরা বিশ্বাস করি যে শুধু ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের সকল দেশের সমৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
মডারেটর: আজকের এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের বক্তাদের ও অংশগ্রহণকারী (সাংবাদিকদের)-দের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমি দুঃখিত যে, আমাদের নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারছি যে, (সময়ের অভাবে) আপনারা অনেক প্রশ্নই করতে পারেননি। আপনাদের মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাই। আরো একবার ধন্যবাদ জানাই ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লরা স্টোন এবং মিশন উপ-প্রধান জোয়েন ওয়াগনারকে। ঢাকায় যারা আছেন, সবাইকে শুভ সন্ধ্যা এবং শুভ অপরাহ্ন এখানকার সবাইকে।
মিস ওয়াগনার: ধন্যবাদ । আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ.
ডিএএস স্টোন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।