ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ১৫ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবারে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট’র মুখপাত্রের এই বিবৃতিটি প্রচার করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট
মুখপাত্রের দফতর
অবিলম্বে প্রচারের জন্য
মিডিয়া নোট
১৫ অক্টোবর, ২০২০
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার’র যৌথ সংবাদ বিবৃতি নিম্নরূপ:
পাঠ শুরু:
- রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জরুরী মানবিক সহায়তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসমূহের সম্মেলন
- রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর জন্য সহায়তা উৎসাহিত করতে আগামী ২২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা যৌথভাবে দাতা সংস্থাসমূহের অংশগ্রহণে একটি সম্মেলনের আয়োজন করবে।
- এই সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রমে অর্থায়নের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে যা এ বছর এখন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
রোহিঙ্গা শরণার্থী, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং মায়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দানের লক্ষ্যে অতি জরুরী এই অর্থায়ন প্রদানের জন্য যৌথ আয়োজকেরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এ মাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রে নিয়ে আসবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া এই সংকটের সর্বসাম্প্রতিক পর্যায়ে তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে একটি সম্মেলনে রোহিঙ্গা শরণার্থী, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও মায়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তার পরিমাণ আগের তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেয়া পরিমাণের চেয়ে বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে তাগিদ দেবে।
এবছর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক চাহিদা পূরণে জাতিসংঘ আরো ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত এই সহায়তার পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ফলে অর্থায়নে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে যা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আগামী ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের লক্ষ্য হলো নিজভূমি মায়ানমারের অভ্যন্তরে বা বাইরে অবস্থানরত নাজুক ও বাস্তুহারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরী তহবিল গঠন। গঠিত তহবিলের আওতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল জুড়ে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরী সেবা কার্যক্রমেও সহায়তা দেয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনটির মাধ্যমে যৌথ আয়োজকদের জন্য এমন একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্যান্য বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য এই সংকটের টেকসই সমাধান হিসাবে তাদের নিজ দেশে বা পছন্দসই স্থানে স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফিরে যাবার আবশ্যকতার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা সম্ভব হবে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে অস্ত্র সংবরণ ও যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সকল অভাবী জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বিষয়ে যৌথ আয়োজকেরা মহাসচিবের আহ্বানেরই পুনরুক্তি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট স্টিফেন ই. বিগান বলেন:
“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংকট মোকাবেলায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্যান্য বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই সহায়তা প্রদান এবং সেইসাথে আশ্রয়দানকারী জনসমাজের ক্ষতি পোষাতে বিনিয়োগ জোরদার করার আহবানে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার’র সাথে অংশীদার হিসাবে থাকতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। বিশ্বের সবচেয়ে উদার দাতাদেশ হিসাবে আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনুঘটক হিসাবে কাজ করি এবং এই সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার ও সেইসাথে নতুন ও প্রতিশ্রুতিশীল দাতাদেশসহ অন্যান্য সবাইকে তহবিল প্রদানের আহ্বান জানাই।”
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাব বলেন:
“ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হয়ে এবং কল্পনাতীত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এই সুপরিকল্পিত সহিংসতার হোতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এই অপরাধের জন্য আমরা তাদেরকে অব্যাহতভাবে দায়ী করে যাবো।”
“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকট নিরসনে অন্যতম প্রধান দাতাদেশ হিসাবে যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে আসছে। তাদের দুর্দশার মাত্রা অনুধাবনপূর্বক সারা বিশ্বকে জাগ্রত হতে হবে এবং জীবন বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনার জ্যানেন লেনার্সিক বলেন:
এই সংকটময় কালে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অব্যাহতভাবে পূর্ণ সহায়তা পেয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবে স্থানীয় পর্যায়ে ও আশ্রয়দানকারী কমিউনিটিতে কর্মরত মানবিক সহায়তা সংস্থাসমূহ প্রকৃত সংহতি নিয়ে সাড়া দিয়েছে। আমরা মানবিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম এবং স্থিতিশীলতার জন্য আরো বেশী সহায়তার আহ্বান নিয়ে এগিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই সমাধানে পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করা আবশ্যক।”
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন:
“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশের অর্থ শুধু তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো নয়। অন্য সকলের মতো শরণার্থীদেরও রয়েছে সম্মানজনক জীবন এবং নিরাপদ ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পাবার অধিকার।”
২০১৭ সালে আগস্ট মাসে মায়ানমার থেকে সর্বশেষ বিতাড়নের পর থেকে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৮৬০,০০০ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও অতিরিক্ত প্রায় ১৫০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যেও আনুমানিক ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অনেক বাস্তুহারা রোহিঙ্গা প্রান্তিক জীবনযাপন করছে যাদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, নির্ভরযোগ্য খাদ্য সরবরাহ বা অর্থবহ কাজ ও শিক্ষার সুযোগ নেই। কোভিড-১৯’র ফলে তাদের জীবনযাত্রা আরো খারাপ হয়েছে, সেবা গ্রহণের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যৌন ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্পাদকদের জন্য জ্ঞাতব্য:
- সম্মেলনটি আগামী ২২ অক্টোবর ২০২০ তারিখে ওয়াশিংটন সময় সকাল ৮:০০ টা থেকে ১০:৩০ টা, জেনেভা সময় বেলা ২:০০ টা থেকে বিকাল ৪:৩০ টা, এবং ব্যাংকক সময় সন্ধ্যা ৭:০০ টা থেকে রাত ৯:৩০ টা পর্যন্ত চলবে। সম্মেলনটির সরাসরি সম্প্রচার হবে www.rohingyaconference.org থেকে।
- সম্মেলনে গঠিত তহবিল মায়ানমারের অভ্যন্তরে, পুরো আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (JRP)’র আওতায় এই সংকট নিরসনে কর্মরত সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক ও বেসরকারী সংস্থাগুলোকে প্রদান করা হবে।