মে ১৩, ২০২৩
ঢাকা, বাংলাদেশ
প্রস্তুতকৃত বক্তব্য
সবাইকে শুভ সন্ধ্যা। আজ আপনাদের সবার সাথে কথা বলতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। ।
আমি ডেপুটি সেক্রেটারি শেরম্যানের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে ষষ্ঠ ভারত মহাসাগর সম্মেলনে আপনাদের সাথে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতিবছর এই সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করার জন্য (ভারতের) মন্ত্রী জয়শঙ্কর, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে তাদের অংশীদারিত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মালাক্কা প্রণালী থেকে আরব সাগর পর্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল সম্ভাবনা ও সুযোগে পরিপূর্ণ।
আমি আমার বক্তব্যে কয়েকটি মূল কৌশলের উপর আলোকপাত করব, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে ক্রমাগত ভাবে সমৃদ্ধি, শান্তি ও সহনশীলতা গড়ে তুলছে।
আমি (আমার বক্তব্য) জলবায়ু পরিবর্তন দিয়ে শুরু করব, (এবং) আমি জানি এই অঞ্চলের অনেক দেশের কাছে — বিশেষ করে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে এর গুরুত্ব সর্বাধিক।
আমরা জানি যে এই অঞ্চলে জলবায়ু সঙ্কটের বিষয়টি তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রার উষ্ণায়ন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে উপকূলের ক্ষয়, বন্যা এবং আবহাওয়া চরম হয়ে উঠার মতো ঘটনা ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যা মোকাবেলায় দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য বিনিয়োগ এবং সম্পদ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ডেপুটি সেক্রেটারি শেরম্যান যেমন উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভবিষ্যতের ক্লিন এনার্জি (পরিবেশবান্ধব জ্বালানি)-তে স্থানান্তরসহ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো ও এর প্রশমনের জন্য ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে কর্মসূচি পরিচালনা করতে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,৭৩২ কোটি টাকা) প্রদানের লক্ষ্যে কংগ্রেসের সাথে কাজ করছে।
আমরা ইতোমধ্যে ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তর (কার্যক্রমকে) সহায়তা করতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে কাজ করছি। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ফার্স্ট সোলারে ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫,২৫০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে। এই প্রচেষ্টা ভারতে ৫০০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার মাধ্যমে (ভারতের) প্রধান শহরগুলোতে দূষণ কমিয়ে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।
আমাদের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন কমপ্যাক্টের মাধ্যমে আমরা নেপালে জলবিদ্যুৎ লাইন এবং রাস্তা নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন (প্রায় ৫,২৫০ কোটি টাকা) ডলার অনুদান দিয়েছি।
এখানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র ১৭ মিলিয়ন (প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা) ডলারের একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে; যা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যের ক্লিন এনার্জিতে বাংলাদেশের প্রবেশ প্রসারিত করবে ও বাংলাদেশে ক্লিন এনার্জি অর্থনীতিতে উদ্ভাবনকে সহায়তা করবে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র প্লাস্টিক দূষণের প্রবাহ বন্ধ করতে, জলবায়ু (পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে) স্মার্ট কৃষির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে অংশীদারদের সাথে কাজ করছে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্কটে সাড়া দিয়ে ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সহিষ্ণুতা/অভিঘাত-সহনশীলতা তৈরি এবং সমৃদ্ধিকে সহায়তা করছে।
এই অঞ্চলের অভিঘাত-সহনশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল কোভিড মহামারি মোকাবেলা ও পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং কোভ্যাক্স-এর সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৭০ কোটি নিরাপদ ও কার্যকর কোভিড-১৯ টিকা ডোজ অনুদান দিয়েছে, যার মধ্যে ২৬ কোটি ৫০ লাখের বেশি টিকা ডোজ অনুদান দিয়েছিল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোতে; যার মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই ১৬১ মিলিয়ন বা ১৬ কোটি ১০ লাখ টিকা ডোজ অনুদান দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও আমরা অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং জাপানের সাথে কোয়াড ভ্যাকসিন পার্টনারশিপের মাধ্যমে এই অঞ্চলে আরো টিকা ডোজ উৎপাদনে সহায়তা করেছি। এই অঞ্চলের সাথে আমাদের দৃঢ় অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে কারণ আমরা বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার মোকাবেলসহনশীলতা বাড়াতে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করব।
উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সঙ্কটে দ্রুত সাড়া দিচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করছে এবং এই অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে কাজ করছে।
উদাহরণস্বরূপ, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা ও অর্থায়ন হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রদান করেছে। যার মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে সারে ৪৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) শ্রীলঙ্কার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে নারীদের মালিকানাধীন ব্যবসার সম্প্রসারণে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বিনিয়োগ করেছে। যার মধ্যে ডিএফসি শ্রীলঙ্কার একটি পলিয়েস্টার সুতা উৎপাদনকারী কোম্পানি বিপিপিএল হোল্ডিংস পিএলসি-কে ১৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা তাদের উৎপাদন বাড়ানো ও অবশ্যই জীবন ও জীবিকাতে ভূমিকা পালনের পাশাপাশি প্লাস্টিকের বর্জ্য কমাতে ভূমিকা রাখবে।
এগুলো (এই ধরনের পদক্ষেপগুলো) গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলেরসহনশীলতা ও সমৃদ্ধিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে বহুমাত্রিক সহায়তা করার কয়েকটি উদাহরণমাত্র।
এখানে (উপস্থিত) সকলেই জানেন যে, এই অঞ্চলে সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ — সেটা জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা কিংবা কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি গড়ে তোলা যেটাই হোক না কেন।
এই সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য হলো সম্মিলিত পদক্ষেপকে বাড়িয়ে তুলতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করা। যেহেতু আজকের এই সম্মেলনে সার্ক এবং বিমসটেকের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন তাই আমি আমার একটি পর্যবেক্ষণ ও একটি আবেদন জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করতে চাই।
দক্ষিণ এশিয়া এখনো বিশ্বের নিম্ন পর্যায়ের সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে রয়ে গেছে; বিশেষ করে বাণিজ্য এবং জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগের ক্ষেত্রে। যা এই অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের ব্যয়ের কারণ ঘটাচ্ছে।
আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সম্ভাব্য বাণিজ্যের এক-পঞ্চমাংশে রয়েছে যার আনুমানিক বার্ষিক ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের গণনামতে মতে, (আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়লে) বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত এবং নেপালের বিদ্যুতের বাজার আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার মূলধন খরচ সাশ্রয় করবে। এবং পরিবহন ও লজিস্টিক্সের উন্নতি ঘটলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-ভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কনটেইনার শিপমেন্টের খরচ ৫০ শতাংশ কমতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলবে।
আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল আমাদের এই বিশ্বাসকে সুস্পষ্ট করেছে যে, আমাদের যৌথ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করা ছাড়া এই অঞ্চলের জন্য আমাদের যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এই প্রচেষ্টার জন্য আঞ্চলিক কাঠামো নির্মাণ ও সুবিধা প্রদান করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
বিমসটেক এবং সার্কের মতো সংগঠনগুলো দক্ষিণ এশিয়ার ভারত মহাসাগরীয় অর্থনীতির জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার খুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ)-এর কৌশলগত সংলাপে অংশ নেবে — যেখানে আইওআরএ সদস্য রাষ্ট্র এবং ডায়লগ পার্টনার (সংলাপ অংশীদার)-গণ ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হবে৷ আইওআরএ-এর ডায়লগ পার্টনার হিসেবে সম্মিলিতভাবে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা করা আমাদের জন্য একটি প্রধান অগ্রাধিকার হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সমৃদ্ধির অগ্রগতিতে সহায়তা করছে। আমরা এই আঞ্চলিক কাঠামোর বৃদ্ধি এবং শক্তিশালীকরণ দেখতে চাই, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি এই অঞ্চলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক।
আমি আপনাদের পর্যালোচনাগুলো নিয়ে ওয়াশিংটনে ফিরে যাব। আপনাদের বক্তব্য/চিন্তাভাবনা একটি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও মুক্ত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে।
আপনাদেরকে ধন্যবাদ!