যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্য নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্য

নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন

ঢাকা, নভেম্বর ২৮

 

  • প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম
  • সম্মানিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
  • পার্লামেন্ট শোডশয ডক্টর হাসান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
  • বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ডক্টর আবুল মঈন খান
  • বাংলাদেশ সরকারের সম্মানিত কর্মকর্তারা
  • বর্তমান ও ভবিষ্যতের নারী নেত্রীরা
  • সহকর্মীগণ, গণমাধ্যম সদস্যরা, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহিলাগণ

আসসালামু আলাইকুম, নমস্কার এবং শুভ অপরানহ্ন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে আজ এখানে আসতে পেরে ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে পেরে আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা এবং উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন ও প্রতিশ্রুতির জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

এবং এখানে উপস্থিত সকল নারীদের আমি তাদের সাহসের জন্য ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাতে চাই যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও  তারা বাঁধা পেরিয়ে একসাথে কাজ করেছে একই ধরণের চ্যালেঞ্জের সমাধান করতে।  বাংলাদেশের গণতন্ত্রে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইউ.এস. এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পেইন সঠিক অর্থেই বলে, নারীর জয়, সবার জয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিনিধিরা যে আজ এখানে উপস্থিত তা দারুণ একটি ব্যপার।  আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ থেকে এটাই আশা করি।  আমরা আশা করি সকল নাগরিক – শুধু রাজনৈতিক দলের নেতারা নয় বরং সকল স্তরের নাগরিকরা এবং সকল রাজনৈতিক দলের, শিক্ষক থেকে শুরু করে ডাক্তার, দর্জি, কৃষক – একসাথে এসে সমস্যার সমাধান করবে যা বাংলাদেশিদের প্রভাবিত করে।

আজ আমাদের সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র দৃঢ় করতে আমরা যে অগ্রগতি করেছি তা প্রতিফলিত করার এবং আমরা এখনো যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তা নিয়ে কথা বলার।  এবং যখন আমি বলছি গণতন্ত্র তখন আমি বিস্তৃত রাজনীতির প্রক্রিয়ার সকল উপাদানকে বোঝাচ্ছি।  গণতন্ত্র শুধু ব্যালট বক্সে ভোট দেয়া না, এর মধ্যে রয়েছে প্রাক-নির্বাচন, নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়।

একটি দৃঢ় গণতন্ত্রে, নাগরিকদের স্বাধীনভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রার্থীর জন্য প্রচারণা চালাতে পারা উচিত, কোন ধরণের ভয়, ঘর বা চাকরী হারানোর আশঙ্কা ছাড়া ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে পারা এবং বৈধ নির্বাচনের ফলাফলকে শ্রদ্ধা করতে পারা উচিত।

বাংলাদেশে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার, ইউএসএআইডির মাধ্যমে “স্ট্রেইনদেন পলিটিকাল ল্যান্ডস্কেপ অ্যাক্টিভিটি,” অথবা এসপিএল, কাজ করছে রাজনৈতিক দল, তরুণ এবং নারী নেত্রীদের সাথে অন্তর্ভুক্তিকরণ রাজনীতি নিয়ে।  অন্তর্ভুক্তিকরণ হচ্ছে প্রধান চাবিকাঠি।

দৃঢ় গণতন্ত্র মূল্য দেয় সকল নাগরিকের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং প্রচেষ্টা চালানো হয় প্রত্যেকের কন্ঠস্বর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।  দৃঢ় গণতন্ত্র মানবাধিকার বজায় রাখে এবং নিশ্চিত করে নারীদের সহ প্রতিটি ব্যক্তি যেন জীবনে তাদের পুরো সম্ভাবনা সম্পন্ন করতে পারে তা সে যে জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা ব্যক্তিগত মতামরেই হোক না কেন।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় করতে সমাজে নারীদের মুক্ত এবং নিরাপদ অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী, আপনারা কঠোর পরিশ্রম করেন বাংলাদেশের দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে এবং আপনারা আপনাদের স্থানীয় পর্যায়ে  গোষ্ঠিগুলোতে এবং সরকারের উচ্চপর্যায়েনেতৃত্বের পদে রয়েছেন।

কিন্তু, এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে।  উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং বেশ কিছু বিশিষ্ট নারী নেত্রী থাকা সত্ত্বেও নারীরা এখনো রাজনৈতিক দলের এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে আছে।

নির্বাচনী ব্যবস্থায় নারীদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ বিভিন্ন কারণে নিরুতসাহিত করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চা যারা তাদের পদমর্যাদার সারিতে শূন্য সংখ্যক নারী প্রতিনিধি রাখে; প্রতিবন্ধকতামূলক সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রত্যাশা; এবং লিঙ্গ ভিত্তিক এবং রাজনৈতিক সহিংসতা।

একটি দৃঢ় গণতান্ত্রিক সমাজে  সহিংসতার কোন স্থান নেই।  এর মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং সব ধরণের রাজনৈতিক সহিংসতা, যেমন শান্তিপূর্নভাবে সমাবেশ অথবা নীরব রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে বাধা।

আমি পরিষ্কার করে বলি- বাংলাদেশের গণতন্ত্রে সহিংসতার কোন স্থান নেই।  যখন নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ থাকবে, স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ণ হবে, ভোটারদের কাছে এর ফলাফলও অনেক বেশি আস্থাশীল হবে।

তাই আজ এখানে উপস্থিত নারী নেত্রীদের, সবাইকে আমি উৎসাহ দিচ্ছি নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য এবং ইতিমধ্যে যারা অংশীদারিত্ব তৈরি করেছেন, এবং ভবিষ্যতে এই নেটওয়ার্ক ও অংশীদারিত্ব আরও বিস্তার করা, এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রগতির জন্য সংলাপ, সহনশীলতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির জন্য একসাথে কাজ করা।

আপনার কন্ঠ গুরুত্বপূর্ণ, এবং রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ভাঙ্গার জন্য এবং সকল বাংলাদেশীদের প্রভাবিত করে এমন উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জসমূহকে একসাথে নিয়ে কাজ করে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য আমরা আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি আশা করি আজ আপনাদের সকলের মধ্যে একটি সফল আলোচনা হবে, এবং আমি সামনে তাকিয়ে থাকবো আমাদের অব্যাহত অংশীদারিত্বের দিকে যখন আমরা একসাথে কাজ করবো বাংলাদেশে একটি মুক্ত এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।

ধন্যবাদ !

=====================

* বক্তৃতার জন্য প্রস্তুতকৃত

In PDF (904 KB)

Adobe Reader Icon