লম্বা ছুটির সপ্তাহান্তের জন্য একদিন আগে আপনাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।পরিচিত মুখদের নিয়ে এই রোমাঞ্চকর মুহূর্তটি একসঙ্গে উপভোগ করতে পেরে আমি উৎফুল্ল।এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামগুলোর কিছুসংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ ও দূতাবাসের প্রিয় সহকর্মীরা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেবল বিশ্বজুড়ে থাকা বাংলাদেশিদেরই হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নেই, ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্বের সব ভাষাকেই সুরক্ষিত রাখার এক প্রতীক। বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সূত্রেই জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে বেছে নিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল থাকার সময় আমার জীবনের অন্যতম হিরো নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। ম্যান্ডেলা মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের, এক হৃদয়ের সঙ্গে আরেক হৃদয়ের সংযোগ স্থাপনের শক্তি আর গুরুত্বের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি কোনও লোকের সাথে এমন ভাষায় কথা বলেন যা সে বোঝে, তবে তা সহজেই তার মাথায় ঢোকে।আর যদি কোনও লোকের সঙ্গে তাঁর মাতৃভাষায় কথা বলেন তবে তা তার হৃদয়ে পৌঁছে যায়।’
গত বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আমাদের বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট চালু করে। বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের সহজেই বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিতে এটি তৈরি করা হয়।এ সাইটে যেসব বিষয়ে তথ্য থাকছে:
- বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলা প্রচেষ্টায় সহায়তাসহ যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসমূহ।
- যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা বা গবেষণা চালানোর সুযোগ
- পর্যটন, শিক্ষা এবং ব্যবসায়িক ভিসার জন্য আবেদন করার পদ্ধতি
- বাংলাদেশি-আমেরিকানদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য
বাংলা সংস্করণ চালু হওয়ার পর থেকে দশ লাখ নতুন দর্শনার্থী আমাদের সাইটটি ভিজিট করেছেন যা ২০১৯ সালের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি I আমি মনে করি, এটি সবার কাছে এ বিষয়টিই তুলে ধরে যে, বহুসংখ্যক বাঙালি – আসলে আমরা সবাই- হৃদয়ের ভাষায় কথা বলা পছন্দ করে।
বিশ্বের চালু ভাষাগুলো সংক্রান্ত বার্ষিক প্রকাশনা ‘এথনোলগ’ গত বছর বাংলাকে বিশ্বের ৭ম সর্বাধিক কথ্য ভাষা হিসাবে স্থান দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ২৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে।এটি বাংলা ভাষার প্রভাব এবং বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের গুরুত্বেরই প্রমাণ। আজকের এই সূচনার মাধ্যমে বাংলা হচ্ছে ‘শেয়ার আমেরিকা’ প্ল্যাটফর্মের মাত্র দশটি ভাষার একটি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে সম্মান জানানো ও উদযাপনের ক্ষেত্রে এই সাইটটি বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রদ্ধার এক দৃশ্যমান এবং প্রাত্যহিক স্মারক হিসেবে কাজ করবে।
আমরা আশা করি নতুন সাইটটি বাংলাদেশি ও আমেরিকানদের মধ্যে অনেক বিষয়ে বোঝাপড়া বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক অনুশীলন এবং সবার মানবাধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নৃত্য ও সংগীত যা কিনা নিজেদের প্রকাশ করার অন্যতম আন্তরিক উপায়।
আমার বিশ্বাস, স্বাধীনতার এই পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার মুহূর্তে আপনারা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা স্মরণ করবেন। পাশাপাশি ১৯৫২ ও ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত এদেশের অর্জনগুলোতে গর্বিত হয়ে পরবর্তী পঞ্চাশ বছর এবং তারও পরে আরও কী অর্জন হতে পারে তার প্রতীক্ষায় থাকবেন।ওই অর্জনগুলো আসবে এই দর্শকশ্রোতার মধ্যে থাকা তরুণদের মতোই নবীনের নেতৃত্বে।বিশ্বটা বদলে দেবেন আপনারাই।
এত ত্যাগ স্বীকার করে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করা তরুণ-যুবকরা অনেকটাই ছিলেন আপনাদের মতো।আপনাদের হৃদয়েও ঠিক তাদের মতোই ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতার শিখা জ্বলে। আপনারাই জাতির আশাভরসা। এটি একটা গৎবাঁধা কথা। তবে সত্যি কথাও বটে। আপনারাই তো আগামী ৫০ বছরে এই দারুণ দেশটিকে নেতৃত্ব দেবেন। দেশ এবং অন্য নাগরিকরা আপনাদের ওপরই নির্ভর করছে- আপনারা যারা বয়স ও মনের দিক থেকে তরুণ। দেশ ও জাতি অতীতে সবসময় তরুণদের ওপর নির্ভর করে এসেছে। ভবিষ্যতেও করবে।
যুক্তরাষ্ট্র দেশের জন্য আপনাদের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বাংলাদেশ এবং এর জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে প্রত্যাশী।
শেয়ারআমেরিকা বাংলা সাইটের বিষয়ে আপনাদের ভাবনা, নতুন ধারণা এবং প্রতিক্রিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। আপনারা কোন কোন বিষয় এখানে বেশি দেখতে চান তাও জানতে চাই আমরা।আমরা দেশে ও বিদেশে থাকা আমাদের বাংলাদেশি পাঠকদের সম্ভাব্য সর্বোত্তম তথ্য এবং সেবা দিতে চাই।
এখন, বাংলাভাষীদের কাছে আকর্ষণীয়, মজার এবং চিন্তা জাগানো তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২১ ও এ দেশে সংঘটিত ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করতে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও ঢাকা দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি আনন্দের সঙ্গে এই নতুন ওয়েবসাইটটি চালু করছি।
নতুন বাংলা ভাষার শেয়ার আমেরিকা ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগতম।
আজকের এই বিশেষ আয়োজনে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমরা আপনাদের এবং সব জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীদের নতুন সাইটটি ‘ঘুরে দেখার’ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।এনিয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাই।
আশা করি আপনারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।