যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শিক্ষায়তনে স্বাধীনতার সুরক্ষা দিয়ে থাকে

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম ক্যাম্ববেল (ডানে) ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সাথে কাজ করছেন। (© বিল ডেনিসন/ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়/গেটি’র ছবি)

শেয়ারআমেরিকা – ২৫ মার্চ ২০২০

আমেরিকায় অবস্থিত পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিযোগিতা করে থাকে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে? এর অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হলো শিক্ষায়তনের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার।

১৯৪০ সালে নাৎসি আগ্রাসনে যখন সারা বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলের স্বাধীনতা হুমকির মধ্যে পড়েছিলো তখন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধ্যাপকদের সমিতি (AAUP) থেকে ঘোষণা করা হয় যে, “সত্যানুসন্ধানে অগ্রগতি সাধনের মূল ভিত্তি হলো গবেষণার স্বাধীনতা।”

AAUP থেকে আরো বলা হয়, “সাধারণের কল্যাণ নির্ভর করে সত্যানুসন্ধানের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন প্রকাশের ওপর।”

মহৎ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধনে সত্যানুন্ধানকারী মুক্তমনাদের দায়িত্ব রয়েছে। পদার্থ বিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও রসায়ন শাস্ত্রে দেয়া মোট নোবেল পুরস্কারের প্রায় অর্ধেক এবং অর্থনীতিতে দেয়া মোট নোবেল পুরস্কারের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই আমেরিকার। পুরস্কার বিজয়ীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আমেরিকার অভিবাসী যারা আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত।

স্বাধীন অধ্যয়ন, শিখন, সহযোগিতা ও প্রকাশনা চিন্তাশীল মহান ব্যক্তিদেরকে উদ্ভাবনের দিকে চালিত করে যা আমাদের সকলের জন্য সুফল বয়ে আনে।

শিক্ষায়তনে স্বাধীনতার প্রতিবন্ধকতা কী?

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ও গবেষণা উদ্যোগগুলোর মূল ভিত্তি হলো প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা। এটি সারা বিশ্বের শিক্ষায়তন খাতের একটি সাধারণ মান এবং এর সুরক্ষা প্রয়োজন। যেসব দেশে এই সাধারণ মানের অগ্রাধিকার নেই তারা আসলে হুমকি, চৌর্যবৃত্তি এবং ভয়ভীতি ছড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষায়তনের স্বাধীনতার ক্ষতি করছে। আর তারা এটা করছে কেবল তাদের সামরিক ও গোয়েন্দা খাতের লাভের জন্য।

কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন থাকবে না যখন সরকার:

  • বিদেশে অধ্যয়নরত নাগরিকদেরকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার উপযোগী কোন সংবেদনশীল প্রযুক্তি বা জৈব উপাদান চুরি বা সহযোজনে বাধ্য করে।
  • গবেষকদেরকে সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা গোপন করতে নির্দেশনা দেয়।
  • বিদেশে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখে।
  • “রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল” কোন বিষয়ে গবেষণা কর্ম নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতার বিনিময়ে অর্থ দান করে।

তাহলে শিক্ষায়তনের স্বাধীনতা সুরক্ষায় আমেরিকার জনগণ কী করছে? সাম্প্রতিক মাসগুলোতে:

  • হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে বিদেশী সরকারের দেয়া অর্থ গোপন করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
  • শিক্ষার্থী ভিসা প্রত্যাশী বিদেশী একজন ছাত্রীকে তার সামরিক সংশ্লিষ্টতা এবং যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ে গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্য গোপন করায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
  • জৈব গবেষণার শিশি চুরি করে সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পাচারের প্রচেষ্টা নেয়ায় একজন গবেষণা শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
  • পোর্টল্যান্ড স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী তাদের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট কর্তৃক হানবান (চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান)-কে খুশী রাখতে “চীন সরকারের অপছন্দের বিষয়গুলো বাদ দেয়ার ঘটনা” জানার পর তাঁর বিদ্যাপীঠকে এই অনুষদ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছে।

আরো আগে, ১৯৮৯ সালে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীরা তিয়ানমেন স্কোয়ারে গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছিলো। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এসব শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরলে শাস্তি দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলো। কিন্তু উক্ত শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিশোধ থেকে সুরক্ষা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়লাভের সুযোগ দিতে কংগ্রেসে চীনা শিক্ষার্থী সুরক্ষা আইন প্রণীত হয়।

এ পদক্ষেপগুলো আমেরিকার শিক্ষায়তনে স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার অন্যতম পন্থা।

যুক্তরাষ্ট্র সবসময় এখানকার ক্যাম্পাসগুলোতে অন্যান্য দেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীদেরকে স্বাগত জানায় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বিনিময় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। বিভিন্ন ধারণা ও অন্তর্দৃষ্টি বিষয়ে মুক্ত সংলাপ থেকে সকলে উপকৃত হন। আর সেটাই হলো শিক্ষায়তনের স্বাধীনতা এবং আমাদের সকলের উচিত এর সুরক্ষা দেয়া।

“আমরা চাই মেধাবী ও তরুণ চীনা শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসুক… তবে তাদেরকে যেন বেইজিং-এর বিরাট হাতকে ভয় না পেতে হয়।” – সেক্রেটারি অফ স্টেট, মাইকেল আর. পম্পেও