বাংলাদেশের বন্যার্ত মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জরুরী সহায়তা পাচ্ছে 

জামালপুর জেলার ইসলামপুরের সুখী বেগম তাঁর বাড়িটি বন্যা সমতল থেকে উঁচু করে তৈরি করতে গত বছর ইউএসএআইডি’র সৌহার্দ্য ৩ প্রকল্পে কাজ করেছেন। ©কেয়ার বাংলাদেশ

সারা বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে যা ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রদত্ত ৭ বিলিয়ন ডলারের অধিক সহায়তার সাথে যুক্ত হচ্ছে।

ঢাকা, ২৪ শে  জুলাই, ২০২০যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের চলমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার উত্তরবঙ্গের বন্যাকবলিত অঞ্চলে ঘর-বাড়ি বা জীবিকা হারানো নাজুক পরিবারগুলোর জন্য দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা ঘোষণা করেছে। 

রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার দুটি ইউনিয়নের সবচেয়ে বিপন্ন মানুষ যারা ঘর-বাড়ি হারা, ক্ষুধার্ত, আশ্রয়হীন এবং অন্য কোন সহায়তা পাচ্ছে না তাদেরকে এই সহায়তা দেওয়া হবে।

এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত মানুষদের জন্য বহুমুখী নগদ অর্থ সহায়তা। তাছাড়া এই পরিবারগুলোকে জরুরী পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সহায়তা দেয়া হবে যা রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ বিশেষত কোভিড-১৯’র বিস্তার প্রতিরোধে অত্যাবশ্যক। নগদ অনুদান গ্রহীতারা এই অর্থ দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণে জরুরী উপকরণ কিনতে পারবে। এর ফলে দুর্যোগের মধ্যেও স্থানীয় অর্থনীতি সবল থাকবে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “প্রবল বন্যায় তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান জরুরী। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে একসাথে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিগত বহু দশকের ন্যায় অঙ্গীকারবদ্ধ।”

যেসব এলাকায় এই সহায়তা দেয়া হবে সেগুলো হলো কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বন্যায় এ দুটি এলাকার মানুষই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে গৃহস্থালী ও সামাজিক পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে আরো সক্ষম করে তুলতে এবং দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি জোরদার করতে ইউএসএআইডি কয়েকটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। কেয়ার বাংলাদেশের সাথে ইউএসএআইডি’র সৌহার্দ্য ৩ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যা কবলিত নাজুক পরিবারগুলোকে তাদের ১,৭৪৪টি বসত ভিটাকে বন্যা সমতল থেকে উঁচু করে তৈরি করতে সহায়তা দেয়া হয়েছে। উঁচু করা এই বাড়ি-ঘরের কারণে পরিবারগুলো এবং তাদের গবাদি পশু ও বাগানগুলো নিরাপদ থাকে। এখন এসব উঁচু ভিটায় বসবাসকারী অনেক মালিক তাদের বন্যাকবলিত প্রতিবেশীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে।

তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবীদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন নির্দেশনাকে প্রায়োগিক পূর্বাভাসে রূপ দেয়া হয়। এগুলো ব্যবহার করে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাগণ বন্যাপ্রবণ এলাকার অধিবাসীদেরকে পূর্ব সতর্কতা প্রদান করতে পারেন। বন্যার পূর্ব সতর্কতা জানিয়ে ক্ষুদেবার্তা প্রেরণ করলে পরিবারগুলোর জন্য মানুষজন, গবাদিপশু, দ্রব্যসামগ্রী ও জীবিকা সরঞ্জামগুলো উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়। ইউএসএআইডি’র সৌহার্দ্য ৩ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যাতে তাঁরা পূর্ব সতর্কতা প্রদান ব্যবস্থার ব্যবহারপূর্বক জনসমাজকে বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করতে পারেন।

ইউএসএআইডি ১৯৯৯ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল জুড়ে বাস্তবায়িত প্রোগ্রাম ফর এনহ্যান্সমেন্ট অফ ইমার্জেন্সি রেসপন্স (PEER) কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও উদ্ধারকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে সহায়তা দিয়ে আসছে। এ কার্যক্রমের আওতায় স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য প্রশিক্ষণে প্রবল স্রোতে উদ্ধার কৌশলসহ জীবন বাঁচানোর প্রাথমিক কৌশল এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবীদেরকে দুর্যোগকালীন উদ্ধারকর্মীদের জন্য বহুমুখী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রমিত পদ্ধতি, ইনসিডেন্ট কমান্ড সিস্টেম (ICS) বিষয়ক প্রশিক্ষণেও ইউএসএআইডি যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিসকে সহায়তা প্রদান করে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা হিসাবে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশী অর্থ প্রদান করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নতকরণ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও চর্চা উৎসাহিতকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএসএআইডি ২০১৯ সালে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।