বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেনের ভাষণ “একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল”

মার্কিন বিদেশ দফতর
মুখপাত্রের কার্যালয়
অবিলম্বে প্রকাশের জন্য রিলিজ
ডিসেম্বর 14, 2021

ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়া
জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া

শ্রীমতি কুসুমায়াতি:  মহামান্য, অ্যাম্বাস্যাডরগণ, আসিয়ান সেক্রেটারি জেনারেল, ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়ার সম্মানীয় রেক্টর, এবং ইউ.এস.-ইন্দোনেশিয়ার বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট অতিথিগণ, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহাদয়াগণ:

সবার প্রথমে এরকম সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা এখানে মিলিত হতে পারার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। ডিপোক সিটিতে ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পাসে উষ্ণ স্বাগত জানাতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।

মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ভাষণের জন্য ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়া নিজেকে ধন্য ও কৃতার্থ মনে করছে। ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়া, যে নামটি রাখা হয়েছে, তা জাতির গর্ব বহন করে চলেছে। একইসঙ্গে আমরা স্বীকার করি যে, এটি আমাদের বিশেষ অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

আমাদের লক্ষ্য হল, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং ইন্দোনেশিয়ার মানুষের সুবিধার্থে সেগুলিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেভাবে গোটা বিশ্ব আমাদের জানে।

সম্মানীয়, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহাদয়াগণ, আমাদের ঘিরে থাকা সুদূরপ্রসারী ও জটিল সমস্যার সঙ্গে আমরা পরিচিত। এগুলির মধ্যে রয়েছে, কোভিড-১৯ অতিমারী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার পরিবর্তন। এগুলির তাৎক্ষণিক কোনও সমাধান নেই। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের মনের ভাবনাকে একসূত্রে গাঁথতে গেলে, আমাদের সময় দেওয়া উচিত, এবং অনুপ্রেরণা অর্জন করতে হবে, এবং তারপর পরিবর্তনের জন্য সহযোগিতা, নীতি এবং কার্যপ্রণালী তৈরি করতে হবে।

আজ আমাদের সামনে এক অনন্য মুহূর্ত হাজির হয়েছে। মাননীয় বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর ভাবনা প্রকাশের জন্য আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষজ্ঞ আমাদের এখানে রয়েছেন, এবং আমার প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করি যে, বিবিধমুখী জ্ঞান একটি লক্ষ্যের দিকে এগোবে। তা হল: আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখা, একইসঙ্গে বর্তমানে আমরা যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, সেগুলির সমাধান করা।

মাননীয়, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহাদয়াগণ, সম্মানীয় মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে স্বাগত জানান। (হাততালি)

বিদেশমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন:  সবাইকে সুপ্রভাত। আপনাদের সঙ্গে থাকার এ এক অনন্য সুন্দর মুহূর্ত। এবং ড. কুসুমায়াতি, আপনার খোলামেলা পরিচয়পর্বের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেল্থের প্রথম মহিলা ডিন সহ দশকের পর দশক ধরে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পরবর্তী প্রজন্মের ডাক্তার ও নার্সদের শিক্ষাদানের জন্য আপনাকে তার চেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেব। প্রজননমূলক স্বাস্থ্যের ওপর আপনার গবেষণা, ইন্দোনেশিয়ার কোভিড টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বাদান, আপনার কমিউনিটির প্রতি আপনার ত্যাগ, সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক, এবং আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। (হাততালি)

এবং সবাইকে গুড মর্নিং। সেলামত পাগি । জাকার্তায় ফেরা সত্যিই এক অনির্বচনীয় মুহূর্ত। গত সরকারের আমলে আমি যখন ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলাম, তখন বিভিন্ন কারণে আমি বেশ কয়েকবার জাকার্তায় এসেছি, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে আমি এই সুযোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

এবং যাঁরা এই ঘরে রয়েছেন, সেই পড়ুয়াদের বলছি, এই ক্যাম্পাসে আবার আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি জানি, আপনাদের অনেকে বেশ কিছু সময় দূর থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং ক্লাসরুমে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন, এবং আমি খুশি যে, আপনাদের এখানে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা একটা উপলক্ষ পেয়েছি। আমি জানি, চিকিৎসক, আপনি ও টাস্ক ফোর্স চায়, ছাত্রছাত্রীরা ফিরে আসুক, এবং আমি জানি, তার জন্য আপনারা কীভাবে মুখিয়ে রয়েছেন।

আমি এখানে, আমরা এখানে, কারণ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যা ঘটে, একুশ শতকে গোটা বিশ্বে অন্য যে কোনও অঞ্চলের চেয়ে বেশি অভিমুখ তৈরি করে দেয়।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হল, এই গ্রহে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশশীল এলাকা। বিশ্ব অর্থনীতির ৬০ শতাংশ, সমস্ত ধরনের আর্থিক বৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ এর সঙ্গে যুক্ত। বিশ্বের অর্ধেক মানুষের বাস এই অঞ্চলে, এবং ১৫টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে সাতটি রয়েছে এখানে।

এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে এটি বৈচিত্র্যময়, ৩০০০-এর বেশি ভাষা, অসংখ্য ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ, দুটি সমুদ্র ও তিনটি মহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন।

এমনকি ইন্দোনেশিয়ার মতো একটি একক দেশে বৈচিত্র্য ছাড়াও রয়েছে সূক্ষ কারুর কাজ, যা অর্জন করা খুব কঠিন। এবং এই দেশের লক্ষ্য হল ― ভিন্নেকা টুঙ্গল ইকা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ― যা একজন আমেরিকানের কাছে অতি পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা বলি, ই প্লুরিবাস উনাম, অনেকের মধ্যে একটি। এটা হল, একই ভাবনা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ছিল, এবং সবসময় ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির পাশে থাকবে। এটা ভৌগোলিক সত্য যে, আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল এলাকার রাজ্যগুলি থেকে গুয়াম পর্যন্ত, প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে আমাদের এলাকা ছড়িয়ে রয়েছে। এবং গত দুই শতকের বাণিজ্য ও এলাকায় অন্যান্য চুক্তি থেকে এটাই ঐতিহাসিক বাস্তবের রূপ নিয়েছে।

আজ আমেরিকার শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারদের অর্ধেকই হল, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের। আমাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রফতানি বাণিজ্যের গন্তব্য হল, এই অঞ্চল, যা আমেরিকায় ৯০০ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উৎস, এবং আমাদের ৫০টি রাজ্যে লক্ষ লক্ষ চাকরির সংস্থান করছে। এবং আমেরিকার অন্য এলাকার তুলনায় এখানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, যার মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে, এই অঞ্চলের সমৃদ্ধির পক্ষে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং যার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হচ্ছে।

এবং অবশ্যই আমরা আমাদের দেশবাসীকে বন্ধনে আবদ্ধ করেছি, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ মিলিয়নের বেশি এশিয় আমেরিকানের বসবাস, অ্যাম্বাস্যাডর সান কিম সহ, যখন তিনি দেশের সেবা করেন না, কিংবা বিশ্বের অন্যত্র থাকেন না, গত তিন দশক ধরে তিনি আমেরিকাতেই রয়েছেন।

অতিমারীর আগে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭৭৫,০০০ ছাত্রছাত্রী আমেরিকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করত। এবং আপনার মার্কিন সহপাঠীদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ইউনিভার্সিটাস ইন্দোনেশিয়ায় এসেছেন পড়াশোনার জন্য, কাজ করার জন্য, বাঁচার জন্য, একজন আছেন, যিনি আমাদের প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন।

একটি ইন্দোনেশীয় প্রবাদ রয়েছে ― যা শিশুদের অল্প বয়স থেকে পড়ানো হয় : “আমাদের দুটি কান রয়েছে, কিন্তু মুখ একটি।” এর অর্থ হল, কথা বলা বা কিছু করার আগে আমাদের শুনতে হবে। এবং ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকার মানুষের কথা শোনার জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি, এই অঞ্চল নিয়ে আপনাদের ভিশন ও এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শুনেছি।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই বিদেশি রাষ্ট্রনেতা সহ এই অঞ্চলের নেতাদের আমাদের দেশে স্বাগত জানিয়েছি। বিদেশ মন্ত্রী রেন্টো সহ সমস্ত বিদেশি মন্ত্রীদের সঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমি বৈঠক করেছি। এবং আমরা আপনাদের অঞ্চলে এসেছি ― ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস, প্রতিরক্ষা সচিব অস্টিন, বাণিজ্য সচিব রাইমোন্ডো, এবং আরও অনেক ক্যাবিনেট সদস্য, পররাষ্ট্র দফতরের পদস্থ অফিশিয়ালদের কথা উল্লেখ নাই বা করলাম।

প্রেসিডেন্ট এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলির নেতা-পর্যায়ের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন : অ্যাপেক; ইউ. এস.-আসিয়ান এবং ইস্ট এশিয়া সামিট; এবং ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত চতুর্দেশীয় বৈঠক বা কোয়াড। মেকং- ইউ. এস. পার্টনারশিপ মিনিস্টেরিয়াল সহ আমিও অন্য দেশের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে একই কাজ করেছি। এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন গ্লাসগোয় সিওপি২৬-এর ফাঁকে প্রেসিডেন্ট জোকোয়ির সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক সহ বিদেশে গিয়েও ইন্দো-প্যাসিফিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

কিন্তু আমরা শুধুমাত্র নেতাদের কথা শুনেছি না। এই অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা আমাদের দূতাবাস, কনস্যুলেট, আমাদের কূটনীতিকদের মাধ্যমে সব শ্রেণির মানুষের মতামত শোনার জন্য দুই কান খোলা রেখেছি ― ছাত্রছাত্রী, আন্দোলনকর্মী, শিক্ষাবিদ, উদ্যোগী, সবাই রয়েছেন।

এবং এটি অনন্যসাধারণ বৈচিত্র্যময় এলাকা, যেখানে সুনির্দিষ্ট স্বার্থ, সুনির্দিষ্ট চিন্তা-ভাবনা রয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে যা শুনছি এবং আমাদের নিজস্ব যে ভাবনা, তার মধ্যে বিরাট মিল খুঁজে পাচ্ছি।

এই অঞ্চলের মানুষ ও সরকার আরও চায়, তাদের নিজেদের আমজনতার জন্য আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা চায়। নিজেদের দেশের মধ্যে, তাঁদের দেশবাসীর মধ্যে, গোটা বিশ্বের মধ্যে সংযুক্তির আরও সুযোগ খোঁজে তাঁরা। অতিমারীর মতো সঙ্কট, যা নিয়ে আমরা বেঁচে রয়েছি, তার মোকাবিলায় আরও ভালো প্রস্তুতি চায় তাঁরা। তাঁরা শান্তি ও স্থায়িত্ব চায়। তাঁরা আমেরিকার আরও উপস্থিতি চায় এবং আরও কাজে যুক্ত থাকতে চায়, তাঁরা আরও মুক্ত এবং সর্বোপরি, তাঁরা আরও খোলামেলা অঞ্চল চায়।

তাই আজ আমি বলতে চাই যে, সেই লক্ষ্যের পথে যাত্রা শুরুর চেষ্টা করুন, এবং আমরা কীভাবে একসঙ্গে চলতে পারি, সেই ভাবনা বাস্তবায়িত করুন। এবং পাঁচটি মূল বিষয়ের দিকে আমি আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমে, আমরা অবাধ ও খোলামেলা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে এগোবো।

এখন, মুক্ত ও খোলামেলা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি, কিন্তু সেটা বলতে কী বোঝায়, আমরা প্রায়ই তা ব্যাখ্যা করি না। স্বাধীনতা হচ্ছে, আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখার সক্ষমতা এবং আপনার কমিউনিটি ও দেশে যা ঘটছে, তা নিয়ে বলা, আপনি কে বা আপনাকে কে চেনে, সেটা কোনও বিষয় নয়। এবং স্বাভাবিকভাবেই খোলামেলা ভাবনা আসে স্বাধীনতা থেকেই। অবাধ স্থানগুলি নতুন তথ্য ও ভাবনার জন্য খোলা থাকে। সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবনযাত্রা সবকিছুই অবাধ। সেখানে সমালোচনা, আত্ম-বিশ্লেষণ সবকিছু অবাধ, সেইসঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য।

যখন আমরা বলি যে, আমরা অবাধ ও খোলামেলা ইন্দো-প্যাসিফিক চাই, আমরা ব্যক্তিগত স্তরকে বোঝাতে চাই, যেখানে দৈনন্দিন জীবনে মানুষ মুক্ত থাকবে এবং সমাজে অবাধভাবে বসবাস করবে। আমরা বোঝাতে চাই যে, রাষ্ট্রীয় স্তরে যে কোনও দেশ তার নিজের পথ ও নিজের অংশীদারদের বেছে নিতে পারবে। এবং আঞ্চলিক স্তরে আমরা বোঝায় যে, এই অংশে বিশ্বের যে কোনও সমস্যা খোলামেলাভাবে সমাধান করা হবে, শাসনকার্যে স্বচ্ছতা থাকবে এবং সব ভাবনা ভালোভাবে, অবাধভাবে প্রয়োগ করা হবে। স্থলে, সাইবারস্পেসে এবং সমুদ্রে মানুষ অবাধে চলাফেরা করতে পারবে।

আমাদের সবাইকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চল সংঘাতমুক্ত এবং সবার কাছে চলাফেরাযোগ্য। এটা অঞ্চলের মানুষের পক্ষে ভালো। এটা আমেরিকানদের পক্ষে ভালো, কারণ, ইতিহাস বলছে, যখন এই অঞ্চল অবাধ ও মুক্ত থেকেছে, আমেরিকা অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ থেকেছে এবং বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই এই ভাবনার কথা উপলব্ধি করে আমরা এই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবো।

দুর্নীতি-বিরোধিতা এবং স্বচ্ছ গ্রুপ, তদন্তমূলক সাংবাদিকতা, শ্রীলঙ্কার অ্যাডভোকাটা ইনস্টিটিউট-এর মতো থিঙ্ক-ট্যাঙ্ককে সমর্থন জানিয়ে যাব। আমাদের সমর্থন নিয়েই এই ইনস্টিটিউট ব্যাঙ্ক ও এয়ারলাইন্সের মতো বিপুল ক্ষতিতে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পাবলিক রেজিস্ট্রি তৈরি করেছে, এবং সংস্কারের পথ বাতলে দিয়েছে।

ভিক্টর সোট্টোর মতো আমরাও সরকারের অংশীদার খুঁজছি। তিনি ফিলিপিন্সের পাসিগ শহরের মেয়র। ভিক্টর দুর্নীতির রিপোর্ট করার জন্য ২৪/৭ হটলাইন বসিয়েছেন। এর ফলে জনসাধারণের কাজের বরাতে আরও স্বচ্ছতা এসেছে, শহরের খরচের ব্যাপারে কমিউনিটি-ভিত্তিক সংগঠনগুলি বক্তব্য গুরুত্ব পাচ্ছে। চলতি বছরের গোড়ার দিকে ঘোষিত বিদেশ দফতরের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি-বিরোধী প্রথম গ্রুপের তিনি অংশ হয়ে উঠেছেন।

এবং আমাদের সহযোগী গণতান্ত্রিক দেশগুলির কাছ থেকে আমরা গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ অনুশীলনের পাঠ নিতে থাকবো। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডাকা সামিট ফর ডেমোক্র্যাসির মূল ভাবনা ছিল এটাই, যেখানে প্রেসিডেন্ট জোকোয়ি বক্তব্য পেশ করেছেন ― যদিও তিনি ছিলেন প্রথম বক্তা ― এবং ইন্দোনেশিয়ার বালি ডেমোক্র্যাসি ফোরাম, যা চতু্র্দশবারের জন্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়, এবং সেখানে আমার বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছিল।

আমরা সেইসব নেতার বিরুদ্ধে দাঁড়াব, যাঁরা নিজেদের দেশবাসীর অধিকারকে সম্মান করে না, মা এখন আমরা বার্মায় দেখতে পাচ্ছি। লাগামহীন হিংসা, অন্যায়ভাবে আটকে রাখা ব্যক্তিদের মুক্তি, অবাধ চলাফেরা, বার্মাকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে আমাদের সহযোগী ও অংশীদারদের নিয়ে একযোগে চাপ তৈরি করে যাব।

আসিয়ান ফাইভ-পয়েন্ট কনসেনসাস বা পাঁচ-দফার সহমত তৈরি করেছে, এবং এতে বার্মার মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্য থেকে আমরা পিছু হটবো না।

অন্য পথ হল, মুক্ত, অবাধে তথ্য বিনিময়, সুরক্ষিত ও বিশ্বস্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং যারা ইন্টারনেটকে আরও আবদ্ধ, আরও ভগ্ন, ও কম নিরাপদ করে তুলেছে, তাদের বিরুদ্ধে বলা। এইসব নীতিসমূহকে রক্ষার জন্য আমরা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করব, এবং নিরাপদ, বিশ্বস্ত ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবো। চলতি বছরের শুরুর দিকে মুন-বাইডেন লিডার্স সামিটে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫জি এবং ৬জি নেটওয়ার্কের সুরক্ষার ওপর গবেষণা ও উন্নয়ন সহ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি লগ্নির কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

সবশেষে, আমরা সহযোগী ও অংশীদারদের সঙ্গে মিলিতভাবে নিয়মকানুন-ভিত্তিক অর্ডার রক্ষার লক্ষ্যে কাজ করব, যা দশকের পর দশক ধরে এই অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ চলাফেরার উপযুক্ত রেখেছে।

এবং আমাকে একটা জিনিস পরিষ্কার করতে দিন : নিয়মকানুন-ভিত্তিক অর্ডারের অর্থ এই নয় যে, কোনও দেশকে দমিয়ে রাখা। বরং, এর অর্থ হল, সবদেশকে নিজেদের পথ বেছে নেওয়ার অধিকার সুরক্ষিত রাখা, সংঘাতমুক্ত রাখা, দমনপীড়নমুক্ত রাখা। এটি মার্কিন-কেন্দ্রিক বা চিন-কেন্দ্রিক অঞ্চলের প্রসঙ্গ নয়। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের নিজস্ব বিষয়। বরং, এটি অধিকারকে তুলে ধরা এবং সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পর্বের জন্য চুক্তি এবং যার সঙ্গে পৃথিবী কখনও পরিচিত হয়নি।

সেই কারণে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে, উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মেকং নদী থেকে প্যাসিফিক আইল্যান্ড, বেজিংয়ের আগ্রাসন নীতি, মুক্ত সমুদ্রকে নিজেদের বলে দাবি করা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে ভর্তুকির মাধ্যমে অবাধ বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করা, রফতানি অস্বীকার করা, বা যে সব দেশের সঙ্গে নীতি খাপ খায় না, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা, অবৈধ, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মৎস্য শিকার। এই অঞ্চলের দেশগুলি এই আচরণের পরিবর্তন চাই।

আমরাও চাই, এবং সেই কারণে দক্ষিণ চিন সমুদ্র, যেখানে, চিনের আগ্রাসনের ফলে প্রতি বছর ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে, সেখানে আমরা আমরা অবাধ চলাচল সুনিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

এখানে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, ৩ ট্রিলিয়ন মানুষের জীবিকা এবং গোটা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাল থাকার বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত। যখন মুক্ত সমুদ্রে অবাধ বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন তার অর্থ হল, চাষিদের তাঁদের শিপিংয়ের কাজ আটকে দেওয়া হচ্ছে; ফ্যাক্টরিগুলিকে মাইক্রোচিপস পাঠাতে দেওয়া হচ্ছে না; হাসপাতালগুলিকে জীবনদায়ী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না।

পাঁচ বছর আগে, আন্তর্জাতিক আইন অগ্রাহ্য করে দক্ষিণ চিন সমুদ্রে চিনের চালানো বেআইনি সম্প্রসারণবাদ বাতিল করে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সর্বসম্মতিভাবে ও আইনি বাধ্যবাধকতার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। আমরা এবং অন্য দেশগুলি, দক্ষিণ চিন সমুদ্রের দাবিদাররা সহ, এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থায়িত্বের প্রশ্নেও আমাদের স্বার্থ রয়েছে, যা আমাদের দীর্ঘকালের অঙ্গীকারের সঙ্গে জড়িত।

দ্বিতীয় হল, এই অঞ্চলের ভিতরে এবং বাইরে আমরা শক্তিশালী যোগাযোগ গড়ে তুলবো। জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের চুক্তিকে আরও মজবুত করবো। এই বন্ধন এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলবে। এই সহযোগীদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়াবো। এর মধ্যে একটি হল, যা আমরা করেছি, মার্কিন-জাপান ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা এবং অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের সঙ্গে নতুন ঐতিহাসিক নিরাপত্তা সহযোগিতার চুক্তি। আমাদের সহযোগী ও অংশীদারদের মধ্যে আরও বন্ধন গড়ে তোলার পথ খুঁজছি, আমরা কোয়াডকেও ঢেলে সাজিয়েছি। সব কিছুই করা হচ্ছে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে শক্তিশালী ও স্বাধীন আসিয়ান গড়ে তোলার লক্ষ্যে।

কেন্দ্রীয়ভাবে আসিয়ান অর্থ হল, আমরা একসঙ্গে কাজ করবো এবং আসিয়ানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে আমাদের কাজকে আরও গভীর করবো, ইন্দো-প্যাসিফিকে আমাদের ভিশন ও আসিয়ানের ভাবনাকে একসূত্রে গাঁথবো।

অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আসিয়ানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে, জনস্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কৌশলগত বোঝাপড়া কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই লক্ষ্যে আগামী মাসগুলিতে প্রেসিডেন্ট আমেরিকায় আসিয়ান নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবেন।

এই অঞ্চলে অন্য দেশগুলির সঙ্গে আমরা কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও মজবুত করছি: সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, এবং অবশ্যই, ইন্দোনেশিয়া। এবং সেই কারণেই আমি এই সফরে এসেছি।

আমাদের দেশগুলোর বাসিন্দার মধ্যেও বোঝাপড়া মজবুত করছি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান প্রজন্মের নেতাদের ক্ষমতায়নের কর্মসূচি, ওয়াইএসইএএলআই-তে ১৫০,০০০ বেশি সদস্য রয়েছেন এবং তা বাড়ছে।

অবশেষে, অঞ্চলের গণ্ডি সরিয়ে, বিশেষত ইউরোপের মতো, ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ককে সহযোগী ও অংশীদারমূলক ব্যবস্থার ওপর দাঁড় করাতে আমরা কাজ করবো। আমাদের ভিশনের সঙ্গে তাল রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কথা জানিয়েছে। ন্যাটোয় ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে আমরা কৌশলগত ধারণাকে আরও বদলাচ্ছি এবং নতুন বিপদ, যেমন আবহাওয়া সঙ্কট জনিত নিরাপত্তা। আসিয়ানকে পার্টনারদের অন্তরে জায়গা করে দিতে আমরা কাজ করে চলেছি। কয়েকদিন আগে, যখন জি-৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মন্ত্রীরা ব্রিটেনে বৈঠক করছিলেন এবং আসিয়ান দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রথমবারের জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন।

একটি সহজ কারণে আমরা এটা করছি : এটি আমাদের সবচেয়ে বড় জমায়েতের সুযোগ দেয়, যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর জোট, যে কোনও সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়া, যে কোনও লক্ষ্যের জন্য কাজ করা। যত বেশি দেশ অভিন্ন স্বার্থের জন্য একজোট হবে, আমরা ততই শক্তিশালী হব।

তৃতীয়ত, আমরা বৃহত্তর-ভিত্তিক সমৃদ্ধিকে তুলে ধরবো। ইন্দো-প্যাসিফিকে আমেরিকা ইতিমধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ করেছে। এই অঞ্চল জোরের সঙ্গে এবং পরিষ্কার করে বলেছে, তারা আমাদের কাছে আরও চায়। আমরা সেই ডাকে সাড়া দিতে চাই। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে ট্রেড ও ডিজিটাল অর্থনীতি, প্রযুক্তি, ধারাবাহিক সরবরাহ চেইন, ডি-কার্বোনাইজেশন ও ক্লিন এনার্জি, পরিকাঠামো, কর্মীদের মান ও অন্যান্য স্বার্থ সহ লক্ষ্যপূরণের ব্যাপারে ইন্দো-প্যাসিফিক আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি।

আমাদের কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আমেরিকান ফার্মগুলো নিজেরা পারছে না, আমরা সেই সুযোগ চিহ্নিত করবো, এবং এর ফলে বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে তাদের কাজ সহজ হবে এবং নতুন নতুন জায়গা ও নতুন নতুন ক্ষেত্রে তারা পুঁজি ঢালতে পারবে। ইন্দো-প্যাসিফিকে আমাদের কূটনৈতিক পদগুলি, আমাদের দূতাবাসগুলি ইতিমধ্যে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে, এবং আমরা ক্ষয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছি, যাতে তারা আরও কিছু করতে পারে। এ বছরের ইন্দো-প্যাসিফি বিজনেস ফোরামে এই অঞ্চলের ২,৩০০-র বেশি ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন, যা ভারতের সঙ্গে মিলিতভাবে করা হয়েছিল, এবং যেখানে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেসরকারি প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল।

ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রগতির কথা ভেবে ডেটা গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা নিয়ম তৈরি করবো, তবে তা করা হবে আমাদের মূল্যবোধ ও আমাদের মানুষের অবাধ সুযোগের কথা ভেবে। কারণ, আমরা যদি সেগুলিকে একটা চেহারা না দিই, তবে অন্যরা তা করবে। এবং এখানে একটা ভালো সুযোগ রয়েছে, যদি অন্যরা করে, তবে তারা এমনভাবে করবে, যা আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ ও মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না।

এই অঞ্চলে কীভাবে আমরা অভিন্ন অগ্রগতির পথ তৈরি করতে পারি, নভেম্বরে অ্যাপেক বৈঠকে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার স্পষ্ট রূপরেখা বেঁধে দিয়েছিলেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, তিনি খোলামেলা, অন্তর্চালিত, বিশ্বস্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন, এবং সাইবার নিরাপত্তায় লগ্নিতে আমাদের শক্তিশালী স্বার্থ ও ডিজিটাল আর্থিক স্ট্যান্ডার্ডের উন্নতি ঘটানো, যা ভবিষ্যতে লড়াইয়ে আমাদের অর্থনীতিকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবে। এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি টাই ও আমি নভেম্বরে অ্যাপেক-এ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যৌথভাবে আমাদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম, তখন আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা সুনিশ্চিত করার কথা বলেছিলাম।

আমরাও অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যের কথা তুলে ধরবো। আসিয়ান সিঙ্গেল উইন্ডো বা এক জানালা নীতির এটাই মূল কথা, এটা একটা প্রকল্প, যেখানে এই অঞ্চলে কাস্টমস ক্লিয়ারিং-এর জন্য একটি সিঙ্গেল স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছিল আমেরিকা। ব্যবসায়িক খরচ ও ক্রেতার জন্য দাম কমিয়ে একটি আরও স্বচ্ছ ও সুরক্ষিত বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এটি সাহায্য করেছিল। এবং এখন কাগজপত্রের বদলে ডিজিটাল কাস্টমস ব্যবস্থা সীমান্তে বাণিজ্য চলাচলকে সম্ভব করে তুলেছে, এমনকি লকডাউনের সময়েও।

অতিমারীর প্রথম বছরে, যে সব দেশ এই প্ল্যাটফর্মে খুব সক্রিয় ছিল, তাদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল, যখন অন্য অধিকাংশ সীমান্তে বাণিজ্যের পতন দেখা গিয়েছিল। এবং অক্টোবরে ইউ. এস.- আসিয়ান বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক জানালা নীতিতে অতিরিক্ত মার্কিন সমর্থনের অঙ্গীকার করেছিলেন। আমাদের সরবরাহ চেইনকে আরও নিরাপদ এবং আরও নিরবচ্ছিন্ন করতে আমরা সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবো। আমার মনে হয়, মাস্ক ও মাইক্রোচিপসের ঘাটতি এবং বন্দরে মজুত করা সহ অতিমারীর মাধ্যমে আমরা দেখেছি, তা কতটা ক্ষতিকর ও মারাত্মক হতে পারে।

যাবতীয় বাধা কাটানো ও ভবিষ্যতের ধাক্কা সামাল দিতে আরও সহনশীলতা গড়ে তুলতে আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চেইন নিয়ে একটি লিডার্স সামিট ডেকেছেন। এই অঞ্চল সফরের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসও এটিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছিলেন। বাণিজ্য সচিব রাইমোন্ডো তাঁর সাম্প্রতিক সফরের সময় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি টাই আন্তঃএজেন্সি সাপ্লাই চেইন টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন, এবং তাঁর জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও ভারত সফরকালে বিষয়টি তুলেছেন। নতুন বছরে বাণিজ্য সচিব জিনা রাইমোন্ডো ও আমি গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ফোরামে এই ইস্যুগুলি আলোচনার জন্য বিশ্বের সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের নেতাদের বৈঠকে ডাকবো। বিশ্বের উৎপাদন ও বাণিজ্য হাব হিসেবে এই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এইসব প্রচেষ্টার মূল বিষয় হতে চলেছে।

অবশেষে, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যবধান কমাতে আমরা পরস্পরকে সাহায্য করবো। এই অঞ্চল ও গোটা বিশ্বে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে একটা বড় ব্যবধান রয়েছে এবং যা বর্তমানে কমানোর চেষ্টা চলছে। বন্দর, রাস্তা, বৈদ্যুতিক গ্রিড, ব্রডব্যান্ড ― সব কিছুই বিশ্ব ট্রেড, বাণিজ্য, যোগাযোগ, সুযোগ, সমৃদ্ধির জন্য ব্লক তৈরি করছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিকাশের জন্য এগুলি আবশ্যিক। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিকে সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প ক্ষেত্র, শ্রমিক ও কমিউনিটির কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা শুনতে পাচ্ছি, কিছু ঘটলেই বলা হচ্ছে, পরিকাঠামো ঠিক নেই, যেমন, এটি অস্বচ্ছভাবে, দুর্নীতির মাধ্যমে করা হয়েছে, কিংবা, বিদেশি সংস্থা তৈরি করেছে, যারা বাইরে থেকে শ্রমিক আমদানি করে, সম্পদ চুষে নেয়, পরিবেশ দূষিত করে, এবং কমিউনিটিকে ঋণের মুখে ঠেলে দেয়।

ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলি ভালো পরিকাঠামো চায়। কিন্তু, অনেকে মনে করেন, এটি অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ, অথবা আদৌ কোনও চুক্তি না করে অন্যরা শর্ত চাপিয়ে খারাপ চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাই আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে কাজ করবো, যাতে উচ্চ গুণমান, উচ্চ মানের পরিকাঠামো, যা মানুষ পাওয়ার যোগ্য, তা দেওয়া যায়। ঘটনা হল, আমরা ইতিমধ্যে তা করে চলেছি।

মাত্র এই সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে মিলিতভাবে আমরা ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া, কিরিবাতি, এবং নাউরুর সঙ্গে প্যাসিফিক দেশগুলির ইন্টারনেট সংযোগের উন্নতির লক্ষ্যে সমুদ্রের নীচে নতুন কেবল্ বা তার বসানোর লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব ঘোষণা করেছি। এবং ২০১৫ থেকে কোয়াড সদস্যরা এই অঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারি-মদতপুষ্ট আর্থিক লগ্নির ব্যবস্থা করেছে। গ্রামোন্নয়ন থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৩০টির বেশি দেশের হাজার হাজার প্রকল্প। এতে কয়েক মিলিয়ন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।

আরও লগ্নির পথকে ত্ব‍রান্বিত করতে কোয়াড সম্প্রতি একটি পরিকাঠামো সমন্বয় গোষ্ঠী তৈরি করেছে, এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিকাঠামো ও অন্যান্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রে অংশীদারের খোঁজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর চেয়েও বেশি কিছু করবে।জুনে জি-৭ শীর্ষ বৈঠকে বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড বা ভালো বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে গঠিত স্বচ্ছ, চলমান অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে যা আগামী বছরগুলিতে কয়েকশো বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এবং জি-২০, ওইসিডি ও অন্যদের বেঁধে দেওয়া মানদণ্ড মেনে উচ্চ মানের পরিকাঠামো তৈরি ও অতিরিক্ত লগ্নিকারী টানতে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে আমরা ব্লু ডট নেটওয়ার্ক চালু করেছি।

চতুর্থত, আমরা আরও নিরবচ্ছিন্ন ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তুলতে সাহায্য করবো। কোভিড-১৯ অতিমারী ও আবহাওয়ার সঙ্কট এই কাজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার ১৪৩,০০০-রও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু সহ অতিমারী এই অঞ্চলে শয়ে শয়ে, হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। কলকারখানা বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে পর্যটন স্তব্ধ হয়ে যাওয়া, এটি গোটা অর্থ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।

আমেরিকা প্রতিটি পদক্ষেপে এই অঞ্চলের মানুষের পাশে আছে, এমনকি আমরা নিজেদের ঘরেও অতিমারীর সঙ্গে লড়ছি। গোটা বিশ্বে আমেরিকা ৩০০ মিলিয়নের বেশি নিরাপদ, কার্যকর টিকা বিলি করেছে, ইন্দো-প্যাসিফিকে ১০০ মিলিয়নের বেশি ডোজ পাঠিয়েছি। এবং এর ২৫ মিলিয়নের বেশি এসেছে এই ইন্দোনেশিয়ায়। আগামী বছরের শেষে, আমরা বিশ্বকে ১.২ বিলিয়ন ডোজের বেশি টিকা দান করবো। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী বা পিপিই থেকে হাসপাতালের অক্সিজেন সবকিছুর জন্য ইন্দোনেশিয়াকে দেওয়া ৭৭ মিলিয়ন সাহায্য সহ এই অঞ্চলে আমরা ২.৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অতিরিক্ত সহায়তা দিয়েছি। এবং আমরা বিনা চার্জে এই সাহায্য দিচ্ছি, এর কোনও কিছু যুক্ত করা হচ্ছে না। কোভ্যাক্স-এর মাধ্যমে এই অনুদানের বেশিরভাগ অংশ দিয়ে আমরা রাজনীতি নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী সমান বণ্টন সুনিশ্চিত করেছি।

একইসঙ্গে অতিমারীর অবসান ঘটাতে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। কোয়াড ভ্য্যাক্সিন পার্টনারশিপ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থ, উৎপাদন, বণ্টন এবং বেশি সংখ্যক টিকা যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া, সবক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। অনেক দেশও এগিয়ে এসেছে। সম্প্রতি ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন অতিরিক্ত ডোজ তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং থাইল্যান্ডও তাদের উৎপাদন বাড়াচ্ছে।

আমরা বাইরের বেসরকারি ক্ষেত্রের পিছনেও ছুটছি। গত মাসে আমার ডাকা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমরা গ্লোবল কোভিড কোর চালু করেছি। এটি হল, প্রথম সারির কোম্পানিগুলির জোট, যারা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশেষজ্ঞ, সরঞ্জাম, এবং লজিস্টিক ও ভ্যাকসিন সহায়তা দেবে, শেষ দফা সহ, এবং যা বাহুতে দেওয়া বেশ জটিল হয়ে দেখা দিয়েছিল। এটা আমরা গোটা বিশ্বে দেখছি, যা বেড়েই চলেছে, যেখানে টিকার উৎপাদন বেড়েছে, সেগুলি বাইরে আনাও হচ্ছে, কিন্তু শেষ পর্বে জটিলতার কারণে সেগুলি বাহুতে দেওয়া যাচ্ছে না, লজিস্টিক প্রয়োজন অনুযায়ী মেটানো হয়েছে, এবং তার ওপরই আমরা বেশি নজর দিচ্ছি।

একইসঙ্গে আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছি, পরবর্তী অতিমারী রুখতে, চিহ্নিত করতে, এবং সাড়া দিতে ইন্দো-প্যাসিফিক, গোটা বিশ্বে আমরা অপেক্ষাকৃত ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। এবং বিষয়টি হল, আমরা জানি, কীভাবে এটি করতে হয়। এই অঞ্চলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। শুধুমাত্র আসিয়ানেই গত ২০ বছরে আমরা ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ জনস্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করেছি। এবং এর জন্য উভয়ক্ষেত্রেই আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে, যেমন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও গভীর সম্পর্ক, যা আমরা এই ভূমিতে তৈরি করেছি।

আসিয়ানের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন যে, ইউ. এস.- আসিয়ান হেল্থ ফিউচার ইনিশিয়েটিভে আমরা ৪০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে, এবং এই উদ্যোগ যৌথ গবেষণায় গতি আনা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, স্বাস্থ্য পেশায় উদীয়মান প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজকে ত্বরান্বিত করবে।

আমরা আসিয়ান পাবলিক হেল্থ এমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেশন সিস্টেমের উন্নয়নকেও সমর্থন জানাচ্ছি। এটি এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সমন্বয় রক্ষায় সাহায্য করবে। এ বছরের গরমকালে হ্যানয়ে ইউ. এস. সেন্টার ফর ডিজিজ অ্যান্ড কন্ট্রোল-এর অধীন চালু হওয়া প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় আঞ্চলিক কার্যালয়টি ইতিমধ্যে এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে।

আবহাওয়ার সঙ্কট অবশ্যই বিশ্বের কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ, যা আমাদের একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ইন্দো-প্যাসিফিকের মানুষ ইতিমধ্যে বিপর্যয়জনিত প্রভাব অনুভব করছেন: বিশ্বের ৭০ শতাংশ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই অঞ্চলে আঘাত হেনেছে, এবং ২০১৯-এ এই অঞ্চলে ৯০ মিলিয়নের বেশি মানুষ আবহাওয়া-জনিত বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। পরের বছরে আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল এলাকায়, দাবানলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ছটি দাবানলের মধ্যে পাঁচটিই হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়।

এখন এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নিঃসরণের জন্য দায়ী অনেকে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন, যেমন সিওপি২৬-এ আমরা তাদের যে অঙ্গীকার দেখেছিলাম। গ্লাসগোয় আগামী দশকে নির্গমন ২০ শতাংশ কমাতে ইন্দোনেশিয়া সহ ইন্দো-প্যাসিফিকের ১৫টি দেশ গ্লোবল মিথেন অঙ্গীকারে সই করেছিল। যদি সব বড় নির্গমনকারী আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়, তাহলে প্রতিটি জাহাজকে সমুদ্রের বাইরে নিয়ে আসা ও প্রতিটি বিমানকে আকাশের বাইরে নিয়ে আসার চেয়ে উষ্ণায়ন কমানোর পক্ষে তা বেশি সহায়ক হবে।

কিন্তু আবহাওয়াকে বিপদের প্রিজম দিয়ে দেখলে ভুল হবে। কেন, তা এখানে বলছি: এই গ্রহের প্রতিটি দেশে নির্গমন কমাতে হবে এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এবং নতুন প্রযুক্তি ও নতুন শিল্পের প্রয়োজনীয় রূপান্তর এক প্রজন্মের কাছে নতুন, ভালো বেতনের চাকরির সুযোগ একবারই এনে দেয়।

আমরা বিশ্বাস করি যে, ইন্দো-প্যাসিফিকে সুযোগ দৌড়ে বেড়াচ্ছে, এবং তা ধরার জন্য আমরা ইতিমধ্যে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজও করে চলেছি। গত পাঁচ বছরে আমেরিকা একাই এই অঞ্চলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি লগ্নি করেছে। আমরা যেহেতু এগিয়ে এসেছি, আমরা সহযোগীদের এক অনন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি: বহুমাত্রিক সংগঠন ও আইনজীবীদের গ্রুপ, ব্যবসায়ী ও মানবপ্রেমী, গবেষক ও কারিগরী বিশেষজ্ঞ।

ক্লিন এজ ইনিশিয়েটিভের কথা ভাবুন, যা আমরা এই মাসে চালু করতে চলেছি, যেটি এই অঞ্চলে ক্লিন এনার্জির সমাধানের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন সরকার এবং বেসরকারি ক্ষেত্রকে একত্র করবে। ইউ. এস.- আসিয়ান ক্লাইমেট ফিউচার ইনিশিয়েটিভে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেওয়া ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ, অথবা ভারতের তামিলনাড়ুতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য গত সপ্তাহে ইউ. এস. ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইনান্স কর্পোরেশনের দেওয়া ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের কথা বিবেচনা করুন।

ফ্যাক্টরিটি তৈরি করছে মার্কিন কোম্পানি ফার্স্ট সোলার, যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৩.৩ গিগাওয়াট। দুই মিলিয়ন বাড়ির জন্য এই বিদ্যুৎ-ই যথেষ্ট। বাড়ি ও এই ব্যবস্থার অপারেটিংয়ের কাজছ ভারতে হাজার হাজার কর্মসংস্থান হবে, বেশিরভাগ মহিলা, এবং আমেরিকাতেও শয়ে শয়ে চাকরি হবে। এবং এটি মাত্র একটি উপায়, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ৫০০ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যপূরণে আমেরিকা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং বিনিময়ে, আবহাওয়াজনিত বিপর্যয় এড়াতে গোটা দুনিয়াকে তা সাহায্য করবে।

এখন আমরা স্বীকার করি যে, এমনকি যদি সবুজ অর্থনীতি বিপুল সংখ্যক চাকরির সংস্থান করে পরিবর্তন আনে, আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী যে, এটা হবেই, কিন্তু এই পরিবর্তনকালে পুরনো শিল্পে ও পুরনো সেক্টরগুলিতে যাঁরা কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে চাকরি দেওয়া যাবে না। তাই আমাদের একটা দায়বদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে, যার প্রতি আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

পঞ্চম ও শেষটি হল, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তাকে জোরদার করবো। বিপদ তৈরি হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিকে তার মেলাতে হবে। উগ্রপন্থা থেকে অবৈধ মৎস্য শিকার, মানুষ পাচার, সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আমাদের একটি কৌশল ঠিক করতে হবে, যা জাতীয় শক্তির হাতিয়ারগুলিকে ― কূটনৈতিক, মিলিটারি ও গোয়েন্দা ― আমাদের সহযোগী ও অংশীদারদের একসূত্রে বাঁধবে। আমাদের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন একে “ইন্টিগ্রেটেড ডিটারেন্স” আখ্যা দিয়েছেন।

এবং এটি হল আমাদের শক্তিকে সংহত করা, যাতে আমরা শান্তি রক্ষা করতে পারি, যা আমরা এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে করে আসছি। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিকে সংঘাত চাই না। সে কারণে ডিপিআরকে-র সঙ্গে আমরা গুরুতর ও সচল কূটনৈতিক বোঝাপড়া চাইছি, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল, কোরীয় প্রণালীকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা। ডিপিআরকে-র পরমাণু হুমকি ও মিসাইল কর্মসূচি নিয়ে ধারাবাহিক, বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা সহযোগী ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবো, সেইসঙ্গে প্রতিরোধ শক্তিকে মজবুত করবো।

এবং সেই কারণে গত মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রেসিডেন্ট শি-কে বলেছেন, আমাদের এটা দায়িত্ব রয়েছে যে, আমাদের দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা যেন সংঘাতের চেহারা না নেয়। আমরা এই দায়িত্বকে অত্যন্ত দিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করছি, কারণ, তা করতে ব্যর্থ হলে, আমাদের সবার জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬২ সালে আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ. কেনেডি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন। তিনি আমাদের দেশের মানুষের সহনশীলতার লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন, যা আজকে এখানে হাজির ছাত্রছাত্রীদের মতোই আমাদের তরুণদের হাতে তুলে দিতে বলেছিলেন। তিনি কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, যা তাঁর ভাই, তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি পৃথিবীর জন্য আমাদের ভিশনের কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডি বলেছিলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য একই: একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব, একটি মুক্ত কমিউনিটি ও স্বাধীন রাষ্ট্র, যা মুক্তভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ ও সিস্টেম বেছে নিতে পারে, যা অন্যের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক নয়।”

প্রেসিডেন্ট কেনেডির এই শব্দগুচ্ছ বলার পর প্রায় ৭০ বছরে যা বদল হয়েছে, তা হল, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যা শেয়ার করি, অন্যের ভাবনার সঙ্গে তা কতটা খাপ খাচ্ছে। এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকা অনেক ছাত্রছাত্রী ও প্রাক্তনী তরুণ নেতাদের সামনে এই সম্পর্কে বলতে পারার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, কারণ, আপনারা আজ এখানে রয়েছেন, তারাই এই ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনারা জানেন যে, আমেরিকা সহ ইন্দো-প্যাসিফিকে আপনারা ছড়িয়ে রয়েছেন, যাঁদের আশা-আকাঙ্খা ও ভাগ্য আপনাদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, এবং যাঁরা ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ার জন্য আপনাদের অবিচল সঙ্গী হিসেবে থাকবেন, এই অঞ্চল, যা আমরা শেয়ার করি, আরও মুক্ত এবং আরও অবাধে।

বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। (হাততালি)

সোর্স ফাইলের লিঙ্ক: https://www.state.gov/a-free-and-open-indo-pacific/

ডিসক্লেইমার: এই অনুবাদটি সৌজন্য সহ দেওয়া হয়েছে এবং শুধুমাত্র মূল ইংরেজি উৎসকেই বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।