বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২২ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত হাসের বক্তব্য

বিতরণের জন্য প্রস্তুত

মে ২৪, ২০২২

এখানে সমবেত সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দের প্রতি আমার একটি সাদামাটা বার্তা রয়েছে: ধন্যবাদ।

আপনাদের পেশা মহান।

এবং এটি বিশ্বজুড়ে, ক্রমেই কঠিন ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

মাত্র কয়েক মিনিট আগে, আমরা পশ্চিম তীরে মর্মান্তিকভাবে নিহত ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলার সম্মানে এক মুহূর্ত নীরবতা পালন করেছি।

ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী যে মর্মান্তিক ও নৃশংস যুদ্ধ চালাচ্ছে সে সম্পর্কে সত্য বলার সাহস দেখালে, রাশিয়ায় সাংবাদিকেরা গুরুতর বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন।

আর এখানে বাংলাদেশে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও কক্সবাজারে আলাদা হামলায় একাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।

সংক্ষেপে বললে, সাংবাদিক হতে সাহস লাগে।

আজ, এখানে সমবেত পেশাদার সংবাদকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন মতিউর রহমান এবং মতিউর রহমান চৌধুরী।

সত্যকে দমিয়ে রাখার জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, এই সম্পাদকদের প্রত্যেকেই তাদের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে অসাধারণ সাহস দেখিয়েছেন।

এবং আমি জানি আরও অনেক সাহসী সাংবাদিক আছেন, যাঁদের কেউ এখানে এই ঘরে, এবং আরও অনেকে আমার সঙ্গে তাদের গল্প শেয়ার করেছেন।

এই সাহসী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একবার করতালি দেওয়ার জন্য দয়া করে আমার সঙ্গে যোগ দিন। [করতালি]

সাংবাদিকেরা প্রতিদিন যে সাহস প্রদর্শন করেন তার জন্য আমাদের সবার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, কারণ মুক্ত সমাজে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

তারা সত্যের সেই রক্ষক, যাঁরা জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলেন এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জবাবদিহি করেন।

এটিই সাংবাদিকদের যেকোনো প্রাণবন্ত মুক্ত সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

আর তাদের অবাধে কাজ করার এবং সত্যকে আলোতে আনার সক্ষমতাকে অবশ্যই লালন ও সুরক্ষিত করতে হবে।

(সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারণাটিকে এত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন যে এটি আমাদের বিল অফ রাইটসে (অধিকার আইন) একেবারে প্রথম সংশোধনী (ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট) হিসেবে এসেছে।

অবশ্যই, তার অর্থ এই নয় যে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম থাকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি নিখুঁত।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সাম্প্রতিকতম ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ৪২-এ। হ্যাঁ, সেটি সেরা ২৫% এর মধ্যে, তবে শীর্ষ অবস্থান থেকে অনেক দূরে। সত্যি বলতে, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ভালো করতে হবে।

একই ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২-তে, যা কিনা আগের বছরের তুলনায় দশ ধাপ নিচে।

বাংলাদেশের এত কম স্কোর করার একটি কারণ হল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলোর একটি।”

যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক – উভয় ক্ষেত্রেই ডিএসএ সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগগুলোকে পরিষ্কার করেছে। আপনারা সবাই জানেন, এই আইন সাংবাদিকদেরকে ফৌজদারি বিচারের হুমকির মুখে ঠেলে দেয়, যদি তারা এমন কিছু প্রকাশ করেন যা সরকারের কাছে “মিথ্যা, আপত্তিকর, অবমাননাকর” বা “মানহানিকর” বলে মনে হয়।

আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের খসড়া “ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওভার-দ্য-টপ প্লাটফর্মের জন্য নীতিমালা” এবং খসড়া ”উপাত্ত সুরক্ষা আইন” নিয়েও উদ্বিগ্ন।

কোনও খসড়া এখনো চূড়ান্ত না করা হলেও, আমরা আশঙ্কা করি যে এতে এমন বিধান রয়েছে যা স্বীয় মতপ্রকাশে আগ্রহী সাংবাদিক এবং অন্যদের ভয় দেখাতে ব্যবহার করা হতে পারে।

(নির্বাচন)

সাংবাদিকেরা প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তবে নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

এবং বাংলাদেশে, আমরা সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কিত সংবাদ প্রতিবেদনের সংখ্যা বাড়তে দেখছি।

বাংলাদেশ সহ যে কোনো জায়গায় নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে, জনগণের সেই ক্ষমতা থাকতে হবে যেন তারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নিজস্ব সরকার বেছে নিতে পারে।

কিন্তু সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নির্বাচনী মানদণ্ড আসলে কী?

নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে সুপরিচিত ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান জর্জিয়ার আটলান্টাভিত্তিক কার্টার সেন্টার যে নির্বাচনী মানদণ্ড প্রকাশ করে, তা বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়।

তাদের সংবাদমাধ্যম সংশ্লিষ্ট মানদণ্ডগুলো হলো:

১. সম্পাদকীয় স্বাধীনতা সুরক্ষিত এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত।

২. গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করতে পারে।

৩. অন্যদের অসত্য বিবৃতি পুনরুৎপাদনের জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করা হয় না।

৪. মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করতে, জনসাধারণের মধ্যে বিতর্ককে দমিয়ে রাখতে বা সরকারের সমালোচনার কণ্ঠরোধে মানহানির দাবি ব্যবহার করা হয় না।

৫. সাংবাদিকেরা হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত।

আমি খুব আশা করি যে নির্বাচনের মৌসুম এবং তারপরেও এই পাঁচটি মূলনীতি সমুন্নত রাখা হবে।

আমি দুটি শেষ কথা দিয়ে ইতি টানতে চাই:

প্রথমত, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে রক্ষা করা এবং ভয়, হয়রানি বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সাংবাদিকদের সত্য অনুসন্ধান ও সেটি রিপোর্ট করার সুযোগ করে দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য।

দ্বিতীয়ত, ন্যায়ভিত্তিক ও অবাধ গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান স্বাধীন গণমাধ্যম।

ধন্যবাদ।