কোভিড-১৯ ডাক্তার প্রশিক্ষণ; ইউএসএআইডি’র নতুন তহবিল ঘোষণা উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত মিলারেরে বক্তব্য 

১৫ জুন ২০২০

আসসালামু আলাইকুম। শুভেচ্ছা সবাইকে। শুভ সকাল।

  • অধ্যাপক ড. সানিয়া তাহমিনা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • ডেরিক ব্রাউন, ইউএসএআইডি মিশন ডিরেক্টর
  • মিডিয়া প্রতিনিধি ও বন্ধুগণ।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একত্র হয়ে কাজ করছে।

সমস্ত খাতের সামনের সারির কর্মীরা যারা এই মহামারীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করছেন- বিশেষত স্বাস্থ্যকর্মীরা এই যুদ্ধের প্রকৃত বীর। আমাদের সুরক্ষিত রাখতে যারা কাজ করছেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা নেয়া উচিত।

আমাদের একে অপরের প্রতি অঙ্গীকার পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার অঙ্গীকারও তাই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটি সফল অংশীদারিত্বের উদযাপন অনুষ্ঠানে আজ আপনাদের সাথে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। নবনিযুক্ত ডাক্তার ও নার্সদের জন্য কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্তের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুইদিনের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে ২০২০ সালের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগ দিয়েছে।

আজ আমরা ডাক্তারদের শেষ দলটির সাথে যোগ দিয়েছি যারা এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করবেন। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১,০০০ ডাক্তার এতে অংশ নিয়েছেন। রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা দিতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদেরকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রদানের জন্য তাঁরা অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাজীবীদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। আমি গর্বিত যে, যুক্তরাষ্ট্র এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের অংশ।

কোভিড-১৯ নামের এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। রোগীদেরকে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে সহায়তা দিতে আজকের প্রশিক্ষণার্থী ও নিবেদিত ডাক্তারদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি এবং ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে।

ডা. সালাউদ্দিন অভি এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ২২ মে থেকে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কাজ করছেন।

ডা. অভি প্রতিদিন ৪০ জন রোগীর ব্যবস্থাপনা করেন। তিনি বলেছেন, “এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমার সক্ষমতা বেড়েছে এবং কোভিড-১৯ রোগীদের শ্রেণী ঠিক করা, রোগীর জটিলতা নিরূপণ এবং সে অনুযায়ী সঠিক ওষুধ ও অক্সিজেন থেরাপি দেয়ার বিষয়ে আমি এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী আত্মবিশ্বাসী।” ২২ মে’র পর থেকে শুধু এই একজন ডাক্তারের কাছ থেকেই শতশত রোগী আরো ভালো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাকে ১,০০০ ডাক্তার এবং তার চেয়েও বেশী নার্সের সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে আপনি দেখতে পাবেন, এই কার্যক্রমে আপনাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে কী বিরাট প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে।

এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো এই প্রশিক্ষণ । ইউএসএআইডি ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা জোরদার করার লক্ষ্যে আমরা দেশজুড়ে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সাথে কাজ করছি।

আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, আজ যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)’র মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করতে এবং কোভিড-১৯’র বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টাগুলোর জন্য সম্পূরক নতুন তহবিল হিসাবে আরো ১৭৩ মিলিয়ন ডলার প্রদান করছে। নতুন এই তহবিলের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তা হিসাবে রয়েছে ১৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী। এই তহবিলটি বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলা প্রচেষ্টায় ইউএসএআইডি কর্তৃক ইতোমধ্যে প্রদত্ত ১৯ মিলিয়ন ডলারের অধিক সহায়তার বাইরে। তাছাড়া এই তহবিলটি জরুরী স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা, বিশেষত এই মহামারী মোকাবেলার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে ১২০টিরও বেশী দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারী সংস্থাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রদত্ত ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী সহায়তার অংশ।

ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে আমাদের নতুন তহবিলের আওতায় ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত হাজার হাজার মানুষ জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে বিধায় আমি বিশেষভাবে আনন্দিত। কোভিড-১৯ বিষয়ে অতিরিক্ত তহবিলের আওতায় শহরের কল্যাণপুর ও সাততলা বস্তি এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা হিসাবে নগদ অর্থ প্রদানের লক্ষ্যে একটি নতুন কার্যক্রমে সহায়তা দেয়া হবে। তাছাড়া এর আওতায় মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে বাজার ও চাষীদের মধ্যে সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

এই তহবিলের আওতায় জনসমাজ পর্যবেক্ষণ, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উন্নতকরণ, এবং এই রোগ বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি এবং গুজব ও ভুলধারণা দূর করার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমগুলোতে সহায়তা বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশের কোভিড হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তের ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদানে সম্প্রতি ইউএসএআইডি সেভ দি চিলড্রেন’র সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছে। তাছাড়া, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত দ্রব্যসামগ্রী ব্যবস্থাপনার জন্য ইউএসএআইডি একটি অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম প্রণয়ন করেছে। দেশের ৬৫৮টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৬৩৯টি অর্থাৎ শতকরা ৯৭ ভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রই এখন কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী ব্যবস্থাপনার জন্য এই অনলাইন সিস্টেম ব্যবহার করছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং কোভিড মোকাবেলায় ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণের যৌক্তিক বিতরণ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই উপাত্ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা দানে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। শুধু ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ইউএসএআইডি’র সহায়তাপুষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ৪ কোটিরও অধিক মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে।

আমি এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমাদের সাথে যোগদানকারী ডাক্তারদের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি। তাছাড়া, একেবারে শুরু থেকে এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সকল ডাক্তার এবং তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সামনের সারির স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদেরকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সত্যিই আপনারা বাংলাদেশের সেরা বীর।

শক্ত থাকুন, সদয় হোন, ভালো থাকুন।

আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা সবাইকে।