অনলাইন কোভিড-১৯ প্রশিক্ষণ কোর্স এবং সংবাদ ব্রিফিংয়ের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মিলারের বক্তব্য

Embassy of the United States of America
Public Affairs Section
Tel: 88-025566-2000
E-mail: DhakaMediaRequests@state.gov
Website: https://bd.usembassy.gov/

 

বৃহস্পতিবার, মে , ২০২০

আসসালামু আলাইকুম।

সবাইকে শুভেচ্ছা। রমজান মোবারক।

রমজান পালনকারী ও তাদের পরিবারের জন্য আমি এই পবিত্র মাসের সমস্ত বরকত কামনা করছি। চলমান এই কঠিন সময়ে করুণা, কৃতজ্ঞতা এবং উদারতার মতো রমজান এবং ইসলামের অন্তঃস্থলের মূল্যবোধগুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

রমজান আমাদের এই সংকট মোকাবেলায় নিয়োজিত সামনের কাতারের কর্মীদের সম্পর্কে ভাবা এবং তাদের ধন্যবাদ জানানোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা প্রতিদিন অসাধারণ সেবাকাজ করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, পুলিশ, মুদি, ওষুধের দোকান এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা লোকেরা। আমরা যেন নিজের এবং পরিবারের সবার ভালো থাকার জন্য যা যা দরকার তা পাই সেটি নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা।

আমি এর মধ্যে সাংবাদিকদেরও যোগ করবো। বিশেষ করে সঙ্কটের সময়ে যে কোনও প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের যা প্রয়োজন আপনারা তা যোগান। তা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, প্রকৃত ঘটনা এবং সত্য।

সাংবাদিক, আলোকচিত্র সাংবাদিক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজটি পালন করার সময় অনেক সময় ত্যাগ স্বীকারের ব্যাপার থাকে, যেমনটি বাংলাদেশেও ঘটে। আমরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া সাংবাদিক এবং জনসেবার ক্ষেত্রে তাদের নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনকে সম্মান জানাই।

৩ মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিলে স্বাধীন মত প্রকাশের সার্বজনীন অধিকার এবং গণতন্ত্র রক্ষা ও নাগরিকদের অবহিত ও নিরাপদ রাখতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা জোরের সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করে। এই বছর, আমরা জনসাধারণকে কোভিড-৯ মহামারি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য যে সাংবাদিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন -–অনেক সময়ই চাপ এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে-তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানাই।

আমরা বিশ্বের সব জায়গার সব সাংবাদিককে সম্মান জানাই যারা কিনা সত্য ও ন্যায়বিচারের অনুসন্ধান করতে নিজের জীবন, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত মঙ্গলকে বিসর্জন দিয়েছেন।

কোভিড-১৯ সংকটের মধ্যে নাগরিকদের অবহিত এবং নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই জীবনরক্ষাকারী সেবাটি দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের সেন্সরশিপ, হয়রানি বা গ্রেপ্তারের ভয় ব্যতিরেকে স্বাধীনভাবে সত্য অনুসরণ করতে পারা উচিত।

আপনারা সবাই প্রকৃত নায়ক। বিভিন্ন দেশে যেভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রকাশ্যে প্রশংসা জানানো হয় আমার তা খুব ভালো লাগে। তাদের প্রশংসিত হওয়াই উচিত। প্রশংসা পাওয়া উচিত সাংবাদিকদেরও। সর্বত্র। আমাদের অপরিসীম কৃতজ্ঞতা আপনাদের পাওনা।

থমাস জেফারসন লিখেছিলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে এবং তা পুরো হারিয়ে যাওয়া ছাড়া সীমিত করা যায় না।’

আজকের এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

ড. কনক কান্তি বড়ুয়া, উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটির প্রতিনিধিবৃন্দ, দূতাবাসের সহকর্মীবৃন্দ ও মিডিয়ার বন্ধুরা –

আমাদের সবার জন্যই একটি চ্যালেঞ্জের সময় এটি। তবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এখন আগের মতই সুদৃঢ়। আর পরস্পরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি কখনও এখনকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

আমরা এই রোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার এবং আমাদের অন্যান্য বাংলাদেশি বন্ধু ও অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে জোরালো এবং আমাদের পারস্পরিক অঙ্গীকার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের বাংলাদেশী বন্ধু ও সহযোগীদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে এই ভয়ংকর রোগ মোকাবেলায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

আজ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সারাদেশের চিকিৎসকদের জন্য কোভিড-১৯ বিষয়ক একটি অনলাইন কোর্স চালু করছে। এ কর্মসূচিটি সরকারের ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মুক্তপাঠ এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এই কোর্সটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যুক্ত থাকা আমাদের অংশীদার জনস হপকিনস সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই কোর্সটি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করার সময় যেসব সতর্কতার বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকদের সহায়তা করবে। এছাড়া সারাদেশের চিকিৎসকদের এই কর্মব্যস্ততার সময়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফমর্টির মাধ্যমে নিজেদের সুবিধামত সময়ে অবাধে  কোর্সে অংশগ্রহণ করাও সহজতর করবে।

এই কোর্সটি এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার অন্যতম উদাহরণ। ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড  প্রিভেনশন (সিডিসি) বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে এবং কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা জোরদার করার জন্য দেশজুড়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবাদাতাদের সঙ্গে কাজ করছে।

আজ পর্যন্ত এই রোগের বিস্তার মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মোট ২  কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এদেশের কোভিড-১৯ বিষয়ক প্রস্তুতি এবং মোকাবেলা প্রচেষ্টার জন্য তহবিল সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি হতে পেরে গর্বিত। এই সহায়তা এবং তার সঙ্গে সিডিসি এবং ইউএসএআইডি এর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং তাদের অংশীদারদের চলমান কারিগরি সহায়তা মিলে সনাক্তকরণ ও প্রস্তুতিসহ রোগ মোকাবেলা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা অব্যাহত রাখবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের সহযোগী আইসিডিডিআর’বি’ র মাধ্যমে আমরা আইইডিসিআর’ কে রোগ কিভাবে ছড়ায়, হটস্পট সনাক্ত করা, এবং কোথায় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করি।

এই তহবিল ছাড়াও গত ২০ বছরে আমেরিকান জনগণের কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে স্বাস্থ্য সহায়তায় ১শ’ কোটি ডলারের বেশি দেওয়া হয়েছে। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্য কর্মসূচীগুলো উন্নত মাতৃস্বাস্থ্য  ও পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে । এই কর্মসূচীগুলো বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করেছে।

শুধু গত বছরই, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সাথে ইউএসএআইডি’র নিবিড় সহযোগিতা ফলে যক্ষ্মা সনাক্তকরণ শতকরা ৪২ ভাগ বেড়েছে যার অর্থ হচ্ছে আরও বেশি সংখ্যক অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং একই সাথে রোগ বিস্তারের ঝুঁকি কমানো ।

ইউএসএআইডি ২০১৯ সালে ২৩০০ মহিলাকে স্বাস্থ্য বার্তা প্রচার ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পণ্য বিক্রয়ের সাথে জড়িত হতে সহায়তা করেছে । এই কর্মসূচী সহজে উন্নতমানের স্বাস্থ্য পণ্য প্রাপ্তি, কমিউনিটিতে উন্নত স্বাস্থ্য ও পরিবারে আয় নিশ্চিত করেছে ।

গুরুত্বপূর্ণ ফিল্ড এপিডেমোলজি ট্রেনিং প্রোগ্রাম ( এফইটিপি) এর মাধ্যমে সিডিসি স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মহামারি ও প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার প্রশিক্ষণ দিয়েছে । এই কর্মসূচীর ২৪ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ১৪ জন ফেলো বর্তমানে এদেশে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে । বাংলাদেশের প্রথম ২০০০ রোগীর রোগ নির্ণয় ও সনাক্তকরণে তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের এ সহায়তার বিষয়টি সব বাংলাদেশির জন্য মানসম্পন্ন, জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারই পুনর্ব্যক্ত করে।

কোভিড-১৯ আমাদের একটি যুদ্ধের মুখে এনে দাড় করিয়েছে। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হচ্ছে আমরা একসঙ্গে এই লড়াইয়ে আছি। সব বাংলাদেশি, সব আমেরিকান, সবাই। আর আমরা একসঙ্গে এ সংকট পাড়ি দেবো। আজ নতুন যে কর্মসূচী আমরা চালু করছি সেটি একসঙ্গে লড়াইয়ের মতই একটি পন্থা।

লড়াইটি কঠিন হতে চলেছে। কখনও কখনও তা হয়তো আমাদের বুক ভেঙে দেবে। তবে এটি আমাদের চেতনাকে ভাঙতে পারবে না। পারবে না আমাদের এ দুই মহান দেশের মানুষের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ় সংকল্পকে ভাঙতে।

কারণ ইতিহাস ও বিজ্ঞানের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষায় গুরুত্বদান, একে অপরকে সহানুভূতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে সহায়তা যোগানো এবং বাস্তববাদী ও ইতিবাচক হওয়ার মাধ্যমে আমরা আবারও একসঙ্গে বিজয়ী হবো।

ধন্যবাদ।