শেয়ার আমেরিকা
লিখেছেন লরেন মনসেন – ১৮ জুন ২০২০
জুনটিনথ বা ১৯শে জুন হলো যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথার অবসান স্মরণে ঘোষিত একটি বার্ষিক ছুটির দিন।
১৮৬৫ সালের এই দিনে টেক্সাসে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। ঘটনাটি ঘটে ১৮৬২ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট লিংকন ঘোষিত মুক্তি সনদের প্রায় তিন বছর পর।
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধকালে জোটের অংশ থাকলেও টেক্সাস লিংকন ঘোষিত মুক্তি সনদ উপেক্ষা করে আসছিলো। তাই টেক্সাসের অধিবাসীদের জন্য মুক্তি সনদ ঘোষণার জন্য আর্মি জেনারেল গর্ডন গ্র্যাঞ্জার ২,০০০ ফেডারেল সৈন্য নিয়ে টেক্সাসের গ্যালভেস্টন বন্দরে পৌঁছান।

১৯শে জুন ১৮৬৫, গ্যালভেস্টনের অ্যাশ্টন ভিলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্র্যাঞ্জার জনসমক্ষে “সাধারণ আদেশ নং ৩”-এর অংশ পাঠ করেন যার শুরুতে বলা হয়েছিলো, “টেক্সাসের জনগণকে অবহিত করা হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহীর পক্ষ থেকে ঘোষিত সনদ অনুযায়ী সকল ক্রীতদাস মুক্ত।”
গ্যালভেস্টনের পূর্বতন ক্রীতদাসেরা রাস্তায় আনন্দোল্লাস করে।
ঐতিহ্য হিসাবে আগামী বছর থেকে টেক্সাসে জুনটিনথ উদযাপন শুরু হবে। ইতিহাসবিদ হেনরি লুই গেটস জুনিয়র শেয়ারআমেরিকা’কে বলেন, “প্রথম দিকে এর বাস্তব বিষয় ছিলো পারিবারিক পুনর্মিলন। তারপর থেকে এখন এটি কালো মানুষদের সমবেত হওয়ার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
টেক্সাসের পূর্বতন ক্রীতদাসদের জীবনে গ্র্যাঞ্জারের আদেশের সাথে সাথেই পরিবর্তন চলে আসেনি। গেটস বলেন, “দাসমালিকেরা এই সংবাদ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত যথাসম্ভব কালক্ষেপণ করেছে এবং তাদের অনেকে শেষ দান জেতার চেষ্টা করেছে।” তাছাড়া গৃহযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সদ্য দাসত্বমুক্ত লক্ষ লক্ষ আফ্রো-আমেরিকান মানুষদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ফেডারেল এজেন্সি, ফ্রিডমেনস ব্যুরো’র প্রতিনিধি গ্র্যাঞ্জারের আদেশের কয়েক মাস পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেক্সাসে পৌঁছাতে পারেনি।”
গেটস বলেন, “পূর্বতন দাসদের মধ্যে যারা নিজ দায়িত্বে তাদের মালিকদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে তারা প্রায়শই তাদের তথাকথিত অপরাধের জন্য হত্যাসহ ভয়ানক শাস্তির মুখে পড়েছে। নির্মম এই প্রতিশোধ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, টেক্সাসের শেতাঙ্গরা কালোদের স্বাধীনতা মেনে নেবে না এবং এর মাধ্যমে আরো নির্যাতনের আভাস দিয়েছে।”
টেক্সাসে বিপর্যয় ও সহিংসতা সত্ত্বেও সদ্য দাসত্বমুক্ত মানুষেরা ১৯ জুনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়ের বার্ষিক উপলক্ষ্যে পরিণত করে।
ছুটিতে রূপান্তর
১৮৬৬ সালে হাউসটনের দাসত্বমুক্ত মানুষেরা যখন প্রথম জুনটিনথ পালনের পরিকল্পনা করছিলো তখন নগরের দ্রুত বর্ধমান বর্ণ-বিভাজন আইনবলে তাদেরকে সরকারী পার্ক ব্যবহারে বাধা দেয়া হয়। কিন্তু ১৮৭০ সাল নাগাদ তারা ৮০০ ডলার তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে ১০ একর (চার হেক্টর) জমি ক্রয় করে সেটিকে ইম্যানসিপেশন পার্ক হিসাবে নামকরণ করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাউসটন সিটি কাউন্সিল পার্কটিকে ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৯ সালে সংস্কারকৃত ইম্যানসিপেশন পার্কটিকে এখনো জুনটিনথ উদযাপনের স্থান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো, দাসত্বের প্রভাব তুলে আনার জন্য পার্কটি ইউনেসকো’র স্লেভ রুট প্রজেক্টের স্থান হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
আজ জুনটিনথে ৪৬টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়াতে ছুটির দিন। দিবস উদযাপনের অংশ হিসাবে পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে প্রায়শ মুক্তির সনদ পাঠ, ধর্মীয় প্রার্থনা ও আধ্যাত্মিক গান পরিবেশিত হয়।

গেটস বলেছেন, “তৃণমূলের আন্দোলন কীভাবে তার নিজ ইতিহাস কাঁধে নিয়ে কল্যাণকর পরিসমাপ্তিতে পৌঁছাতে পারে তার অন্যতম উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের জুনটিনথ। দাসত্বমুক্তির পর থেকে আমরা কতটা অগ্রসর হতে পারলাম বা কতটা ব্যর্থ হলাম? কীভাবে আমরা আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদেরকে তাদের ইতিহাসের তাৎপর্যটি বোঝাতে পারি? আমাদের আগে যারা এসেছেন এবং অসম্ভব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমাদের জন্য নিখুঁত না হলেও আজকের এই জীবন উপহার দিয়ে গেছেন তাঁদেরকে আমরা স্মরণ করতে পারি। জুনটিনথ আমাদেরকে সেই অতীত ফিরে দেখা ও ভবিষ্যত রচনার সুযোগ করে দিয়েছে।