মুক্ত গণমাধ্যম: গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান

১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মে মাসের ৩ তারিখকে “ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে” বা ”বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই দিনে মুক্ত গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা উদযাপনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে জীবন  উৎসর্গকারী  সাংবাদিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।

মুক্ত এবং স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এর মাধ্যমে নাগরিকরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানার পাশাপাশি তাদের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকারের বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দলিলের পাশাপাশি বাংলাদেশ সহ অনেক দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বকেস্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।ঘোষণাপত্রের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ”প্রত্যেকেরই মতামত পোষণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে; কোন ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া অবাধে মতামত পোষণ করা এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যে কোন মাধ্যমের মারফতে তথ্য ও ধারণাগুলো জানা/অনুসন্ধান, গ্রহণ ও বিতরণ করা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।”

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষার মূল্যবোধকে সম্মিলিতভাবে সমুন্নত রাখি। সাংবাদিকদের অবশ্যই হয়রানি, ভীতি বা সহিংসতার ভয় ছাড়াই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে করতে হবে । এটি সুশাসনকে সহায়তা করা ও জনসাধারণ কে কোন একটি বিষয় সম্পর্কেপুরোপুরিভাবে অবহিত করা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকতে হবে এবং তথ্যের সূত্রগুলোর সুরক্ষা দিতে পারতে হবে।

মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন সমমনাদেশগুলো নিয়ে গঠিত,  যারা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার পক্ষে কাজ করে ও পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশস্থ মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের ডিপ্লোম্যাটিক নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ (কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক উদ্যোগ)-এর নিম্নস্বাক্ষরকারীদেশগুলো আজ অত্যন্ত আনন্দের সাথে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩০ তম বার্ষিকী উদযাপন করছে।

মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্য হিসেবে আমরা মুক্ত গণমাধ্যমের তাৎপর্য অনুধাবন করা ও একে রক্ষা করার উপর গুরুত্বারোপ করে থাকি। এর সাথে সরকার, গণমাধ্যমের সংস্থাগুলোর স্বত্বাধিকারী, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জড়িত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করার মাধ্যমে একটি সমাজ আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে।গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি এমন দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বেশি। এর সহজ কারণটি হলো: মুক্ত গণমাধ্যম স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; যা দুর্নীতি কমায় ও উদ্ভাবনীশক্তিকে ত্বরান্বিত করে, যা ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের জন্য সহায়ক।

এছাড়াও মুক্ত গণমাধ্যম মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্যও অত্যাবশ্যক। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশ ও জবাবদিহিতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এটি মুক্ত গণমাধ্যম আছে এমন সব  দেশের জন্য প্রযোজ্য । এছাড়াও সাংবাদিকরা নারীদের বক্তব্য ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টিও তুলে ধরেন ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে উম্মুক্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নের শক্তিশালী ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন একটা ধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা কাজ করছে বাংলাদেশস্থ মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের সদস্যরা তাদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।

স্বাক্ষরিত,

দূতাবাস/হাইকমিশন

অস্ট্রেলিয়া
কানাডা
ডেনমার্ক
ফ্রান্স
জার্মানি
ইটালি
জাপান
নেদারল্যান্ড
নরওয়ে
স্পেইন
সুইডেন
সুইজারল্যান্ড
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্র