যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য বিষয়ে যৌথ বিবৃতি

ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটর মুখপাত্র কর্তৃক ০৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে প্রদত্ত এই বিবৃতি প্রেরণ করছে।
বিবৃতিটি এখন অনুবাদের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং অনুবাদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এটি দূতাবাসের বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট ও দূতাবাসের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট

মুখপাত্রের কার্যালয়


অবিলম্বে প্রকাশের জন্য
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
৫ অক্টোবর ২০২০

 

লেখার শুরু:

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি, কিথ ক্র্যাখ এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমপি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরো এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে একটি ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করেন। উচ্চ পর্যায়ের এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি যৌথভাবে বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন।

১। শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, দৃঢ়তর বন্ধন

সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়েরই একটি মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন রয়েছে যেখানে সকলের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্র দু’টি একত্রে কাজ চালিয়ে যাবে। সভাপতিদ্বয় কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এর মাধ্যমে এই দুই বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো জোরদার করার সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

২। নিরাপদ অর্থনীতির জন্য জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা

সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য নারী ও শিশুসহ, জনশক্তি ও সাধারণ জনগণের জন্য অধিকতর সুরক্ষার প্রয়োজন হবে। আর সেজন্য দ্বিপাক্ষিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতাকে আরো জোরদার করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রস্তুতি নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতা ও সক্ষমতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তাঁরা দুই সরকার কর্তৃক একটি যৌথ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সেবা দল গঠনের সুপারিশ করেন। এই দলটি অনতিবিলম্বে এবং পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে বৈঠক করবেন; এবং (১) চিকিৎসা শিক্ষা (২) দক্ষতা বৃদ্ধি (৩) প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা (৪) বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করার উপায় খুঁজতে কাজ করবেন। দুই পক্ষই মনে করেন যে, এরূপ যৌথ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সেবা দলের তৈরি কৌশল আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

৩। চাহিদা বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য বিনিয়োগ

অবকাঠামো ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ খাতে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কৌশল পর্যালোচনাপূর্বক বাংলাদেশ পক্ষ জানায় যে, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি বাণিজ্য ও পাট সম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার সুফল বয়ে আনতে পারে। কেননা এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পলিথিনজাত পণ্য ব্যবহারে ফলে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে। সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন যে, উদ্ভাবনী উদ্ভিদ প্রজনন প্রযুক্তি, বিজ্ঞানভিত্তিক মান নির্ধারণ এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণের মূলনীতিসহ অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে সহযোগিতা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে যাতে একুশ শতকের কৃষি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় এবং গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।

দুই সরকারের মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (TICFA) কাউন্সিল সভায় বাংলাদেশ পক্ষ বলেছে যে, দেশের অর্থনৈতিক এলাকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির বিনিয়োগকে তাঁরা স্বাগত জানাবে। প্রতিযোগিতামূলক অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি এবং বীমা বাজার উদারীকরণের মত চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া বিষয়ে অংশীদারদের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ, বর্তমানে সহজলভ্য সকল বিধিমালা ও বিলগুলোর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ এবং উৎসে মুনাফা পাঠানোর ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনসহ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশের অব্যাহত উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় সভায়। সভায় অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন যে, সরকারী ক্রয় বিধিমালা অনুসরণে ন্যায্য ক্রয় প্রক্রিয়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরো সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। সভায় অংশগ্রহণকারীরা এসব বিষয়ে পারস্পরিক সুবিধার জন্য উভয় দেশের সরকারকে একসাথে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।

মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টিতে USTDA ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (Ex-Im)-এর ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়- যার মাধ্যমে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ও চুক্তির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশ পক্ষ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈদেশিক বাণিজ্যিক সেবা অফিস খোলার আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে। তাছাড়া শুল্ক প্রশাসন, কৃষি এবং অন্যান্য বাণিজ্য খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আঞ্চলিক সংযোগ এবং বাণিজ্য নীতি ও কর্মপদ্ধতি বিষয়ে সচেতনতা ও স্বচ্ছতাসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এমন একটি ইউএসএআইডি প্রকল্প চলমান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সাধুবাদ জানানো হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন, দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ অর্থায়ন চর্চা এবং সকলের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেরা চর্চাগুলো অনুসরণের গুরুত্ব উল্লেখ করেন।

সভায় ভোক্তাদের নকল বা লাইসেন্সবিহীন পণ্যের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করার জন্য কার্যকর আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেন যে, আইএলও’র সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ শ্রম আইন, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আইনসহ শ্রম খাতের সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা যেতে পারে।

উভয় পক্ষই তুলা ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের স্থিতিশীল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে তাঁদের পারস্পরিক আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং উভয় সরকারকে এই বিষয়ে কাজ অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করেন।

৪। সুসংহত ডিজিটাল নীতিমালা

সভার অংশগ্রহণকারীরা বাণিজ্য ও যোগাযোগ তরান্বিতকরণে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ ইন্টারনেটের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তথ্য ও উপাত্তের আন্তর্দেশীয় প্রবাহ সহজতর করতে একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক ভিত্তিক উদ্ভাবনী ডিজিটাল পরিবেশের ওপরও তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।

ফোর-জি সংযোগের আরো সম্প্রসারণ এবং ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ও সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে উভয় দেশ যখন আরো অগ্রসর হচ্ছে এমন প্রেক্ষাপটে অংশগ্রহণকারীরা উভয় দেশের সরকারকে টেলিযোগাযোগ নিরাপত্তার জন্য তথ্য বিনিময় বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সংলাপের জন্য উৎসাহিত করেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (CLDP) কর্তৃক এই বিষয়ক আইন ও নীতিমালা বিষয়ে বাংলাদেশকে দেয়া কারিগরি সহযোগিতার প্রশংসা করেন।

৫। সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে তৃতীয় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন ব্লু ইকোনমি মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্স আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। উভয় পক্ষই ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির জন্য সুসংহত বিজ্ঞান, উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা, কার্যকর প্রয়োগ, অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মতো প্রতিটি বিষয়কে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, উভয় সরকার জ্ঞান, উপাত্ত ও নতুন ধারণা, বৃহত্তর সক্ষমতা সৃষ্টি এবং পেশাগত সহযোগিতা জোরদারদারকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে একত্রে কাজ করবে। বাংলাদেশ পক্ষ আশা প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ সরকারকে কৃত্রিম উপগ্রহ অথবা SONAR ভিত্তিক মৎস্য শনাক্তকরণ প্রযুক্তি এবং মৎস্য/সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি প্রদান করবে।

যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ এগ্রিমেন্ট অন পোর্ট স্টেট মেজারস শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি পক্ষ হিসাবে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমে বেআইনি, অজ্ঞাত ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও অন্যান্য পক্ষ উপকৃত হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।

৬। জ্বালানি ও বাংলাদেশের উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা

সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। আঞ্চলিক সংযোগ উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্থিতিশীল বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন তাঁরা। বাংলাদেশ পক্ষ এই খাতে এশিয়া এজ (এনহান্সিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ থ্রু এনার্জি) শীর্ষক সম্পূর্ণ সরকারী উদ্যোগের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট, এনার্জি, কমার্স এবং সেইসাথে ইউএসএআইডি ও USTDA’র সহায়তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশে জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্যকর ও দূষণমুক্ত প্রাথমিক জ্বালানি হিসাবে এলএনজি’র ব্যবহার প্রসারের সম্ভাবনা যাচাইয়ে দুই রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের একত্রে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেন অংশগ্রহণকারীরা।

বাংলাদেশে এলএনজি’র ব্যবহার প্রসারের প্রাথমিক পর্যায়ে এক্সেলারেট এনার্জি ও শেনিয়ার এনার্জির মত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কোম্পানির ভূমিকার প্রশংসা করা হয় সভায়। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিষয়ক অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, এক্ষেত্রে এই দুই দেশের সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি পাবে। অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত এলএনজি’র প্রথম চালান ইতোমধ্যে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। সভায় আরো বলা হয় যে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মহেশখালী দ্বীপে ৩,৬০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি কমবাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালে GE ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বোর্ডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। উভয় পক্ষ কাজটি অব্যাহত রাখবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

সভায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি কোম্পানিগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন; আরো সাশ্রয়ী, দক্ষ ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবার ব্যবহার বৃদ্ধি; এবং বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী জ্বালানী সরবরাহ প্রাপ্তির সুযোগ ত্বরান্বিত করতে জ্বালানি খাতে একটি স্থায়ী সংলাপ আয়োজনের সম্ভাব্যতা খুঁজে দেখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ পক্ষে এই সংলাপের নেতৃত্ব দিতে পারে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স বিভাগ এশিয়া এজ এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কিং গ্রুপ নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ সেবাকেন্দ্র বা ‘ওয়ান স্টপ শপ’ তৈরি হবে যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত এশিয়া এজের আন্তঃসংস্থা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারবে ও আঞ্চলিক বাজারগুলোর সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির গুরুত্ব স্বীকারপূর্বক বাংলাদেশ পক্ষ উল্লেখ করেন যে, ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবের (NREL)’র সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইউএসএআইডি NREL’র বায়ু সম্পদ বিষয়ক গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এই গবেষণার ফলে উন্নত জ্বালানি ব্যবস্থার প্রসার, জ্বালানি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউএসএআইডি’র এশিয়া এজ কার্যক্রমের আওতায় ১৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের দশ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ পক্ষ আরো উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট ব্যাটারি স্টোরেজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এডপশন প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির গুরুত্ব নিরূপণে এবং সাউথ এশিয়া কার্বন ক্যাপচার প্রকল্পের আওতায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবেশগত প্রভাব হ্রাসে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

৭। সংযোগ জোরদারকরণ

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সাধুবাদের সাথে উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ওপেন স্কাইস এয়ার ট্রান্সপোর্ট চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশের (CAAB) মধ্যে অব্যাহত ইতিবাচক সম্পর্ক FAA’র আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন নিরাপত্তা মূল্যায়ন (IASA) কর্মসূচিতে ক্যাটাগরি-১’এ অবস্থান ফিরে পেতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বিরতিহীন যাত্রীসেবা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই যৌথ সম্পৃক্ততা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ICAO) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা মান অনুযায়ী বিমান চলাচল বিষয়ে একটি কার্যকর নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নে CAAB’র প্রচেষ্টার জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশ পক্ষ বলেছে যে, বাংলাদেশ সরকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক সর্বশেষ উড্ডয়ন বিমানবন্দর (last point of departure airport) হিসাবে দেখতে আগ্রহী। সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, এসব লক্ষ্য অর্জনে উভয় দেশের সরকার অব্যাহতভাবে একত্রে কাজ করবে এবং এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (বিমান) এবং বোয়িং-এর মধ্যে দীর্ঘকালীন অংশীদারিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০০৮ সালের একটি চুক্তির পর বিমানের কাছে ১০টি বাণিজ্যিক বোয়িং বিমান সরবরাহের প্রশংসা করা হয়।

বাংলাদেশ পক্ষ জানিয়েছে যে সরকার তাদের ডেল্টা ২১০০ শীর্ষক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ শ্রেণীর উন্নতমানের ড্রেজার ক্রয় করবে। বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে USTDA একটি সহায়ক বাণিজ্য মিশন ঘোষণা করেছে যার আওতায় ড্রেজিং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা চর্চা এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রত্যক্ষ করার জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশ পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখবে যেখানে সরকার সবার জন্য সমান ক্ষেত্র নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশ পক্ষ চট্টগ্রাম বন্দরে যানজট কমাতে ও পদ্ধতিগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিবরণ দেন। তাঁরা জানান যে, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কন্টেইনার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ঈগল-রেল কর্তৃক প্রযুক্তিগত-অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে স্বয়ংক্রিয় ওভারহেড কন্টেইনার ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া উন্নয়নের মাধ্যমে জট কমানো, দূষণ হ্রাস এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। উক্ত সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপের ফলাফল একটি জাতীয় কর্মশালায় উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য দেশের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলে মিটার গেজসম্পন্ন রেলপথে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ৭০টি লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি অর্থায়ন চুক্তি সম্পন্ন করায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে। বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩৯ মিলিয়ন ডলার প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন ও জটিল যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে প্রগ্রেস রেল নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি। সভায় উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে নিরাপদ ও সুদক্ষ রেল ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় রেলওয়ে বিশেষজ্ঞ ও রেলওয়ে সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের সাথে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশলীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে USTDA।

৮। উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আলোকে সভায় অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেন যে, ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আরো বাড়ানো জরুরী। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আরো দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেন যে, বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে তারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরো টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে সক্ষম হবেন। তাঁরা মনে করেন, এসব সহযোগিতার লক্ষ্য হবে উন্নত সরকারী আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা; শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা; রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত নাজুক বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের জন্য অব্যাহত সহায়তা প্রদান; এবং পানি ও জ্বালানী নিরাপত্তা, টেকসই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, বনজ সম্পদ এবং মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সমন্বয় জোরদার করা।

অংশগ্রহণকারীরা সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে ও বাইরে উচ্চ পর্যায়ের এবং বিশেষত বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষে’ (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উষ্ণ আদান-প্রদানের প্রশংসা করেছেন। অংশগ্রহণকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, এই দুই বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার রাজনৈতিক এবং উর্ধ্বতন সরকারী পর্যায়ে সহযোগিতা আরো গভীর ও মজবুত করবে। কোভিড-১৯’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উপায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধার বিষয়েও তারা একসাথে কাজ করবে বলে সভায় আশা প্রকাশ করা হয়।

ভার্চুয়াল সভাটি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, এবং অংশগ্রহণকারীরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সভার উপসংহার টানেন যে, উভয় সরকার আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেবে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থবহ সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকবে।

লেখা সমাপ্ত।