শেয়ার আমেরিকা
লিখেছেন নোয়লানি কির্শনার – ২৭ এপ্রিল ২০২০
করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সারা বিশ্বের মানুষই তাঁদের নিজ নিজ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানে উৎসাহিত হচ্ছে।
এমনই দেশীয় চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে কিছু রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট এর বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ যারা তাদের নেতৃত্ব ও দক্ষতা দিয়ে অভাবীদের সহায়তা করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম (আইভিএলপি) যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্পমেয়াদী সফরের সুযোগ দানের মাধ্যমে বর্তমান ও উদীয়মান বিদেশী নেতৃবৃন্দকে আমেরিকার অনুরূপ ব্যক্তিবর্গের সাথে সংযুক্ত করে থাকে। লন্ডনের আইভিএলপি হিডেন নো মোর-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী জেসিকা ওয়েড (উপরে) স্বদেশ ও বিদেশে পরিবর্তন আনতে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছেন।
লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের ব্রিটিশ পদার্থবিদ ওয়েড, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস ভলান্টিয়ার রেসপন্ডারস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রচার করেন এবং সেখানে যুক্ত আছেন। প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে সমাজের সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত করে দেয়।
সাড়া প্রদানকারী হিসাবে ওয়েড ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দেন, ফোন করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বয়স্ক মানুষদের খোঁজ-খবর নেন এবং অন্যান্যদেরকে হাসপাতালে সাক্ষাতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করে দিতে সহায়তা করেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে আইভিএলপি জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমাকে আরো উত্তম ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। সেই ভ্রমণে আমেরিকার মানুষেরা আমাকে প্রতিদান দেয়া ও স্বেচ্ছাসেবার গুরুত্ব শিখিয়েছে।”

ফাতেন খালফাল্লাহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি কার্যক্রম টেকউইমেন-এর প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এই কার্যক্রমের আওতায় স্টেম (STEM) ক্ষেত্রে আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নারী নেতৃবৃন্দকে সহায়তা দেয়া হয়। খালফাল্লাহ যখন ইটালিতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা শোনেন, তখনই তিনি জানতেন এই রোগ তাঁর দেশ তিউনিসিয়াতে বিস্তার হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এর আগেও খালফাল্লাহ ফার্স্ট স্কিলস ক্লাব নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যারা তিউনিসিয়ার যুবসমাজকে মোবাইল অ্যাপস, রোবোটিক্স, ইলেকট্রনিক্স এবং থ্রিডি প্রিন্টিং শেখায়। দলের থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে খালফাল্লাহ তাঁর স্বামীকে নিয়ে পর্যায়ক্রমিক ১২ ঘণ্টার কর্মকাল ধরে স্ফ্যাক্স অঞ্চলের স্থানীয় চিকিৎসা সেবাদানকারীদের জন্য মুখের মাস্ক এবং অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণ প্রস্তুত করেন।
২৪ মার্চ তিনি যখন শুরু করেন তখন তাঁর লক্ষ্য ছিলো ১,০০০ মাস্ক তৈরি করা। এখন সেই সংখ্যা প্রায় ২,০০০। তিনি বলেন, “এখন আমার লক্ষ্য হলো ৫,০০০ মুখের মাস্ক এবং ৫০০ সুরক্ষা স্যুট তৈরী করা।”

এলিজা অ্যাডো হলেন ইয়াং আফ্রিক্যান লিডারস ইনিশিয়েটিভ (ওয়াইএএলআই) রিজিওনাল লিডারশিপ সেন্টারের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এই নেতৃত্ব বিকাশ কেন্দ্রে তরুণদেরকে উদ্যোক্তাসুলভ দক্ষতা, সুশীল সমাজ ব্যবস্থাপনা ও জননীতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যাতে তারা তাদের সমাজে সফলতা পায়।
কোভিড-১৯’ এর কারণে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হবার ফলে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে খাবার পায় সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সচেষ্ট রয়েছেন অ্যাডো।
অ্যাডো হলেন ফুড ফর অল আফ্রিকা নামে একটি পুরস্কার বিজয়ী খাদ্য-পুনরুদ্ধার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। এই কোম্পানি পুরো ঘানা জুড়ে ৫,০০০-এর বেশী মানুষকে খাবার প্রদান করে। তিনি তাঁর দেশে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষদেরকে সহায়তা প্রদানের জন্য ফুড ফর অল কোভিড-১৯ কমিউনিটি ইমার্জেন্সি ইন্টারভেনশন কার্যক্রম শুরু করেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাডোর কোম্পানি কোভিড-১৯’এর হুমকির মধ্যে খাবার ও মৌলিক চাহিদা পূরণে ঘানার নিম্ন আয়ের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সমস্যার প্রেক্ষিত বিষয়ে জরিপ করে। শিকাগো ভিত্তিক গ্লোবাল ফুড ব্যাঙ্কিং নেটওয়ার্ক, ঘানা ফুড মুভমেন্ট এবং ফুড অ্যান্ড বেভারেজ অ্যাসোসিয়েশন অফ ঘানা’র সহায়তায় ২২ মার্চ তারিখে অ্যাডো এই কার্যক্রম উদ্বোধন করতে সক্ষম হন।
অ্যাডো বলেন, “ওয়াইএএলআই এবং যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন থেকে আমি যে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেয়েছি সেটা আমাকে নেতা হিসাবে মৌলিক সহায়তা দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের সৃষ্ট প্রভাব এই ভিত্তির ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে।”