যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট
অবিলম্বে প্রচারের জন্য ২০ মে ২০২০
টেলিফোন মাধ্যমে বিশেষ ব্রিফিং
রাষ্ট্রদূত অ্যালিস জি. ওয়েলস
ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো
সঞ্চালক: অভিবাদন, আমি আজকের ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের সাথে আছেন রাষ্ট্রদূত অ্যালিস ওয়েলস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী সচিব। রাষ্ট্রদূত ওয়েলস, আমাদের সাথে আজ যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, এবং আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি সূচনা বক্তব্য প্রদানের জন্য।
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: কলটিতে যোগ দেয়ার জন্য আমি আপনাকে এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। প্রশ্ন নেওয়ার আগে দশ মিনিট সময় নিয়ে আমি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান থাকাকালীন সময়ে, অর্থাৎ গত তিন বছরে অর্জিত কিছু সাফল্য নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। আলাপ শুরু করছি আফগানিস্তান নিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের সময় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের মূল্য বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শুধু করদাতাদের করের মূল্যই নয়, যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের ঝুঁকির কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে তার প্রথম দিকের কাজ ছিল একটি নীতি পর্যালোচনার নির্দেশ প্রদান। এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ এশিয়া কৌশল তৈরি হয়, এবং ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে তিনি এর ঘোষণা দেন। এ কৌশলের মূলনীতি এমন যে, যুদ্ধ শেষ হবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে, যুদ্ধের ময়দানে নয়। আমাদের মূলনীতি চালিত হবে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে- পাকিস্তানকে অবশ্যই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আফগানিস্তানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। প্রায় তিন বছর পরেও এই মূলনীতিগুলো আমাদের এগিয়ে যাওয়ার দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত খলিলজাদের নেতৃত্বে তালেবানদের সাথে এক বছর ধরে সরাসরি আলোচনার পর, ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। তালেবানরা এতে অঙ্গীকার করে যে, আফগানিস্তান আর কখনও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি হবে না। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাহিনীকে আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে তালেবানদের কর্মকাণ্ডকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছে এবং প্রয়োজনে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি বজায় রেখে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক সমঝোতার পরবর্তী পর্যায়ে উত্তরণ কঠিন ছিল। এ বিষয়ে আপনারা রাষ্ট্রদূত খলিলজাদের সরাসরি বক্তব্য শুনেছেন। সহিংসতার মাত্রা গ্রহণযোগ্য নয়, এবং এই সহিংসতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা তালেবানদের দায়িত্ব। আমরা যেহেতু রাষ্ট্রপতি ঘানি ও ডঃ আবদুল্লাহর সমন্বিত সরকার গঠনকে স্বাগত জানাচ্ছি, তখন এই চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আন্তঃ আফগান সমঝোতায় পৌঁছাতে কিছু দ্রুত পদক্ষেপ আমরা আশা করছি। আফগান সরকার ও তালেবানদের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, যেমন আইসিস-খোরাসানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে- দুঃখজনক হলো, গত সপ্তাহেও তাদের নির্মম ও অশুভ হামলা আমাদের দেখতে হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়া কৌশলে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। এতে পাকিস্তানকে তার মাটিতে সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতির জন্য দায়বদ্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই কৌশলে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে, বিশেষত যারা আফগানিস্তানের সংঘাতকে সমর্থন করে এবং যারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ- তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা স্থগিত করেন যার মাধ্যমে আমাদের সংকল্প প্রতিফলিত হয়েছে। তারপর থেকেই আমরা আফগান শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তালেবানদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখেছি। এই অঞ্চলকে হুমকির মুখে ফেলেছে এমন অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমন করার ক্ষেত্রেও পাকিস্তান কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে- যেমন লস্কর-ই তাইয়েবা নেতা হাফিজ সাঈদকে গ্রেফতার করা এবং সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন কাঠামো ভেঙে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা। এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের অঙ্গীকার বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আমরা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু প্রাথমিক অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি, বিশেষভাবে বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি।
এবার তাকাই ভারতের দিকে। শুধু দক্ষিণ এশীয় কৌশলের জন্যই নয়, বরং ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্দেশিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও দেশটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটি নেতৃত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিধানকারী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের উত্থানকে আমরা স্বাগত জানাই- এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সম্পর্ককে আরো গভীর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের যৌথ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে আমরা পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ২+২ মন্ত্রীপরিষদের সংলাপে যেমন দেখেছেন, কোয়াড পদ্ধতি পুনরুদ্ধারপূর্বক যৌথ মহড়ার মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য বৃদ্ধি, কাউন্টারটেরোরিজম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডায়লগের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহায়তা সম্প্রসারণ এবং মহাকাশ সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে ও গত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির সফর এবং গেল ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফর সত্যিই আমাদের নেতাদের ও দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতাকে তুলে ধরেছে।
বিগত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের উদার ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সহযোগীদের সাথে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ যথাযথভাবেই প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটে সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সর্ববৃহৎ একক অবদান রেখেছে। তবে বাংলাদেশ শুধুমাত্র শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানকারী রাষ্ট্র নয়, বরং এটি এমন একটি দেশ যা গত এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নে উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে দেশটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো নিবিড় হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও পরিচালন কাঠামোর প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে আমরা উৎসাহিত করছি- আমরা মনে করি, এতে পারস্পরিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমাদের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরো উন্নত হবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শ্রীলঙ্কাও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসাবে রয়েছে। ২০১৯ সালের ইস্টার সানডে’তে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর এই সহযোগিতার শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তখন তাৎক্ষণিকভাবে দোষীদের সন্ধান, দীর্ঘমেয়াদী পুনর্নির্মাণ এবং অব্যাহত সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পূর্ণাঙ্গ সহায়তা প্রদান করে। আমরা বিশ্বাস করি যে, শ্রীলঙ্কা সরকার ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, মীমাংসা এবং মানবাধিকারকে এগিয়ে নিলে দীর্ঘমেয়াদে দেশটির স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বাড়বে।
এবার একটু দক্ষিণ-পশ্চিমে তাকানো যাক, ২০১৮ সালে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত প্রশংসনীয় নির্বাচনের কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেয়। সংস্কারপন্থী রাষ্ট্রপতি সোলিহর নির্বাচনের পর থেকে আমরা মালদ্বীপের সাথে সহযোগিতা ও সহায়তা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছি- কেননা মালদ্বীপ তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধার করছে এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ড দ্বিগুণ করেছে।
হিমালয় সংলগ্ন অংশীদারদের সাথেও আমরা সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছি। নেপালকে একটি বহুরাজ্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে আমরা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে, প্রাক্তন উপসচিব সুলিভান ভুটানে একটি ঐতিহাসিক সফর সম্পন্ন করেন। এটি ছিল বিগত দুই দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী শাখা কর্মকর্তার ভুটান সফর।
তৃতীয় যে দিক-নির্দেশনা কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়নে আমি সহায়তা করেছি সেটি হলো মধ্য এশিয়ার জন্য প্রশাসনের নতুন কৌশল। মধ্য এশিয়া কৌশলটিতে মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সুদৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে। কৌশলটিতে মধ্য এশিয়া অঞ্চলে বৃহত্তর সংযোগ ও সহযোগিতা এবং আফগানিস্তানের সাথে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমরা দ্বি-পাক্ষিকভাবে কাজ করছি, সেইসাথে সি৫+১ গঠনেও কাজ করছি। ফেব্রুয়ারি মাসে সচিবের কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান সফর, সি৫+১ মন্ত্রীপরিষদের দু’টি সভায় অংশগ্রহণ, এবং সেইসাথে উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তানের সহযোগীদের সাথে নিয়ে উপসচিব হেইলের পরিচালনায় আসন্ন ত্রি-পাক্ষিক সভায় অংশীদারিত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
আপনাদের প্রশ্ন নেয়ার আগে আমি আবারো জোর দিয়ে বলতে চাই যে, কোভিড-১৯ মহামারী কাটিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে থাকবে। কোভিড বিষয়ক সহায়তা হিসাবে এই অঞ্চলে আমরা ৯৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রদান করেছি। কিন্তু এটি আসলে বিগত দুই দশকে গণস্বাস্থ্য খাতে প্রদত্ত ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের বাইরে। আমরা এই অঞ্চলের অন্যান্যদের প্রতিবাদের সাথে একাত্ম হয়ে চীনের প্রতি বৈশ্বিক আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা দেশগুলোকে বেল্ট অ্যান্ড রোড-এর আগ্রাসী ঋণের ফাঁদে না ফেলে সেখানে স্বচ্ছ ঋণ প্রদান করে। আমাদের বেসরকারি খাত, এবং বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকন্সট্রাকশান এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর মত আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমাদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এসব দেশ দৃঢ় পদক্ষেপে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে। আমরা অন্যান্য রাষ্ট্রকেও আমাদের সাথে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
আমি আপনাদের প্রশ্নের জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। আবারও, আজকের এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ, রাষ্ট্রদূত ওয়েলস। আমাদের প্রথম প্রশ্নটি আগাম পাঠিয়েছেন পাঝওক আফগান নিউজ থেকে কারোখেল দানিশ। প্রশ্নটি হলো: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে দীর্ঘমেয়াদি ও কঠিন কাজের পর আপনারা কী ফলাফল দেখেছেন? পাকিস্তান কি আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে?
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা পাকিস্তানের স্বার্থের জন্যই বেশী ইতিবাচক হবে। আমার ধারণা, পাকিস্তানি নেতারা বলতে চান যে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি স্থাপিত হলে আফগানিস্তানের পরেই পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। গত এক বছরে আমরা রাষ্ট্রদূত খলিলজাদ এবং পাকিস্তানি বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে জোরালো সহযোগিতা দেখেছি তালেবানকে আলোচনা টেবিলে যেতে উৎসাহিত করতে। অবশ্যই শান্তি ত্বরান্বিত করার জন্য একসাথে গঠনমূলক কাজ করার উপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সহযোগিতা শক্তিশালী হওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলবে।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ। আমাদের পরবর্তী প্রশ্নকর্তা নাভিদ আকবর সরাসরি কথা বলবেন। নাভিদ, প্রশ্ন করার পূর্বে অনুগ্রহ করে আপনার সংবাদ সংস্থার নামটি বলবেন।
প্রশ্ন: জ্বী, আমি রাষ্ট্রদূত ওয়েলসকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, পাকিস্তান-চীন অর্থনৈতিক করিডোর বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? যুক্তরাষ্ট্রই মূলত এই অর্থনৈতিক করিডোরের সমালোচনা করেছে। এ বিষয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী এবং পাকিস্তান ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য এই করিডোরের উপযোগিতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: সিপিইসি এবং অন্য যেকোন উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমরা, যুক্তরাষ্ট্র, এমন বিনিয়োগকেই সমর্থন করি যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, পরিবেশ ও শ্রমের মানদণ্ড বজায় রাখে, টেকসই হয়, এবং সে অঞ্চলের জনগণের কল্যাণে অবদান রাখে। সিপিইসি বিষয়ে আমার ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগ আমি প্রকাশ করেছি- বিশেষত প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতার অভাব, চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নির্ধারিত লাভের অন্যায্য হার, পাকিস্তানের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব এবং চীনের সাথে বর্তমান বাণিজ্যে পাকিস্তানের ব্যাপক ভারসাম্যহীনতার বিষয়গুলো নিয়ে।
আমার মনে হয়, কোভিডের মত এমন সংকটে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ার ফলে পৃথিবী যখন হিমসিম খাচ্ছে, সেই সময়ে পাকিস্তানের ওপর চাপানো এমন আগ্রাসী ও অবাস্তব ঋণের বোঝা লাঘবে পদক্ষেপ নেয়ার দায় চীনের ওপরই বর্তায়।
তাই আমরা অবশ্যই আশা করবো যে পাকিস্তানি জনগণের জন্য একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ চুক্তি নিশ্চিত করতে চীন ঋণ মওকুফ করবে অথবা ঋণের শর্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
সঞ্চালক: প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের পরবর্তী প্রশ্নটি করেছেন ভারতের ইকোনমিক টাইমসের প্রতিনিধি সীমা সিরোহি। তাঁর প্রশ্ন হলো: “রাষ্ট্রদূত ওয়েলস, ভারত-চীন সীমান্তের সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?”
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: সীমান্ত সংঘাত, আমি মনে করি, এই ঘটনাগুলো আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয় যে চীনের আগ্রাসন সবসময় মুখের কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে হোক অথবা ভারতীয় সীমান্তে হোক- আমরা বরাবরই চীনের উস্কানিমূলক ও উদ্বেগজনক আচরণ দেখছি। ফলে চীন যে তার ক্রমবর্ধমান শক্তি ব্যবহার করতে চাইছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠছে।
সে কারণেই আমার মনে হয়, আপনারা দেখেছেন যে, আসিয়ানের মাধ্যমে হোক অথবা অন্যান্য গণতান্ত্রিক জোটের মাধ্যমে হোক- যেমন জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপাক্ষিক জোট, অস্ট্রেলিয়া’সহ চতুর্পাক্ষিক জোট, অথবা বৈশ্বিক সংলাপের মাধ্যমে- রাষ্ট্রগুলো আলোচনা করছে কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও মূলনীতি ফিরিয়ে আনা যায়। এভাবেই মুক্ত ও স্বাধীন বাণিজ্যের মাধ্যমে চীন’সহ অন্য সকল অর্থনীতির অবস্থান উন্নীত হয়েছিল।
আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে চীনের একাধিপত্য থাকবে না, বরং সকলেই উপকৃত হবে। আর তাই, সীমান্ত সংঘাতগুলো আসলে আমাদেরকে চীনের হুমকির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সঞ্চালক: উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। পরবর্তী প্রশ্নের জন্য আমরা ফিরবো মধ্য এশিয়ার দিকে। আমাদের কাছে উজবেকিস্তানের করেসপন্ডেন্ট থেকে ইখতিয়র রাখমানের একটি প্রশ্ন আছে। আপনি ইতোমধ্যে মধ্য এশিয়ায় দীর্ঘ দিন কাজ করছেন, তার প্রশ্নটি উজবেকিস্তানের সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আপনার মতামত বিষয়ে। আপনি এই পদে আসার পরে বিগত তিন বছরে উজবেকিস্তানের সংস্কার প্রক্রিয়াকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: ঠিক আছে। বেশ, আমি একটু পেছনে ফিরে তাকাতে চাই, যখন আমি তাজিকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দূতাবাস চালু করি। আমার পুরো কর্মজীবন ধরে আমি মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর বিকাশ দেখছি। আমি মনে করি এই অঞ্চলের পাঁচটি দেশই যে তাদের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর- এটা একটা অসাধারণ অর্জন। ২৭ বা ২৮ বছর আগে দেশগুলো যে অবস্থানে ছিল, তা বিবেচনা করলে কোনভাবেই এই অর্জনকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কাজ করতে পেরে আমি সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি- কেননা তারা সহায়তা দিয়েছে স্বাধীনতার স্বপক্ষে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক দেশগুলোতে। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদ মাধ্যম ও বিচার ব্যবস্থায় কারিগরি সহায়তা দিয়েছে অথবা সহায়তা দিয়েছে কোন দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেকোন প্রতিষ্ঠানে।
তবে, আমি স্পষ্টতই মনে করি যে, গত তিন বছরে এই অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ছিল উজবেকিস্তানে রাষ্ট্রপতি মিরজিয়োজেভ-এর রাজনৈতিক রূপান্তর। তিনি যে সংস্কার কর্মসূচির সূচনা করেছেন তা সত্যিই অসাধারণ- যার আওতায় সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন পথ উন্মোচন করছে। এর ফলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আশা করা যায় ভারতের সাথেও বৃহত্তর সংযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়ার ইঞ্জিন হিসাবে ৩০ মিলিয়নের বেশি জনগণের এই দেশটির পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তাই, আমরা এই সংস্কারের অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে খুবই আশাবাদী। আমি আগেও বলেছি, সংস্কারের প্রক্রিয়া সহজ নয়। পথে বাধা আসবেই। দুই পা এগুলে এক পা পিছিয়ে আসতেই হবে। আমার মনে হয়, আমি এই বার্তা দিতে পারি যে, উজবেকিস্তানে আরো গণতান্ত্রিক ও উন্মুক্ত সমাজের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী ও পদ্ধতিগত অগ্রযাত্রায় পূর্ণ সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ। এখন পাকিস্তান থেকে একটি সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই। এক্সপ্রেস নিউজ টিভি থেকে আমাদের সাথে আছেন খালিদ মাহমুদ। আপনার প্রশ্নটি করুন। উনি খালিদ মাহমুদ। আপনাকে আনমিউট করা হয়েছে। দয়া করে প্রশ্নটি করুন। ঠিক আছে, আমরা তাহলে আবার মধ্যে এশিয়ায় ফিরে যাই। হয়ত খালিদ আবারো আমাদের সাথে যুক্ত হবেন।
আমাদের সাথে আছেন ওকসানা স্কিবেন, যাকোন ডট কেযেড (Zakon.kz) সংবাদ মাধ্যম থেকে। তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় নারী অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করছেন। “এই অঞ্চলে লৈঙ্গিক নীতিমালাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন, এবং এশিয়ার কোন দেশ নারী অধিকার আদায় এবং নারী অধিকার সুরক্ষায় সবচেয়ে বেশি অগ্রসর হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?”
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: নারীদের অগ্রগতি এবং আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ যেকোন সমাজের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রেও দেখেছি যে, নারীরা এখন কর্মশক্তির একটি বড় অংশ, এবং তারা দেশের জিডিপি’তে ও উদ্যোক্তা প্রতিভা হিসাবে ব্যাপক অবদান রাখছেন। তাই যেহেতু আমরা নারীদের ভূমিকা সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেহেতু আমরা জোরালোভাবে বিশ্বাস করি যে- যুদ্ধ বা শান্তি যাই হোক- নারীদের কণ্ঠস্বর অত্যাবশ্যক, তাই আমাদের নারী বিষয়ক তিনটি কাউন্সিল রয়েছে। সেগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্র-আফগান, একটি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান এবং আরেকটি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত নারী কাউন্সিল। এগুলোতে আমরা বেসরকারি খাতকে ব্যবহার করে নারীদের পরামর্শ প্রদান, শিক্ষানবিশির সুযোগ, চাকুরির সুযোগ ইত্যাদি বাড়াতে কাজ করছি এবং নারীদের কর্মসংস্থান বিষয়ে আইনগত ও সংস্কারগত বাধা দূর করার জন্য সরকারের সাথে কাজ করে চলেছি।
নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা বা বিধি-নিষেধ আছে যেগুলো অতিক্রম করা যথেষ্ট কঠিন। সংস্কৃতি একটি বাস্তবতা। সমাজ একে গুরুত্ব দেয় ও সকল স্তরে তা জড়িয়ে আছে। ভারতের মত একটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আপনারা দেখেছেন যে আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বিগত কয়েক বছরে হ্রাস পেয়েছে। এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ, এমনকি সবচাইতে গতিশীল ও উন্মুক্ত অর্থনীতিকেও এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে তুলনা করা খুবই কঠিন এবং আমি তা করতেও চাচ্ছি না, কারণ এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপটই ভিন্ন।
কিন্তু আমি বলতে চাই যে, আমরা যে নীতিমালাই প্রচার করি না কেন- সেটাকে অবশ্যই লৈঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যাচাই করা হয়। এর একটি উদাহরণ হতে পারে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে নারীদের কণ্ঠস্বর তুলে আনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশেষে ১৯ বছর পর নারীরা যাতে বিদ্যালয়ে যেতে পারে, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে; তাদের বক্তব্য, তাদের অধিকার যাতে হারিয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাই আপনারা দেখেছেন আলোচনার টেবিলে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহিত করেছে। আপনারা আমাদেরকে দেখেছেন সমঝোতাকারী হিসাবে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে, কারিগরি সহায়তা দিতে- কিন্তু তার বাইরে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশী সহায়তা দেয়া হয়েছে তা শুধু নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে।
সঞ্চালক: উত্তরটির জন্য ধন্যবাদ। ভারতের সিএনবিসি-টিভি১৮ থেকে পরীক্ষিত লুথরা’র কাছ থেকে সরাসরি একটি প্রশ্ন নিচ্ছি। পরীক্ষিত, আপনার প্রশ্নটি করুন।
প্রশ্ন: ঠিক আছে। রাষ্ট্রদূত ওয়েলস, আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের প্রশ্নটি ইন্দো-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে। সম্প্রতি ভারত সরকার শিল্পখাতে সহায়তার জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন? ইন্দো-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তিটি কি এ বছর সম্পন্ন হবে বলে আপনি মনে করেন, এমনকি সীমিত আকারে হলেও? আপনি কি এ বিষয়ে আশাবাদী?
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত বছর ভারতের সাথে আমাদের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা গিয়েছে, যেমন আমার ধারণা, জ্বালানি ক্ষেত্রে এই বাণিজ্য ২৪ শতাংশের মত বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বাণিজ্য সম্পর্কের প্রতি ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে আমাদের একটি শঙ্কা হল, ভারতের বাজার অনেকাংশেই বেশ সুরক্ষিত যেখানে অনেক সময়েই বিদেশী কোম্পানির জন্য পেরে ওঠার ন্যায্য সুযোগ থাকে না। তাই ইউএসটিআর, ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং ভারত একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই বছর চুক্তিটি সম্পন্ন হবে কিনা তা এই মুহূর্তে আমি ধারণা করতে পারছি না, তবে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সদিচ্ছা অবশ্যই রয়েছে।
আমি মনে করি যে, এই মহামারী-পরবর্তী পরিবেশে দেশগুলো বিশ্বায়নের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনগুলো দেশেই করার প্রচেষ্টা নিচ্ছে এবং সেটা সম্ভবও হচ্ছে- এবং সেইসাথে তারা সরবরাহ ব্যবস্থাগুলোকে বহুমুখী করে তুলতে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন ভারতের জন্য একটি বড় সু্যোগ হলো আরো উন্মুক্ত ও জনবান্ধব নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে ট্যারিফ কমিয়ে ভারতের পণ্য-প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। সরবরাহ ব্যবস্থায় আমাদের একে অপরের সাথে আস্থার সম্পর্ক তৈরির জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফার্মাসিউটিক্যাল, জেনেরিক ওষুধ ও টীকা প্রস্তুতকারক হিসাবে এই মহামারী থেকে উত্তরণ কালে বৈশ্বিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে।
তাই আমি মনে করি, যেসব ব্যক্তি-উদ্যোগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং মানুষে মানুষে বন্ধন এই সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করেছে- সেগুলোকে একসাথে এনে আমরা দু’দেশের মানুষ কীভাবে আরো উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি, সে বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সঞ্চালক: উত্তরটির জন্য ধন্যবাদ। করোনাভাইরাস বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু প্রশ্ন আছে। এর কয়েকটি প্রশ্ন মিলিয়ে আমি একটি প্রশ্ন করব। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বিষয়ে আপনি বড় পরিসরেও বলতে পারেন। উজবেকিস্তানের রেডিও চ্যানেল ২৪-এর আবদুভালি সেবনাজারোভ জানতে চেয়েছেন, মহামারী পরবর্তী সময়ে উজবেক সংবাদ মাধ্যমকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কী পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে। তারপর বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা থেকে তানজিম আনোয়ার বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা ও আরো উন্নত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা কেমন হবে যে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: প্রথমেই আমি বৃহৎ পরিসরে কোভিড বিষয়ক সহায়তা নিয়ে বলতে চাই। আমি মনে করি, এটা সত্যিই আমেরিকার জনগণের উদারতা এবং আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অঙ্গীকারের একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। আমেরিকা- পুরো আমেরিকা, এখানকার সরকার ও জনগণ একসাথে ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা ও অনুদান দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক সহায়তার প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মাধ্যমে, আমি বলবো, এ অঞ্চলের প্রতি আমেরিকার ঐতিহাসিক অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। আমি ৬.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলেছি- দুঃখিত, গত দুই দশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সহায়তা হিসাবে আমেরিকা ১৪০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।
আপনারা দেখেছেন যে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় কোভিড-এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে কোভিড মোকাবেলায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে। হোক তা কারিগরি সহায়তা, বা পিপিই বা অন্য কোন বস্তুগত সহায়তা যা এই সংকট মোকাবেলায় সরকারগুলোর জন্য জরুরী। এই মহামারী থেকে আমেরিকা বেরিয়ে আসার পর আমরা সহযোগী দেশগুলোকে আরো বেশী সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকতে পারবো।
আমি গর্বিত যে, এই সহায়তা শুধু আমেরিকার সরকারের কাছ থেকে আসেনি- আমেরিকার জনগণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, অথবা বোয়িং, পেপসি, কোকা-কোলার মত বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমি আবারো বলতে চাই যে, আমেরিকা এই সংকটের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক প্রভাবসহ সকল ক্ষতি মোকাবেলায় বিশ্বের সাথে রয়েছে। দ্বি-পাক্ষিকভাবে জি২০ ও জি৭ এর মাধ্যমে, ওইসিডির মাধ্যমে, বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে।
বাংলাদেশে আমরা যেমন দেখেছি- সেখানে রয়েছে একটি গতিশীল উদ্যোক্তা সমাজ, যাদের সামাজিক সূচক প্রকৃত সাফল্যের গল্প নির্দেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীদের উন্নয়নের কথা তো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে সেখানে মারাত্মক কিছু প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি- সরবরাহ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে- যার ফলে সাময়িক হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৈরি পোশাক শিল্পের কিছু বাজার হারাচ্ছে।
আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টির সমাধান নিয়ে ভাবছি। বাংলাদেশী প্রস্তুতকারকেরা নতুন পণ্যবাজার অনুসন্ধান করছে বা তৈরি করতে চাইছে বিধায় জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য আমরা বাংলাদেশী প্রস্তুতকারক ও আমেরিকার ভোক্তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য আমরা নতুন নতুন সুযোগ অনুসন্ধান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব।
আমেরিকা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজার ছিলো এবং আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের জন্য আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আবারও বলবো, চীনের ঝুঁকি থেকে সরে এসে- বৈচিত্র্য সৃষ্টি- বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য সৃষ্টির এ সময়টি- অত্যন্ত কঠিন এই সময়টিও বাংলাদেশের জন্য সুযোগ হিসাবে আসতে পারে।
সঞ্চালক: এই উত্তরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন আছে। তাই যে প্রশ্নগুলোতে আপনারা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন সেগুলো ভোট দিয়ে উপরে নিয়ে আসুন। আবার একটি সরাসরি প্রশ্ন নিচ্ছি। আফগানিস্তানের টিভি১ থেকে আছেন হামিদ হায়দারি। হামিদ হায়দারি, অনুগ্রহ করে আপনার প্রশ্নটি করুন। এটি সরাসরি প্রচার হচ্ছে।
প্রশ্ন: অনেক ধন্যবাদ, জনাব রাষ্ট্রদূত। প্রথমত বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তানে দেয়া সকল সহায়তার জন্য আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ দিতে চাই- এবং অবশ্যই জনগণ আপনাদের ভুলবে না। আমার প্রশ্ন- আমার প্রথম প্রশ্ন হলো- আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে। আফগান রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি তালেবানদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন। এই অবস্থায় শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আপনার মতামত কী? আফগানরা মনে করে আগামী পাঁচ বছরের শান্তি প্রক্রিয়া সফল নাও হতে পারে। আপনি কি এ বিষয়ে একমত?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো: বর্তমানে আইসিস আফগানিস্তানে সহিংসতা করছে। কাবুল ও ঘোর প্রদেশে তারা কিছু আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছে। এই সহিংসতা শান্তি প্রক্রিয়াকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, বিশেষত যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে? আপনাকে ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া সফল হবে, এবং যত দ্রুত এটি হবে ততই মঙ্গল। অবশ্যই আমরা আন্তঃআফগান সমঝোতা শুরুর জন্য জোর প্রচেষ্টা নিয়েছি, যাতে আফগান সরকার আফগান রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে তালেবানের সাথে এক টেবিলে বসে। সহিংসতা হ্রাস ও বন্দি মুক্তির মাধ্যমে যত দ্রুত আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া যাবে, ততই উত্তম। আমি একজন আফগানকেও দেখিনি যিনি শান্তি চান না বা শান্তিকে অগ্রাধিকার দেন না।
বর্তমানে যে পরিমাণ সহিংসতা চলছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা দেখছেন- রাষ্ট্রদূত খলিলজাদ দোহাতে তালেবানদের সঙ্গে বসে সেই প্রশ্নগুলোই করছেন। তবে আমরা স্বীকার করছি যে, যেকোন শান্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। আমরা সবসময়েই ধারণা করে এসেছি যে, প্রক্রিয়াটি কঠিন হবে এবং আমাদেরকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে। কখনও কখনও দ্রুত আরম্ভ করতে গিয়ে শান্তি প্রক্রিয়ার সকল পক্ষই কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ফেলছে।
এখন হার মানার সময় নয়। এখন আরো শক্ত অবস্থান নেয়ার সময়, কারণ আইসিসের মত সংগঠন এখন আফগানিস্তানে ঘাঁটি গাড়ছে- ঠিক যেমনটি আপনি বললেন। তারা আফগানদের সম্মান করে না, রাষ্ট্র হিসাবে আফগানিস্তানকে সম্মান করে না, আফগানিস্তানের ধর্মকেও সম্মান করে না। তারা শুধু ঘৃণ্য সহিংসতা ঘটিয়েছে- এতোটাই ঘৃণ্য যে, প্রসূতি চিকিৎসাকেন্দ্রে আক্রমণের দায়ও তারা স্বীকার করে না।
আমরা বিশ্বাস করি, আইসিসের মত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আফগান সরকার ও তালেবানকে একসাথে অবস্থান নিতে হবে। শুধুমাত্র তখনই আপনি এমন উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে পারবেন, যখন আপনি বিদ্যমান হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অন্যন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিয়ে সমন্বিত ও সামগ্রিক মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত কোন শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ। পরের প্রশ্নটি করেছেন ভারতের দি হিন্দু-তে কর্মরত সুহাসিনী হায়দার। তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন: “আপনি বলেছেন যে, তালেবান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিতে আসলে শুধু সেসব গোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে যাদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। এটি আফগানিস্তানে পরিচালিত এলইটি এবং জেইএম-কে থামানোর প্রতিশ্রুতি নয়। তালেবানের সাথে কোন আলোচনা শুরু করতে না চাওয়ার প্রশ্নে আপনি কি ভারতের সাথে দ্বিমত করছেন?”
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: তালেবান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। আমি চাইবো, এই চুক্তি ও সমঝোতা তাদের নিজ গতিতে চলুক। কিন্তু আমেরিকার অঙ্গীকার হলো, বহিরাগত কোন সন্ত্রাস বা আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস অথবা এ অঞ্চলে, আমাদের বন্ধু ও সহযোগী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন সন্ত্রাস পরিচালনার ক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে যাতে আর কখনো ব্যবহার করা না যায় সেটা নিশ্চিত করা। আর অবশ্যই ভারত- এই শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারত কতটা সহায়তা দেবে সেটা নির্ধারণ করা তাদের নিজস্ব বিষয়। স্পষ্টতই, আফগানিস্তানে ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই যে ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রতিশ্রুত হয়েছে, সেটি আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে আক্ষরিকভাবেই স্পর্শ করেছে বলে আমি মনে করি।
ভারত বরাবরই আফগানদেরকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে- ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে এবং তারা নিয়েছে- এবং সে কারণেই আপনারা দেখেছেন যে, কোভিড লকডাউনের চূড়ান্ত সময়েও রাষ্ট্রদূত খলিলজাদ নয়াদিল্লীতে এসেছেন। কারণ, এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যে, আমাদের এই দুই দেশের মধ্যে এই সংলাপ ও পরামর্শগুলো অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া, ভারত সরাসরি তালেবানকে সম্পৃক্ত করতে চায় কিনা সেটা তাদের বিবেচনার ওপরই নির্ভর করছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তালেবানকে একটি রাজনৈতিক পরিচালনা কাঠামোর অংশ হিসাবে পেতে চাইছি সেখানে ভারত সরকারের সাথে সম্পর্ক নিবিড় হতে হবে, এবং হওয়া উচিত। আমরা বিশ্বাস করি যে, সুন্দর আফগানিস্তানের জন্য ভারতের সাথে তাদের একটি সুন্দর সম্পর্ক প্রয়োজন হবে।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ। পরের প্রশ্নের জন্য আমরা সরাসরি যার কাছে যাচ্ছি, তিনি হলেন নেপালের রিপাবলিকা থেকে মাহাবির পাওদিয়াল।
প্রশ্ন: নমস্কার মান্যবর। এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে। যেমন, নেপালে- ইন্দো-প্যাসিফিক কর্মকৌশল সম্পর্কে নেপালের জনগণ জানতে পেরেছে মূলত ২০১৮ সালে রিপাবলিকা’র সাথে আপনার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এটা কাঠমাণ্ডুতে বড় বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন এটাকে চীন বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবেও দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক ব্যাখ্যা এমনকি অপব্যাখ্যাও রয়েছে। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক কর্মকৌশলের সাথে সংশ্লিষ্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন গ্র্যান্ট আসার পর কাঠমান্ডুতে একটি রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতা করা হচ্ছে- ক্ষমতাসীন দলের কিছুর নেতাকে সংসদে এই ইন্দো- এই এমসিসি অনুমোদনের জন্য বিরোধিতা করা হচ্ছে। অন্যান্যরা এই অনুমোদনের পক্ষে। তাই এখানে বিভাজন রয়েছে।
তাছাড়া সেখানে আরো কিছু বিষয়- এমনকি এমন জল্পনাও রয়েছে যে চীনারা এই এমসিসি’র অনুমোদন চাইবে না। আর তাই এতে সেখানকার ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের কিছু অংশের বিরোধিতা রয়েছে। সুতরাং নেপাল ও চীনে এমসিসি ও ইন্দো-প্যাসিফিক কর্মকৌশলের বিষয়গুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন? তাই, [অস্পষ্ট]।
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার সাথে একমত এবং খোলাখুলিভাবে বলতে চাই যে, নেপালে আমেরিকার সহায়তা বিষয়ে ব্যাপক ভুল তথ্য রয়েছে। আমি বলছি- যেমন, মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৪ সালে। এর সাথে মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্যের কোনরকম সম্পর্ক নেই। এই সত্যটা এখানে একেবারেই অস্পষ্ট যে, এসব দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিবন্ধকতা সরানোর লক্ষ্যে কংগ্রেস কর্তৃক বিশেষভাবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে দেশগুলোর সক্ষমতা বিষয়ে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা দেয়া হবে।
তাছাড়া নেপালে, আমাদের প্রতিশ্রুত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বাইরে অতিরিক্ত তহবিল হিসাবে এমসিসি কার্যক্রমে সরকার ১৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি জলবিদ্যুৎ পরিসঞ্চালন, আন্তর্দেশীয় পর্যায়ে বিক্রয় এবং সড়ক অবকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত- যাতে আপনাদের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়- যে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির ফলে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, এটি একটি অনুদান সহায়তা- কোন ঋণ নয়, অনুদান সহায়তা- এই অনুদান সহায়তার সম্ভাবনা রাজনৈতিক ফুটবলে পরিণত হয়েছে, ফলে সমস্যা হচ্ছে। এখন আমি খুব খুশী যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এই এমসিসি’র পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, নেপালের সার্বভৌম সরকার চীনের পরামর্শে চলে না এবং তারা তাদের দেশের জনগণের অর্থনৈতিক কল্যাণ এগিয়ে নেয়ার সর্বোত্তম স্বার্থে যা কিছু প্রয়োজন, তাই করবে।
তবে, ভুলে যাবেন না- আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই এমসিসি শুধু একটি স্বতন্ত্র প্রকল্প নয়, শুধু পৃথক উন্নয়ন কার্যক্রম নয়- বরং এটি নেপালের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নেপালের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গৃহীত বহু কার্যক্রমের একটি উদাহরণ মাত্র। আমরা প্রতিবছর যে ১২০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকি- এটি তার বাইরে অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা কিনা, পিস কর্পস কিনা, ভূমিকম্পের পরে নেপালের পুরাকীর্তি সংস্কারের জন্য ব্যবহৃত সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ তহবিল কিনা- সেগুলোও আমাদের দেখতে হবে। আমরা নেপালের জনগণের সাথে আমাদের সম্পর্কের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
সুতরাং আমি এই উপসংহারে পৌঁছাতে চাই যে, এমসিসি নিয়ে সম্প্রতি আমরা যে বিতর্ক দেখেছি সেগুলো মূলত নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়। আমি অবশ্যই আশা প্রকাশ করবো, আপনার দেশের যে নেতৃবৃন্দ বিগত তিন বছর ধরে এই চুক্তির সমঝোতা কালে সমঝোতাকারীদের সাথে নিয়ে দেশের সকল বৃহত্তর রাজনৈতিক দলকে একত্রে এনেছিলো- আপনার দেশের সেই নেতৃবৃন্দ নেপালের জনগণের জন্য ঘুরে দাঁড়াবেন এবং এমসিসি নিয়ে সামনে অগ্রসর হবেন।
সঞ্চালক: এবার আমরা আরেকটি প্রশ্নে যাব। কিরগিজস্তানের একেআই প্রেসের নিউজ এজেন্সি থেকে প্রশ্নটি করেছেন আসলান সিডিকভ। তিনি জানতে চেয়েছেন: “আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি- এটি মধ্য এশিয়া অঞ্চলে কী ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করবে বলে আপনি মনে করছেন?”
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: দেখুন, আমি আবারও বলছি, আমাদের সাথে মধ্য এশিয়ার সম্পর্ক একান্তই তার নিজের মতো। আমরা প্রত্যাশা করি ও সমর্থন করি যে, মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তান এ অঞ্চলের সকল দেশের সাথে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিক কল্যাণমূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে। আর এটি কোন একপাক্ষিক লাভের প্রস্তাবনা নয়- আর তা হওয়া উচিতও নয়। মধ্য এশিয়ার সাথে আমেরিকার সম্পৃক্ততার মাধ্যমে মধ্য এশিয়া বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণে মধ্য এশিয়ার যে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সমন্বয় প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করা।
কিরগিজস্তানের জন্ম থেকে, কিরগিজস্তানের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার তীব্র আকাঙ্ক্ষার শুরু থেকেই- কিরগিজস্তানের সাথে আমাদের এক দুর্দান্ত ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। হোক আপনাদের মিডিয়া, হোক বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কিংবা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম- আমরা সেগুলোতে সহায়তা দিয়েছি। কিরগিজস্তানের ডব্লিউটিও বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রাগুলোতেও আমরা সমর্থন দিয়েছি। আর তাই আমি মনে করি, এটি একটি পরিপূর্ণ সম্পর্ক যার আওতায় নর্দার্ন ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের চূড়ান্ত সময়ে মানস বেইজ গড়ে তোলা হয়েছিলো যা আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টায় সহায়ক হয়েছিল।
আমরা মনে করি, এখন আমাদের এই দ্বিপাক্ষিক ও সি৫ সম্পর্কের আওতায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির কৌশল বিষয়ে- এবং আফগানিস্তানের দক্ষিণাংশের সাথে এতদঞ্চলের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বৃদ্ধির পন্থা বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন- এবং সেটা খুব জরুরী। আর তাই কিরগিজ সরকারের সাথে গত ফেব্রুয়ারিতে সেক্রেটারি পম্পেও-এর সাম্প্রতিক উদ্যোগসহ আমাদের মধ্যে যে উচ্চ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।
সঞ্চালক: উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের হাতে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, তবে দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের সময়ও শেষ হয়ে আসছে। এখন আমরা আরেকটি প্রশ্ন নিচ্ছি তাজিকিস্তানের রেডিও ওজোদি থেকে যুক্ত হওয়া খিরোমন বাকোয়েভার কাছ থেকে।
প্রশ্ন: হ্যালো। তাজিকিস্তানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে এই মহামারীর প্রতি তাজিক কর্তৃপক্ষের আসল মনোভাব বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এইতো সেদিন, গত ৩০ এপ্রিলে তাজিক সরকার স্বীকার করেছে যে দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে। আপনি কি তাজিক কর্মকর্তাদের নিকট করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি উত্থাপনের কোন সুযোগ পেয়েছিলেন?
সংক্ষিপ্ত দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো: গত বছর জুড়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা শুনে আসছিলাম যে, তারা তাজিকিস্তানে স্বৈরাচারী শাসনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। অনেক সুশীল সমাজ কর্মী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বতন্ত্র গণমাধ্যম দাবি করছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা ২১ শতকের শুরুর বছরগুলোর তুলনায় কম সমর্থন পাচ্ছে। আপনি কি এসব বিষয়ে মতামত দেবেন? ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: আমার ধারণা, দুশানবে’তে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসের সাথে কোভিড এবং কোভিড মোকাবেলা কার্যক্রমসহ সমস্ত বিষয়ে সেখানকার সরকারের সক্রিয় সংলাপ চলমান রয়েছে। আমরা তাজিকিস্তান সরকারকে কিছু সহায়তা প্রদান করেছি। এই সংকট অতিক্রমকালে আমরা আরো কিছু সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিছু দমন-নিপীড়ন বিষয়ে- কিছু পদক্ষেপ যেগুলো নেয়ার ফলে তাজিকিস্তানের গণমাধ্যমে স্বাধীন ও স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছিলো, সেসব বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম। আপনি জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোরালোভাবে ওজোদির স্বীকৃতি চেয়েছে এবং সেইসাথে তাজিকিস্তানের মিডিয়া সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপর ঘটে যাওয়া সহিংস সব ঘটনার বিরুদ্ধেও কথা বলেছে। বিশেষত বর্তমান সংকটের সময়ে স্বচ্ছ তথ্যপ্রবাহ খুব জরুরী যাতে মানুষেরা তাদের করণীয় কী সেটা বুঝতে পারে এবং এই সংকট উত্তরণে বাস্তব তথ্য ও প্রকৃত খবরাখবর পাওয়ার সুযোগ পাবে। আর তাই আমরা সেগুলোর বিষয়ে খুব জোরালোভাবে আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবো।
সহায়তার প্রশ্নে এবং বিগত সময় জুড়ে সহায়তার প্রশ্নে- তাজিকিস্তান তাদের স্বাধীনতার সময়ের তুলনায় আজ অবশ্যই একটি ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে বলে আমি মনে করি। যে ধরনের কার্যক্রম আমরা নিয়ে থাকি সেগুলো পরিবর্তিত হয়েছে। তবে আমরা তাজিকিস্তানের অন্যতম প্রধান সহযোগী এবং প্রধান সহায়তা প্রদানকারী দেশ।
পরিদর্শনে গিয়ে আমার সুযোগ হয়েছিলো সীমান্ত এলাকায় যাওয়ার। সেখানে আমি সাম্প্রতিক সীমান্ত বিষয়ক সহায়তায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের কার্যক্রম দেখেছি। হোক ভৌত উপকরণ যেমন বিশেষ যানবাহন, সীমান্ত ফাঁড়ি, ভৌত কাঠামো কিংবা হোক অত্যাধুনিক রাডার নিয়ন্ত্রিত নজরদারি প্রযুক্তি, সবই রয়েছে সেখানে। আমরা সক্রিয় বিনিময় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। সম্প্রতি আমরা এর প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলাম- সম্প্রতি আমরা কেবল ফিরেছি, আমার ধারণা, বিনিময় কার্যক্রমের ৪৭ জন অংশগ্রহণকারী এই মহামারীর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এক প্রকার আটকেই ছিলেন। কিন্তু আমরা এই কার্যক্রমগুলোকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করি, মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটাই এবং তরুণদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার মাধ্যমে তাদেরকে আমাদের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের শুভেচ্ছাদূত বানাই। তাই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অঙ্গীকারের কোন কমতি ঘটেছে বলে আমি মনে করি না। আর আফগানিস্তান বিরোধের সম্মুখ রাষ্ট্র হিসাবে তাজিকিস্তানের মাধ্যমে সেই পর্যায়ের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিরাট দায় রয়েছে আমাদের।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ, রাষ্ট্রদূত ওয়েলস। আমরা- আমি খুব দুঃখিত যে আমাদের অনেক প্রশ্ন বাকি রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে হাতে সময় নেই। রাষ্ট্রদূত ওয়েলস, সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। সমাপনী বক্তব্যে আপনি কি আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
রাষ্ট্রদূত ওয়েলস: ধন্যবাদ, হ্যাঁ চাই। আমি শুধু বলতে চাই- কোভিডের ফলে আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। কিন্তু এই পদে গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা অবশ্যই আমাকে এ অঞ্চলে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের ঐক্যবদ্ধ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের শক্তি বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমাদের জ্যেষ্ঠ ব্যুরো কর্মকর্তা টম ভাজদা’র যোগ্য নেতৃত্বে এখন ব্যুরো অফিস পরিচালিত হবে। তবে আমার কাছে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকৌশলে এ অঞ্চলটির গুরুত্ব অত্যধিক। এতে আফগানিস্তানে আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার হিসাবে নিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার পুনঃস্বীকৃতি, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা, মধ্য এশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং সারা বিশ্বের জন্য সহায়ক স্বাধীন ও উন্মুক্ত বাণিজ্য পদ্ধতি ও মূল্যবোধ নিশ্চিত করা। তবে, সেজন্য অবশ্যই- আমাদেরকে অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক উন্নয়নের ধারা প্রবাহিত করতে হবে।
সুতরাং আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি এবং সেগুলো করার সঙ্গতি, সদিচ্ছা দুইই আছে আমাদের।, বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী এই মহামারী কালেও আমাদের সেটা করতে হবে। পরিশেষে, সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এবং আমি আশা করি আপনারা সবাই আপনাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদ থাকবেন। বিদায়।
সঞ্চালক: ধন্যবাদ, আজকের মতো আমাদের সময় শেষ হয়ে এসেছে। আপনাদের প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ এবং আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূত ওয়েলস, আপনাকেও ধন্যবাদ। আমরা অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদেরকে শীঘ্রই এই সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডিংয়ের লিঙ্ক এবং যথাশীঘ্র সম্ভব এর একটি প্রতিলিপিও পাঠাবো। আমরা আপনাদের মতামতকে স্বাগত জানাই এবং আপনারা যেকোন সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায়- TheBrusselsHub@state.gov। অংশগ্রহণের জন্য আবারও আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এবং আশা করি আগামীতেও আপনারা আমাদের ব্রিফিংয়ে যোগ দেবেন।